কবিতা
হেমন্ত
শাহীন খান
শিশির ঝরে মিষ্টি সুরে প্রাণটা করে কেমন্ত
পাকা ধানের খবর নিয়ে আসলো দেশে হেমন্ত।
ডাকছে পাখি আপন মনে বেড়ায় উড়ে পতঙ্গ
মিহি বাতাস এই না ক্ষণে কাটছে গরম আতঙ্ক!
চাষি বউয়ের মুখে হাসি সুখের দোলা হৃদয়পর
কৃষাণ ভাইয়ের এমন দিনে দারুণ লাগে চরাচর!
দূরে বাজে বাঁশের বাঁশি রাখাল ছেলে পথ ভোলে
খোকন সোনা চাঁদের কথা ঘুমিয়ে পড়ে মা'র কোলে।
খেজুর গাছে ঝরতে থাকে হাঁড়ির ভেতর মজার রস
চিতই পিঠা, ভাঁপা পিঠা মনকে করে কি যে বশ!
নবান্নেরই সাড়া পড়ে তোমার আমার পাড়া গাঁয়
কবিপরাণ ছন্দগানে কেমন জানি নাড়া খায়!
দিনের মেয়াদ কমতে থাকে রাতে নামে শীতটা ভাই
লেপের উমে স্বপ্নঘোরে কল্পলোকে হাওয়া খাই।
এমনি করে মন রাঙিয়ে হেমন্তটা আয় দেশে
ইচ্ছে করে ডানা মেলে আকাশপাড়ে যাই ভেসে!
হেমন্তের সুখ
নুশরাত রুমু
খুশি এলো হেমন্তে আজ
পাকা ধানের সুবাস
হলুদের এই সমারোহে
নবান্ন দেয় আভাস।
ধোঁয়ার মতো কুয়াশারা
মাঠের ওপর ভাসে
রোদের ঝিলিক পড়লে শিশির
লজ্জা পেয়ে হাসে।
ধানের গোলা সাফসুতরো
করছে কৃষাণ বধূ
মাচার ওপর সতেজ ডগায়
বের হয়েছে কদু।
জলাশয়ে কমছে পানি
মাছ ধরতে হবে
টেংরা, কই আর খলশে, টাকি
জালে আটকে রবে।
মাছে-ভাতে বাঙালিরা
কত সুখে থাকি
ঋতুরানি এলে সবাই
সেই ছবিটা আঁকি।
শখের কবি
শ.ম. শহীদ
দেশটা আমার রূপের হাট
কাউনধানে ভরা মাঠ
নৌকা বাঁধা খেয়ার ঘাট
ঠিক যেন এক
পটে আঁকা ছবি!
ঘরে ঘরে স্নেহের টান
পাখ-পাখালির মধুর গান
সব কিছুতেই জুড়ায় প্রাণ
ঘুরে ঘুরে-
দেখা আমার হবি!
গাছে গাছে ফুলের হাসি-
কাস্তে হাতে ছুটছে চাষি
দেখতে খুব ভালোবাসি
দেখে দেখে-
আমি শখের কবি!
শীতের আভাস
কাজী মারুফ
সকালবেলা শীতের আভাস
দুপুরবেলা গরম
রাতেরবেলা কাঁথা ছাড়া
ঠাণ্ডা লাগে চরম।
কার্তিক মাসে ভিন্নধরন
করছে শীতের অনুসরণ
ঘাসের ডগায় শিশির
সুরের পাখি দূরের পাখি
কিচিরমিচির ডাকাডাকি
কাটলে আঁধার নিশির।
একেক ঋতুর একেক রতন
সাজান প্রভু মনের মতন
যেমন খুশি তারই
বর্ষাকালে ফর্সা আকাশ
শীত ঋতুতে বারি।
এই দুনিয়ায় সকল কিছু
তাঁর আদেশে চলে
সকল প্রাণীর খাবার জোগান
হোক না জলে-স্থলে।
হেমন্তকাল
আশরাফ আলী চারু
নতুন সাজে দিকদিগন্ত
ফুল ফসলের বন
চোখ মেলালেই ওসব দেখে
যায় জুড়িয়ে মন।
হেমন্তকাল মাঠ বরাবর
সোনার ধানের শীষ
নবান্ন হয় তার ছোঁয়াতেই
পরম সুখ আশীষ।
মাঠ পেরিয়ে গাঁ পেরিয়ে
সবখানেতেই সুখ
এই হেমন্তের ছোঁয়ায় ছোঁয়ায়
ভুলাই মনের দুখ।
ইচ্ছে করে
আবদুল হাই ইদ্রিছী
সবুজ শ্যামল দেশটি আমার
মায়ের মুখের হাসি,
প্রাণের চেয়ে প্রিয় তাকে
ভীষণ ভালোবাসি।
হাওড়-বাঁওড় নদ-নদীতে
দেশটি আমার ঘেরা,
রূপে তাহার নেই তুলনা
গুণে সবার সেরা।
ফুলের গন্ধ পাখির কুজন
হৃদয় মগ্ন করে,
প্রকৃতি তাঁর সেজেগুজে
ডাকে মনটা ভরে।
রূপের বধু মায়ার জাদু
দেশটি বুকে নিয়ে,
ইচ্ছে করে দূর আকাশে
ঘুরি উড়াল দিয়ে।
মায়ের হাসি
সৈয়দুল ইসলাম
মা’ জননীর চন্দ্র হাসি
দেখলে জুড়ায় প্রাণ,
ফুলের মতোই মায়ের হাসি
ছড়ায় মধুর ঘ্রাণ।
মায়ের হাসির নেই তুলনা
যতোই হাসি ভাই,
জগৎ জুড়ে মায়ের হাসির
ঊর্ধ্বে যে হয় ঠাঁই।
মা'র হাসিতে মুক্তো ঝরে
ফুল-ফলে দেয় সাড়া,
একমুহূর্ত ভাল্লাগে না
মায়ের হাসি ছাড়া।
দুঃখ কষ্টে যতোই থাকি
দেখলে মায়ের মুখ,
দূর হয়ে যায় দুঃখ-ব্যথা
পাই ধরণীর সুখ।
শীত আসছে
মিয়াজী তোফায়েল আহমাদ
শীত আসছে গভীর রাতে
বিন্দু বিন্দু জলে,
সবুজ ঘাসের ডগার মাঝে
শিশির টলোমলে।
শীত আসছে গগনতলে
সবুজ শ্যামল গাঁয়ে,
নদীর বুকে পানির মাঝে
জেলের ডিঙি নায়ে।
শীত আসছে মাঠেঘাটে
হলুদ সরষে ফুলে,
গাছের ডালে জমাট বাধা
ছোট্ট বাউকুলে।