শেয়ালের চালাকি

জহির টিয়া
এক বনে একটা মোরগ বাস করত। সে ছিল দুরন্ত আর চঞ্চল। কখনও কোনও জায়গাতে স্থির হয়ে বসে থাকত না। প্রতি ভোররাতে এমনভাবে কুক্ কুরু কু ডাক দিত যে, বনের সকল পশুপাখির আরামের ঘুম ভেঙে যেত। তাই সকলেই তার ওপর রেগে থাকত। কিন্তু কোনোভাবেই তাকে ধরতে পারত না। ধরতে গেলেই উড়ে গিয়ে এইগাছে ওইগাছে বসতো।
সেই বনে থাকত একটা শেয়াল। তার পেছনের পা জোড়া ভাঙা। সামনের পায়ে ভর দিয়ে চলাফেরা করত। আর পেছনের পা জোড়া নেতিয়ে মাটিতে পড়ে থাকত। এই শেয়ালটিকে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত করত মোরগটি। সবসময় কুক্ কুরু কু ডাকে কান ঝালাপালা করে তুলত। কিন্তু শেয়ালটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় কিছু করতে পারত না। শুধু বসে থেকে রাগে বেলুনের মতো ফুলতো।
একদিন মোরগটির অতিরিক্ত জ্বালাতে অতিষ্ঠ হলো শেয়ালটি। যা শেয়ালের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল। তাৎক্ষণিক শেয়ালের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল।
বনের মধ্যখানে একটা ফাঁকা জায়গা ছিল। সেখানে রাতের আঁধারে চুপিচুপি মাটিতে ফাঁদ পাতলো শেয়ালটি। যেহেতু শেয়াল বসে থাকলে মোরগটি তার সামনে-পেছনে, ডানে-বামে ছোটাছুটি করে। তাই ফাঁদে পড়তে বেশি সময় লাগবে না। সকালবেলা শেয়ালটি ফাঁদের মাঝখানে বসে রইল। আর মোরগের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
মোরগটি বনে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় শেয়ালকে বনের ফাঁকা জায়গাতে দেখতে পেলো। দেখেই ছুটে গেল শেয়ালের দিকে। শেয়ালের কাছাকাছি যেতেই আটকে গেল ফাঁদে। চেষ্টা করতে লাগল নিজেকে ছাড়ানোর কিন্তু পারল না।
তখন মোরগটি নিজের ভুল বুঝতে পারল। আসলে শেয়ালকে অমন করে জ্বালানো ঠিক হয়নি। প্রতিবন্ধী বলে তাকে কতোই না বিরক্ত করেছে। মোরগ শেয়ালটির কাছে কাকুতি-মিনতি করল। কিন্তু কাজ হলো না। শেয়াল মোরগটিকে খাওয়ার জন্য হামলে পড়লো।