রহিমা বেগমের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনায় ৮ কারণ চিহ্নিত
খুলনা ব্যুরো : খুলনার বহুলালোচিত রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনায় পিবিআই তার স্বামী বেল্লাল ঘটক ওরফে বেলাল হাওলাদারকেই সন্দেহ করছে। এ পর্যন্ত পিবিআইয়ের কাছে এবং আদালতে রহিমা বেগম যেসব তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছে পিবিআই। তবে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুর ঘুরে এখন বান্দরবান যাবেন তথ্য উদঘাটনে। এদিকে গত ২৭ আগস্ট রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত মামলার তদন্তকারী সংস্থা উদ্ধার হওয়া রহিমা বেগম সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, রহিমা বেগম যে বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলেন সেই বাড়ির সদস্য এবং রহিমা বেগমের স্বজনদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আটটি কারণে রহস্যজনক নিখোঁজের মূলপরিকল্পপনাকারী মরিয়ম মান্নান ও তার স্বজনরা এমনটাই দাবি করছে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী।
পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা রহিমার কাছ থেকে পাওয়া সব তথ্যই ক্রস চেক করছি। এখন পর্যন্ত তার দেওয়া তথ্যের সপক্ষে কোনও তথ্য পাইনি। তার দেওয়া তথ্য বিভ্রান্তিমূলক। ২৭ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুরের সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুসের বাড়ি ঘুরে এসেছেন। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এখন বান্দরবানে যাবেন তদন্ত কর্মকর্তা। বান্দরবান সদরের ইসলামপুরে রহিমা গিয়েছিলেন। সেখানকার তথ্যও যাচাই করা হবে। তদন্ত চলবে।’
বেলাল হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই মামলায় একমাত্র রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদারকেই সন্দেহ করছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে সঠিক তথ্য পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আমরা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। শুনানি হয়নি এখনও। এই মামলার তদন্ত শেষে আদালতে রিপোর্ট দেওয়া হবে। তারপর এই মামলা বা ভিকটিম রহিমা, মেয়ে মরিয়ম ও বাদী আদুরীসহ অন্যদের ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আদালতই নির্দেশ দেবেন।’
পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, ‘রহিমা বেগম জানিয়েছিলেন, ২৭ আগস্ট রাতে অপহরণ হওয়ার পর হুঁশ ফিরে সাইনবোর্ড পড়ে দেখেন তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি বান্দরবান এলাকার মণি বেগমের ভাতের হোটেলে চাকরি করেছেন। হোটেল মালিক তাকে স্থানীয় একটি ক্যাম্পে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন। চাকরির জন্য তার জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ডের প্রয়োজন। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ডের জন্য তিনি সরাসরি চলে আসেন ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে তার পূর্ব পরিচিত কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে। সেখানে অবস্থান করে ১৬ সেপ্টেম্বর যান সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হকের কাছে। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জন্ম হয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। কর্মের তাগিদে বাগেরহাটে থাকি। সেখানে গৃহপরিচারিকার কাজ করি।’ এতে সন্দেহ হওয়ায় তাকে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি দেওয়া হয়নি।’
এদিকে গত ২৭ আগস্ট রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত মামলার তদন্তকারী সংস্থা উদ্ধার হওয়া রহিমা বেগম সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, রহিমা বেগম যে বাড়িতে আশ্রয়ে ছিল সেই বাড়ির সদস্য এবং রহিমা বেগমের স্বজনদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আটটি কারণে রহস্যজনক নিখোঁজের মূলপরিকল্পপনাকারী মরিয়ম মান্নান ও তার স্বজনরা এমনটাই দাবি করছে ভুক্তোভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী। এছাড়া নিখোঁজ রহিমা বেগমের নিখোঁজ বা অপহরণ মামলায় সন্দেহজনকভাবে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মুক্তি এবং কথিত অপহরণের নাটকের মূল পরিকল্পনাকারী রহিমা বেগম, মরিয়ম মান্নান, আদুরী আক্তারসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ভুক্তভোগী পরিবারের ও এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার ফুলবাড়ীগেটে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশ ও আশ্রয়দাতাদের বক্তব্যে প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট হয়েছে যে রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়নি। তবে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা এই রহস্যজনক রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনার সাথে জড়িত রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের স্বজনরা এমনটাই দাবি করেছে আটককৃতদের পরিবার ও এলাকাবাসী।