রূপসী নগরীর বিবর্ণতা
ইবনে নূরুল হুদা
রাজধানী হিসেবে ঢাকা নগরী ৪শ বছর পুরনো হলেও তিলোত্তমা খ্যাত এই নগরীকে সর্বাধুনিক নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন নগরীতে পরিণত করা হয় নি বরং ঢাকা এখন বিশে^র অন্যতম বসবাস অযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, ত্রুটিপূর্ণ নগর ব্যবস্থাপনা, অনুন্নত নাগরিক সেবা, মানহীন রাস্তাঘাট, অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা, অসহনীয় যানজট, সীমাহীন জলাবদ্ধতা, সেকেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ফিটনেস বিহীন যানবাহন এবং অতিমাত্রায় দূষণ পুরো নগরজীবনকেই দুর্বিষহ করে তুলেছে। একই সাথে অপরিকল্পিত নগরায়ন সার্বিক পরিস্থিতিকে জটিল হতে জটিলতর করে তুলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে শব্দদূষণ নগর জীবনকে একেবারে অস্থির করে তুলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানীতে স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে প্রায় দুই গুণ বেশি মাত্রায় শব্দদূষণ হচ্ছে। ঢাকা নগরীর প্রায় শতভাগ অধিবাসীই শব্দদূষণের শিকার হচ্ছেন! আইনের যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় এ শব্দদূষণের মাত্রা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার’ (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রা অনুযায়ী, সাধারণভাবে ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ ভালো শুনতে পারে মানুষ। এর চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাসসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। ঢাকায় অতিমাত্রায় শব্দদূষণের জন্য প্রধানত হাইড্রোলিক হর্নকে দায়ী করা হয়। উচ্চ আদালত এক আদেশে ঢাকা মহানগরে সব ধরনের যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ থাকলেও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি।
হর্ন রাস্তায় পাশে থাকা হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুরুতর শব্দদূষণ ঘটাচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের এক জরিপে উঠে এসেছে রাজধানীতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি মাত্রার শব্দদূষণের কথা। শব্দদূষণের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি ব্যাপক বলে মনে করেন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা। তারা জানাচ্ছেন, আকস্মিক শব্দে মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশি সংকোচিত করে পরিপাকতন্ত্রে বিঘœ ঘটায়। দীর্ঘদিন উচ্চশব্দের মধ্যে থাকলে বধির হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ মানুষের মাথাধরা, পেপটিক আলসারের মতো রোগসহ শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে। শব্দদূষণ রোধে ‘মোটরযান অধ্যাদেশ আইন’, ‘পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইন’ ও ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ-১৯৭৬’-এ কারাদ- ও অর্থদ-র বিধান থাকলেও এসব আইনের উল্লেখযোগ্য কোন প্রয়োগ নেই। ফলে শব্দ দূষণ হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য।
রাজধানীতে সুপেয় পানির অভাব এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, নগরীতে বসবাসরত প্রায় ৫০ লাখ বস্তিবাসী মারাত্মক পানি সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। গরমের সময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয় তীব্রভাবে। প্রয়োজনীয় পানির শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ আসে ভূগর্ভস্থ পানি থেকে, বাকি ২০ আসে ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে। ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে পানির স্তর দিন দিন নিচে চলে যাচ্ছে। আগামী ১০ বছর পর ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা যাবে কী না তা নিয়ে রীতিমত সন্দেহ দেখা দিয়েছে!
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সম্প্রতি এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, ঢাকা শহরে সরবরাহকৃত জার ও বোতলের ৯৭ শতাংশ পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মলের জীবাণু পাওয়া গেছে। আবার অনেক সময় বাসাবাড়িতে সরবরাহকৃত অনেক পুরোনো পানির পাইপের লাইন ছিদ্র হয়ে দূষিত পানি বিশুদ্ধ পানির লাইনের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়। বিশেষ করে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সময় বিশুদ্ধ পানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করে। ঢাকা শহরের চারপাশের নদনদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে।
যেকোনো শহরের ন্যূনতম জীবন ধারণের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত পরিবেশগত বিষয়গুলোর দিকে। বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে রাজধানী ঢাকার পরিবেশ দূষণ রোধে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আবশ্যকতা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এমতাবস্থায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনায় ‘পরিবেশগত সমীক্ষা নিরুণের’ (ইপিএ) বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। সর্বোপরি পরিবেশ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগের পরামর্শ এসেছে বিভিন্ন মহল থেকেই। মূলত, প্রায় দুই কোটি মানুষের এই নগরীকে দূষণমুক্ত রাখা গেলে তার অর্থনৈতিক সুফল পাওয়ার পাশাপাশি দূষণমুক্ত রাজধানীর স্বপ্নও সত্যি হবে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
মূলত, নানাবিধ কারণেই ঢাকা নগরী জনভোগান্তির নগরীতে পরিণত হয়েছে। যানজট, জলাবদ্ধতা, মশা, ঘনবসতি, যান্ত্রিকতা এবং অপরিচ্ছন্নতাসহ অনেক কিছুই জড়িত রয়েছে এর সাথে। কিন্তু সরকার, রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনগুলোর পক্ষ থেকে পরিস্থিতি উন্নয়নে অনেক চটকদার কথা শোনা গেলে তা রীতিমত কথামালার ফুলঝুড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। মূলত, যতই দিন যাচ্ছে সার্বিক পরিস্থিতির ততই অবনতি হচ্ছে। ফলে নগরীর আবাসিক হিসেবে গড়ে উঠা এক সময়ের বড় এলাকাগুলো ক্রমেই সৌন্দর্য ও বসবাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে। বাণিজ্যিক আগ্রাসনে বদলে গেছে পুরো ঢাকার চেহারা। যা নগর জীবনে নতুন জটিলতার সৃষ্টি করেছে।
মূলত, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে বিশেষত্ব হারিয়েছে ঢাকার অভিজাত ও আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত ধানম-ি, গুলশান ও বনানী। ধানম-ি ও মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকা এখন হয়ে গেছে স্কুলপাড়া আর হাসপাতালপাড়া। এছাড়া চায়নিজ ও ফাস্টফুডের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের শো-রুম ও অন্যান্য দোকানের কোনো হিসাব কারও কাছে নেই।
আবাসিক এলাকা বলে পরিচিত ধানম-ির ৪৮ শতাংশ ভবনেই রয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। পুরোপুরি আবাসিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ৫২ শতাংশ ভবন। ২০১৬ সালের মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইংরেজি সাপ্তাহিক প্রোব নিউজ ম্যাগাজিন পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। পরে ছয় বছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে জানা গেছে। জরিপে বলা হয়, ১৯৫২ সালে আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে ধানম-ি। এ এলাকার ১ নম্বর সড়ক থেকে ২৭ নম্বর পর্যন্ত রয়েছে মোট ৩১টি সড়ক। এ ৩১টি সড়কে মোট ১ হাজার ৫৯২টি ভবন রয়েছে; এর মধ্যে ১২০টি নির্মাণাধীন। এক হাজার ৫৯২টি ভবনের মধ্যে আবাসিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ৮২৩টি ভবন। আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ৫৩২টি এবং শুধু বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ২৩৭টি ভবন।
এক সময় কূটনৈতিকপাড়া হিসেবে পরিচিত ছিল গুলশান। বেসরকারি কর্পোরেট অফিসগুলোর পদচারণায় গুলশান হয়ে গেছে অফিসপাড়া। আর বনানী হয়ে গেছে রেস্টুরেন্ট পাড়া। পাশাপাশি হারিয়েছে অভিজাত আবাসিক এলাকার জৌলুসও। সারি সারি সুউচ্চ ভবনে শপিং মল, কারখানা, রেস্টুরেন্ট-সব মিলিয়ে একসময়ের শান্ত-স্নিগ্ধ সবুজ অভিজাত আবাসিক এলাকা হারিয়েছে তার স্বকীয়তা।
নতুন আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠা রামপুরা-বনশ্রীর বুকেও দাগ পড়তে সময় লাগেনি। ওই এলাকার রাস্তার দুই পাশে শত শত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক ভাড়া বেশি; তাই অলিগলি ও বাসাবাড়ির বেশিরভাগ ফ্ল্যাটই এখন ছোটখাটো কোন না কোন কোম্পানির অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি অলিগলিতে রেস্টুরেন্ট তো আছেই।
মিরপুরের অবস্থা আরও ভয়াবহ। আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাটগুলোতে চলছে কারখানাও। এমনিতেই ওই এলাকায় কিছু বড় পোশাক কারখানা আছে, এর মধ্যে ছোট কারখানাগুলো গড়ে উঠছে আবাসিক ভবনে।
ঢাকার আবাসিক এলাকার ছোট গলি থেকে শুরু করে বড় সড়ক- খুব কম ভবনই আছে যেটি শুধু আবাসিক। অধিকাংশ আবাসিক কাম বাণিজ্যিক। অর্থাৎ, নিচ তলা থেকে তিন বা চার তলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক স্পেস রেখে এর পরই ওপরের দিকে আবাসিক ফ্ল্যাটগুলো তৈরি করা হয়েছে। এমনকি আবাসিক হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গড়ে উঠা এলাকাগুলোতেও এর ব্যতিক্রম চোখে পড়েনি।
মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি, কাদেরাবাদ হাউজিং, চান মিয়া হাউজিং- এগুলোর সবার চেহারা একই। শুধু নামের পার্থক্য। এ অঞ্চলটিতে বাণিজ্যিক স্থাপনা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সহজলভ্য, ধানমন্ডির সান্নিধ্য, বাকি শহরের সাথে চমৎকার যোগাযোগে ব্যবস্থা এবং তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী-এ জন্য মোহাম্মদপুর স্টার্টআপ ব্যবসা শুরু করেছেন এমন উদ্যোক্তারা জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন।
মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে গড়ে উঠা আবাসিক এলাকা জাপান গার্ডেন সিটি কম বেশি সবার কাছেই পরিচিত। এ আবাসিক এলাকার মধ্যেই তারা তৈরি করেছে ‘টোকিও স্কয়ার মার্কেট’। এর চারপাশে অলিগলিতে আছে হোটেল, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, সুপার শপ, শো-রুম বাস স্ট্যান্ড, টেম্পু স্ট্যান্ড, রিকশা স্ট্যান্ড, স্কুল, কোচিং সেন্টার ইত্যাদি।
মোহাম্মদপুরের মতো বাণিজ্যিক ছোঁয়া লেগেছে এ এলাকার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা আদাবর ও শ্যামলীর মতো আবাসিক এলাকাগুলোতে। আদাবরের প্রবাল হাউজিং বা শেখেরটেক ঘুরে এমন চিত্রই দেখা মেলে। শেখেরটেক-১২ নম্বর রোডের মূল সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনগুলো বছর পাঁচেক আগেও আবাসিক চেহারাতেই ছিল। শুধু যে রেস্টুরেন্ট তা নয়, ওই এলাকার আবাসিক ভবনগুলোর বেশ কয়েকটিতে স্কুল ও ছোট ছোট অফিসও চোখে পড়েছে। যদিও প্রতিটি সোসাইটির একটি করে কল্যাণ সমিতি থাকলেও তারা কোনো ভূমিকাই রাখতে পারে না।
পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা রাজউক, তাদের নাকের ডগায় অবাঞ্ছিত এ রূপান্তর ঘটছে জোরেশোরে। তবুও তারা চোখ খুলে কিছু দেখছে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে রাজউক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজউক এরিয়ায় অবস্থিত আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তরের সুযোগ রয়েছে। তবে চাইলেই বাণিজ্যিক প্লবে রূপান্তরের সুযোগ নেই, এজন্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে তবেই বাণিজ্যিক প্লটের বৈধতা দেয়।
যদিও ওই কথায় পুরোপুরি একমত নন নগরবিদরা। তাদের মতে, অভিজাত এলাকাগুলোতে অর্থের বিনিময়ে বা বিভিন্ন রাজনৈতিক চাপে অনকে সময় বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন দেয়া হয়। রাজউক থেকেই সেই অনুমোদনগুলো দেয়া হয়। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে একটি শহরের পরিকল্পনা করা হয়। আবাসিক প্লট গড়ে তোলার সময় সেখানে যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়েছিল, সেই একই জায়গায় বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে উঠলে সেখানের বিবেচ্য বিষয়গুলো আলাদা হয়। বাণিজ্যিক স্থাপনায় মানুষজনের চলাচল বেড়ে যায়, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও সীমিত হয়ে পড়ে। ফলে একটি অঞ্চল তার বাসযোগ্যতা হারায়। তারা মনে করেন, কখনো কখনো অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন চাপে নত হয় বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন দেয় নীতিনির্ধারকরা। যেখানে নগরবিদদের কোন মতামত নেয়া হয় না বা মতামত নিলেও তা বাস্তবায়নও হয় না।
মূলত, রাজধানীর আবাসিক এলাকাকে বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত করার এ প্রবণতা দুই দশক আগে থেকে বড় আকারে শুরু হয়েছে। ৯০-এর দশকেও ঢাকার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ধানমণ্ডি, গুলশান, বনানীতে চার থেকে ছয় তলার ওপরে খুব কম বাড়িই ছিল। এখন ইচ্ছামতো উচ্চতায় দালানকোঠা তৈরি হচ্ছে। ভাড়া দেয়া হচ্ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে। আর এসব ইমারত নির্মাণে কোনভাবেই ইমারত বিধি মানা হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপন এবং নিরাপদ বহির্গমন ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে না। ফলে রূপসী নগরীতে দুর্ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ঢাকার বসবাসযোগ্যতা একবারে তলানীতে এসে ঠেকেছে।
এমতাবস্থায় ঢাকা নগরীর জীবনযাত্রায় ছন্দ ফিরিয়ে আনতে হলে অপরিকল্পিত নগরায়নের অশুভ বৃত্ত থেকে আমাদেরকে বেড়িয়ে আসতে হবে। একই সাথে উন্নত বিশে^র নগর ব্যবস্থাপনার সাথে সঙ্গতি রেখে সর্বাধুনিক নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে স্বপ্ন মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সবার আগে কাজ করতে হবে জলাবদ্ধতা, বায়ুদূষণ, পরিচ্ছন্নতা ও যানজট নিয়ে। গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পিত ও আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনা। অন্যথায় আগামী দিনে ঢাকা নগরীর সার্বিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।