সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দেয়ার গুরুতর অভিযোগে সারাদেশে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সচেতন সাধারণ মানুষেরাও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। সকলেই দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় দৈনিকসহ গণমাধ্যমেও ব্যাপক নিন্দা-সমালোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রকাশিত খবরে জানানো গেছে, গত রোববার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশে ১১ নম্বর প্রশ্নের উদ্দীপকে বলা হয়েছে, নেপাল ও গোপাল নামের আপন দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিল শত্রুতাপূর্ণ। জায়গা-জমি নিয়ে আদালতে মামলায় জড়িয়ে পড়াসহ সকল দিক থেকেই তারা একজন অন্যজনের ক্ষতি করার চেষ্টা করতো। এমন সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ছোট ভাই নেপাল বড়ভাই গোপালকে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে নিজের বাড়ির ভিটের একটি অংশ আবদুল নামের একজন মুসলিমের কাছে বিক্রি করে দেয়। মালিকানা পাওয়ার পর ওই আবদুল তার কেনা জায়গায় ঘর-বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং ঈদের সময় সেখানে গরু কোরবানি দেয়। এতে দুঃখ পেয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপাল তার সব জায়গা-জমি ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায়।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, নামে প্রশ্নপত্রের অংশ হলেও এই উদ্দীপক অংশে কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা করা হয়নি। পরিবর্তে গল্পের ঢঙে এমন একটি কাহিনী জুড়ে দেয়া হয়েছে, যেমন কোনো ঘটনা বাংলাদেশে কখনো ঘটে না। এজন্যই পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সচেতন সকলে এক বাক্যে অভিযোগ করেছেন, প্রশ্নপত্রের উদ্দেশ্য আসলে বাংলাদেশের প্রধান দুই ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের উস্কানি দেয়া। কারণ, প্রশ্নের আড়াল নিয়ে যেভাবে গল্প সাজানো হয়েছে তেমন পন্থায় বাংলাদেশে সাধারণত কখনো কিছু ঘটে না। কিন্তু সব জানা সত্ত্বেও আলোচ্য প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের উস্কানি দিয়েছেন এর প্রস্তুতকারী শিক্ষক। ওদিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার জবাবে সোমবার জানিয়েছেন, বোর্ডের নিয়মে কড়াকড়ি রয়েছে বলে যিনি তৈরি করেন তিনি ছাড়া আর কারো পক্ষে প্রশ্নপত্র দেখার বা কোনো পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। এজন্যই অনেক বড় এবং গুরুতর বিষয় হলেও এটা কারো পক্ষে দেখা বা জানা সম্ভব হয়নি।
সোমবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানশেষে শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনিও একই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘাতের উস্কানি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। উল্লেখ্য, বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্রের মূলকপি তথা পান্ডুলিপি সরকারি তথা বিজি প্রেসে জমা রয়েছে। ওটা দেখলেই জানা যাবে, প্রশ্নপত্রটি কোন কলেজের কোন শিক্ষক তৈরি করেছিলেন। তাছাড়া প্রশ্নপত্র যিনি মডারেটিং করার দায়িত্বে ছিলেন তাকেও চিহ্নিত করা যাবে। তিনি কেন উস্কানির অংশটুকু বাদ দেননি বা পরিবর্তন করেননি তার কৈফিয়তও আদায় করা হবে এবং দু’জনকেই কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারের আশ্বাস বাস্তবে কতটা ফলপ্রসূ হবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সত্য কিন্তু এটুকু অবশ্যই বলা দরকার, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িকতার এ ধরনের উস্কানি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, শিক্ষা বোর্ডের পাশাপাশি সরকারের উচিত জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ে নজর রাখা এবং এমন কঠোর পদক্ষেপ নেয়া, যাতে কোনো মহল বা চক্রের পক্ষেই সংঘাতের উস্কানি দেয়া সম্ভব না হয়।1