শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩
Online Edition

পাখির রাজা ফিঙে বসে গরুর সিঙে

মতিন মাহমুদ

সবার পরিচিত পাখি ফিঙে। বলা হয় পাখির রাজা ফিঙে। এর বিভিন্ন নাম আছে। এদের বিচরণ ক্ষেত্র মাঠে-ঘাটে। ফিঙে মানুষের কাছাকাছি উড়ে বেড়াতে পছন্দ করে। রাখালরা যখন উন্মুক্ত মাঠে গরু, মহিষ ও ছাগল ছেড়ে দিয়ে আনমনা হয়ে বসে থাকে তখন গবাদি পশুগুলো ঘাস খাওয়ার প্রতি মগ্ন থাকে।  ফিঙে পাখিরা তখন পিঠে এমন কি গরুর সিং এ বসে থাকে। সেখান থেকে উড়ে উড়ে ফড়িং, মৌমাছি, পিঁপড়া, ওলু পোকা, পতঙ্গ, মাজরা পোকা, মাকড়সা ধরে খায়। এটা দেখে শিশুরা খুব মজা যায়। আমিও এরকম দৃশ্য অনেকবার দেখেছি। এদের অপ্রাপ্ত, বয়স্কদের পেটের ওপর থাকে সাদা দাগ। স্ত্রী-পুরুষ উভয় পাখি একই রকম। অনেকে একে আক্রমণাত্মক পাখি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফিঙে পাখি সকালবেলা মধুর সুরে গান গেয়ে মন ভোলাতে পারে। 

ফিঙে পাখির বৈজ্ঞানিক নাম : ডিক্রুরাস ম্যাক্রোসার্কাস (Dicrurus macrocercus), ইংরেজি নাম : ব্ল্যাক ড্রোনগো (Black Drongo), ড্রোনগো পরিবারের একটি ছোট এশীয় পাসেরিন পাখি। কালো ফিঙে (Drongo) Passeriformes বর্গের গায়ক পাখি। পরিবার বা ফ্যামিলি হচ্ছে ডিক্রুরিডায়ে। গণ বা জেনাস হচ্ছে ডিক্ররাস। প্রজাতি বা স্পেসিজ ডি ম্যাক্রোসাকাম। দ্বিপদী নাম ডিক্রুরাস ম্যাক্রোসার্কাস। মাঝারি আকার, উজ্জ্বল কালো রং, লম্বা ও চোখা ডানা, সামান্য বাঁকা শক্ত ঠোঁট যার গোড়ায় লম্বা গোঁফ, দীর্ঘ ও খাঁজকাটা লেজ এদের বৈশিষ্ট্য।  এটি গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা। তবে দক্ষিণ-পশ্চিম ইরান থেকে ভারত এবং শ্রীলংকা হয়ে পূর্ব চীন এবং ইন্দোনেশিয়া হয়ে জাপানে এর দেখা মেলে। কালো রং আর দুভাগ করা লেজ দিয়ে এদের সহজেই চেনা যায়।  গ্রামে ফিঙে পাখি বেশি দেখা গেলেও নগরে দেখা মিলে কম। আফ্রিকা, প্রাচ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় দেখা গেলেও দক্ষিণ এশিয়ায় এই গোত্রের প্রাধান্য লক্ষণীয়। ফিঙে প্রায়শ নিজের চেয়ে অনেক বড় পাখিকেও তাড়া করে এবং অনেক সময় প্রতিবেশী নিরীহ পাখিদের আগ্রাসী শিকারি পাখির হামলা থেকে বাঁচায়। প্রধানত পতঙ্গভুক, উড়ন্ত কীটপতঙ্গ ধরে খায়, আবার কখনও ছোটখাটো মেরুদন্ডী খায়। পৃথিবীতে প্রায় ২৪ প্রজাতি আছে, বাংলাদেশে আছে ৬ প্রজাতি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই এ পাখির প্রাধান্য লক্ষণীয়। এরা গাছের খোঁড়লে বাটি আকৃতিতে বাসা তৈরি করে ৩ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩ থেকে ১৪ দিন। এর লেজসহ ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত কালো। কালোর ওপরে নীলাভ আভায় যেন মনোরম লাগে। এদের ঠোঁট ধাতব কালো, গোড়ায় সাদা ফোঁটা থাকে এবং পা কালচে। 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ