শনিবার ০২ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

তিমি-রাঘবদের ধরুন

ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলায় এক কর্মকর্তার জামিন আবেদন শুনানিকালে বিজ্ঞ আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে যা বলেছে তা কেবল কথার কথা নয়। বিজ্ঞ আদালত বলেছে, ‘ঋণখেলাপিরা আইনের চেয়ে শক্তিশালী নয়। তাহলে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? যারা অর্থশালী তারা কি ধারাছোঁয়ার বাইরে থাকবে? দুদক রাঘববোয়ালদের নয়, চুনোপুঁটিদের ধরতে ব্যস্ত।’ বিজ্ঞ আদালতের এমন বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। উচ্চ আদালতের বেঞ্চের বিচারপতিদ্বয় গভীর বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন এবং তাদের অবজারভেশনের ওপর দেশবাসীর আস্থা রয়েছে। 

এ দেশে একসময় খাল-বিল, ডোবায় সর্বত্র দেশীয় ছোট-বড় মাছের প্রাচুর্য ছিল। তার মধ্যে সর্বাধিক পাওয়া যেতো যে মাছটি তা চুনোপুঁটি। অর্থাৎ আকারে ছোট পুঁটি মাছ। নানাবিধ কারণে সেটা এখন প্রায় বিলুপ্ত। এমনকি ইন্টারনেটে চুনোপুঁটি লেখে সার্চ দিলেও মাছের ছবি দুই-একটি আসে বটে; কিন্তু তার ১০ গুণ আসে ঋণগ্রহীতা, রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান-সংবলিত ছবি। অর্থাৎ বর্তমান প্রযুক্তি যারা ব্যবহার করেন, তাদেরও একটি বড় অংশ চুনোপুঁটি দেখেননি অথবা ভুলে গেছেন। কিন্তু চুনোপুঁটি শব্দটি যে অর্থে ব্যবহার করা হয়, সে চুনোপুঁটি কি আর আছে? সম্ভবত নানা ধরনের ফিডিং খেয়ে ক্ষুদ্র চুনোপুঁটিও এখন বড় হয়ে গেছে। আর রাঘববোয়ালও এখন আর বোয়াল নেই। বোয়াল হয়েছে তিমি আকারের। সাধারণত বোয়াল মাছের মধ্যে যেটি আকারে বড় হয় তাকে বলা হতো রাঘববোয়াল, যেমন ছাগলের মধ্যে বড় জাতের ছাগলকে বলা হয় রামছাগল। রঘু বংশের রাজা যেহেতু বড় মানুষ, তাই তাকে কেন্দ্র করে রাঘববোয়াল শব্দের উৎপত্তি। যারা দেশে অপেক্ষাকৃত অধিক অর্থ ও ক্ষমতার অধিকারী হন, তাদেরকেই রাঘববোয়াল বলবার রেওয়াজ আছে। কিন্তু গোড়া তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, তারা শুধু অপেক্ষাকৃত বড় নয়, আকারে এত বড় হয়েছেন যে, তিমিতে পরিণত হয়েছেন। 

এখন তিমি শিকারের উপায় কী? নিউইয়র্ক শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় নাকি এত বড় বড় ইঁদুর আছে, যে-ইঁদুর বেড়ালকে দৌড়ানি দেয়। নিউইয়র্কে যে-ইঁদুর বেড়ালকে তাড়া করতে পারে, তাকে বেড়াল দিয়ে কি শিকার করা সম্ভব? ওই ইঁদুর শিকার করতে কমপক্ষে সারমেয় সাইজের কোনও প্রাণীর দরকার অবশ্যই। সুতরাং আজ যাদের চুনোপুঁটি বলা হচ্ছে, সমাজ যাদের চুনোপুঁটি মনে করতো, তারা এখন চুনোপুঁটি নয়। কোনও কিছু সাইজে যখন বড় হয়ে যায়, তা সে অনুপাতে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তখন তা শিকার করতে আরও শক্তিশালী হাতিয়ার দরকার পড়ে। 

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কয়েক দশক আগের চেয়ে নিঃসন্দেহে ভালো হয়েছে। করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিকালীন সংকটের কথা বাদ দিলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- কিছুতো বেড়েছেই। সে-অর্থনীতিতে যারা মুখ ডুবিয়েছেন তারা বড় বড় করেই গ্রাস করতে চেষ্টা করছেন। তাদের সুযোগসুবিধেও দিনে দিনে বড় হয়েছে। সুতরাং এটা সত্য যে, রাঘববোয়াল ধরা পড়লে চুনোপুঁটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই রেহাই পাবে না। তাই বিজ্ঞ আদালতের সঙ্গে দ্বিমত করবার কোনও অবকাশ নেই। কেউই যে আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তা প্রমাণ করবার একটি বিষয় তো রয়েছেই। শক্ত করে জাল ফালানো গেলে তাতে বোয়ালের পাশাপাশি চুনোপুঁটিও রক্ষা পাবে না। দুদককেই এ প্রমাণ করতে হবে যে, তারা শুধু চুনোপুঁটি শিকার করতে নামেনি। তারা নেমেছে রাঘববোয়াল আর তিমিগুলোকেও পাকড়াও করতে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ