রবিবার ২৮ মে ২০২৩
Online Edition

‘ডায়াবেটিসের ওষুধ কারও কারও ক্ষেত্রে বন্ধ করা সম্ভব’

ডায়াবেটিসের ওষুধ কতদিন চালাতে হবে বা চিকিৎসা পদ্ধতি কেমন হবে এটা নিয়ে অনেকেরই নানাবিধ প্রশ্ন জাগে মনে। এ ধরনের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের হরমোন, থাইরয়েড ও ডায়াবেটিস রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ।

নিয়মিত চিকিৎসা নেয়ার পরও কারও কারও ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে কেন?

 ডায়াবেটিসের জন্য নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাতায়াত করার পরও কোনো কোনো রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাপ হচ্ছে ডায়াবেটিস এডুকেশন। অর্থাৎ ডাক্তার বা কেয়ারগিভারদের এডুকেশন লাগবে, সঙ্গে রোগীদেরও এ এডুকেশন থাকা চাই। ডাক্তারদের ট্রেনিং নিতে হবে, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে এবং রোগীভেদে সঠিক চিকিৎসা দিতে হবে। রোগীদের কতক্ষণ হাঁটতে হবে, কীভাবে হাঁটতে হবে, সঠিক খাদ্য নির্বাচন ও সময়মতো খেতে হবে, ইনসুলিন সঠিকভাবে নেয়ার পদ্ধতি, রক্তের সুগার বাড়লে-কমলে ইনসুলিনের ডোজ বাড়া-কমা সমন্বয় করা, গ্লুকোমিটার দিয়ে ঘরেই রক্তের সুগার পরীক্ষা ও হাইপো গ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ এবং কীভাবে এটি ম্যানেজ করতে হয় তা জানতে হবে। এর সঙ্গে রোগীর এক বছর পর পর চোখ পরীক্ষা করতে হবে, রক্তের কোলেস্টেরল মাপতে হবে। এ বেসিক এডুকেশনের অভাবেই অনেকের ডায়াবেটিস কন্ট্রোল হচ্ছে না। এর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের অপচিকিৎসাও হচ্ছে।

ডায়াবেটিস রোগীদের কী সারা জীবনই ওষুধ খেতে হয়?

কিছু রোগী একবার ওষুধ শুরু করলে তা বন্ধ করতে পারবে। গর্ভাবস্থায় যাদের ডায়াবেটিস হয়েছে তাদের মধ্যে ৩০-৪০ ভাগের ডেলিভারি হওয়ার পর ডায়াবেটিস ভালো হয়ে যায়। বাকিদের প্রিডায়াবেটিস থাকে কিংবা পুরোপুরি ডায়াবেটিস হয়ে যায়। কারও হরমোনের রোগ যেমন- ক্রুসিং সিনড্রোম হলে, এ রোগ থেকে মুক্তি পেলে ডায়াবেটিসও ভালো হয়ে যায়। কেউ কোনো রোগের কারণে স্টেরয়েড খেলে তা খাওয়া বন্ধ করে দিলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি মেলে। একে স্ট্রেস ডায়াবেটিস বলে। কারও ইনফেকশন বা ধরা যাক নিউমোনিয়া হয়েছে, তার এ রোগ ভালো হলে ডায়াবেটিসও চলে যায়। যাদের টাইপ টু ডায়াবেটিস সম্প্রতি ধরা পড়েছে তাদের শারীরিক ওজন শতকরা ২০ ভাগ কমাতে পারলে ডায়াবেটিস ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের আমরা সাধারণত তাদের দৈহিক ওজনের ৫-৭ ভাগ কমাতে বলি। যারা চিকিৎসকের পরামর্শে রোগের শুরুতেই ইনসুলিন ব্যবহার করছে তাদের যদি পরপর দুই বছর ডায়াবেটিস পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজিটিটি পরীক্ষা করার পর সুগার নরমাল লেভেলে থাকলে তাদেরও ডায়াবেটিসের ওষুধ বন্ধ করা যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের সারা জীবন ওষুধ খেতে হয়।

ডায়াবেটিস রোগ নির্ণীত হওয়ার পরও কেউ চিকিৎসা না নিলে কী ক্ষতি হতে পারে? এক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি বা তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হতে পারে। তাৎক্ষণিক জটিলতার মধ্যে হঠাৎ করে ডায়াবেটিস অনেক বেড়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তির প্রযোজন হয়। একে বলে ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস বা হাইপারঅসমোলার কোমা। দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার মধ্যে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, চোখের ক্ষতি, পায়ে ঘা হওয়া বা পা কেটে ফেলার জন্য পঙ্গুত্ববরণসহ বন্ধ্যাত্ব পর্যন্ত হতে পারে। চোখের জটিলতা এ রোগীদের অন্যদের থেকে ৫ গুণ বেশি থাকে, স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা ৬ গুণ, পা কেটে ফেলার আশঙ্কা ২২ গুণ ও হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা ২-৪ গুণ বেশি থাকে। এ জটিলতা সম্পর্কে রোগীদের চিকিৎসকরা সম্যক ধারণা দিলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা রোগীদের থাকে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ