মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

কমেছে পাসের হার বেড়েছে জিপিএ-৫

স্টাফ রিপোর্টার: চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে, তবে বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এ বছর গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আগের বছর এ হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০। অর্থাৎ এবার ৮৬ হাজার ২৬২ জন বেড়েছে।

গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ফলাফলের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন। তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে (পিএমও) মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ স্ব স্ব বিভাগের ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ফল প্রকাশের পর থেকেই উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অভিভাবক, শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষও আনন্দে মেতে ওঠে। 

সাধারণ ৯ বোর্ডে পাসের হার ৮৮.১০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭৬৩ জন। দাখিলে পাসের হার ৮২.২২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৫৭ জন। কারিগরিতে পাসের হার ৮৯.৫৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮  হাজার ৬৫৫ জন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অনুষ্ঠিত হয় এ পরীক্ষা।  

এ বছর এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় ২০ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় ১৬ লাখ। মোট তিন হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসএসসিতে যশোর শিক্ষা বোর্ডের এবার পাসের হার সবচেয়ে বেশি। এ বোর্ডে পাসের হার ৯৫.০৩ শতাংশ। আর পাসের হার সবচেয়ে কম সিলেটে, এ বোর্ডে পাসের হার ৭৮.৮২ শতাংশ। 

বাকি শিক্ষাবোর্ডগুলোর মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯০ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮৬.০৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৫.৮৮ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯১.২৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮৭.৫৩ শতাংশ, বরিশালে ৮৯.৬১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৮১.১৪ শতাংশ। এছাড়া দেশের বাইরের ৮টি কেন্দ্র থেকে মোট ৩৬৩ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৪৮ জন। সে হিসাবে কেন্দ্রগুলোতে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গতবার এই পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। 

এ বছর মোট ২৯ হাজার ৬৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর ৫ হাজার ৪৯৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। অর্থাৎ এ বছর শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ২ হাজার ৫১৯টি। অন্যদিকে ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী এবার পাস করতে পারেনি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১৮। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রেও গতবারের চেয়ে এবারে ফল খারাপ হয়েছে।

এবারও পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা: নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৭.৭১ শতাংশ। আর ছেলেদের পাসের হার ৮৭.১৬ শতাংশ। গতবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মেয়েদের পাসের হার ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ আর ছেলেদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ ছিল।

এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নয় লাখ ৯৫ হাজার ৯৪৪ জন ছাত্রী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৩ জন। অন্যদিকে নয় লাখ ৯৮ হাজার ১৯৩ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে আট লাখ ৭০ হাজার ৪৬ জন।

চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় আট লাখ ২৬ হাজার ৫৮২ জন ছাত্রী। পাস করেছে সাত লাখ ৩০ হাজার ৮২৬ জন। পাসের হার ৮৮.৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে সাত লাখ ৬২ হাজার ৭৫ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে পাস করেছে ছয় লাখ ৬৮ হাজার ৭৪৫ জন। পাসের হার ৮৭.৭৫ শতাংশ।

দাখিল পরীক্ষায় এক লাখ ৩৪ হাজার ২৪২ জন ছাত্রী অংশ নেয়। পাস করেছে এক লাখ ১০ হাজার ৫০৬ জন। পাসের হার ৮২.৩২ শতাংশ। অন্যদিকে এক লাখ ২৫ হাজার ৮৯০ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ তিন হাজার ৩৭৭ জন। পাসের হার ৮২.১২ শতাংশ।

আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে ৩৫ হাজার ১২০ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করেছে ৩২ হাজার ২৪১ জন। পাসের হার ৯১.৮০ শতাংশ। অন্যদিকে এক লাখ ১০ হাজার ২২৮ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৯৭ হাজার ৯২৪ জন। পাসের হার ৮৮.৮৪ শতাংশ।

বিদেশের ৮ কেন্দ্রে পাসের হার ৯৫.৮৭ শতাংশ: দেশের বাইরের ৮টি কেন্দ্র থেকে মোট ৩৬৩ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩৪৮ জন। সে হিসাবে কেন্দ্রগুলোতে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গতবার এই পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বিদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে দুটি। বিদেশের ৮টি কেন্দ্র হলো- সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, রিয়াদের বাংলাদেশ অ্যাম্বেসি স্কুল, ত্রিপোলির বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুল, কাতারের দোহায় বাংলাদেশ মাসহুর-উল-হক মেমোরিয়াল হাইস্কুল, দুবাইয়ের শেখ খালিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল, বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল, মানামার বাহরাইনে বাংলাদেশ স্কুল ও ওমানের বাংলাদেশ স্কুল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ