শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩
Online Edition

কবিতা

তোমার সমীপে

মোশাররফ হোসেন খান

 

শান্ত করো তুমি তৃষিত এ বুক

চাই না আমি দুনিয়ার সুখ।

আমি তো সকল সময় তোমাকে করেছি স্বীকার,

আর কিছু চাই না, চাই শুধু তোমার দিদার।

 

তুমি তো জানো প্রভু কোন্ জঙ্গলে আমার পরবাস,

বুনো হাতির দঙ্গল মাড়িয়ে হয়তো 

হতে পারিনি তোমার দাসের মতো দাস। 

তাই বলে ছেড়ে যেও না আমাকে 

ক্ষমা করে দাও আমার যতো ভুল ত্রুটি,

তোমার ইচ্ছাতে ঘুমিয়ে যাই ফের 

            তোমার কুদরতে জেগে উঠি।

 

হিসাবের খাতা থাক না মলাট বদ্ধ,

সৃষ্টির মমতায়--

জান্নাতের দ্বার খুলে দাও হে রব

                তোমার বিশেষ ক্ষমতায়।

 

জাহান্নামের আগুন থেকে

                আমাকে দাও না নাজাত,

হে মালিক, তোমার সমীপে সিজদাবনত       

     কবুল করো এই দাসের মুনাজাত।

 

অলৌকিক সুখ

দিলরুবা নীলা

 

মাঝে-মাঝে তোমাকে খুব পেতে ইচ্ছে করে

পৌষের সুদীর্ঘ রাত্রি শেষে সূর্যের সান্নিধ্যের মতো।

 

কিছুটা অলৌকিক সুখ আমারও চাই।

আনকোরা নতুন শাড়ির ঘ্রাণ অথবা কাঠফাটা রৌদ্দুরে 

দীর্ঘশ্রম শেষে শ্রমিকের

এক-চিলতে বিশ্রামের মতো।

 

বিবি কিং-এর সুরের মূর্ছনায় 

আমিও বিমোহিত হতে চাই কিছুটা সময়।

 

সুপ্রাচীন দেবদারু গাছটা কিসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে?

 

আমৃত্যু -অবিনশ্বর 

একটা প্রশ্নের উত্তর এখনো খুঁজে বেড়ায় ইতিহাস– 

শিরিকে কে বেশি ভালবাসত?

খসরু নাকি ফরহাদ?

 

প্রিয় একটা পঙক্তির প্রতীক্ষায় 

আজন্ম তৃষ্ণার্ত কবি।

 

জন্ম-জন্মান্তরের গহীন-অতল ধ্বনি...।

 

মুদ্রিত ধ্রুপদ 

নন্দিনী আরজু রুবী 

 

তিরতির ঢেউ পদ্মার পাড় ঘেঁষে চিহ্ন রেখে গেছে

আমাদের বিধৌত পায়ের, কালের কোনো স্বাক্ষর নয়!

যেন কতশত শতাব্দীর চেনা পরিক্রমা।

 

উত্তরের অক্ষরেখা জুড়ে ভাসে--নদীমাতৃক প্রাচীন ধূলো। 

উচাটন মন পানকৌড়ির মতো ডুবে ডুবে,

তুলে আনে মুদ্রিত-ধ্রুপদ ---

 

স্বচ্ছ অনুধাবনে পরিতৃপ্তির নিবিড়তা, 

বনষ্পতির সুনিশ্চিত ছায়ার ভিতর আশ্রয়, আহা জীবন--

প্রহেলিকার অস্তমিত কলরব ছাপিয়ে উঠে আসে--

 

 

রক্তিম ইশারা

শিমুল হোসেন 

 

নীলজলে পূর্ণ বিশাল সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে 

মানুষ যতটা আন্দোলিত হয়

যেভাবে দেখলে মুগ্ধতা ছড়ায় হিয়ার মাঝে;

তুমি ঠিক ততটাই আঁচ করতে পারবে

যদি তুমি সেভাবেই দেখতে চেষ্টা করো।

 

রক্তিম ইশারা আমার দুচোখ জুড়ে

প্রেম টলমল সরোবরে কিসের তপ্তধ্বনি?

তুমি বুঝবে- তুমি বুঝবে এ হৃদয়ের চাহনি। 

 

পালাতে না পেরে 

গাজী গিয়াস উদ্দিন 

 

দশের সামনে দাঁড়াবার সাহস দেখাও

তোমাদের নিয়ে যতো প্রত্যাশা দেশের 

ছিঁড়ে ফুঁড়ে সব বাঁদরা বেসাতি, 

অন্ধকারে পথ হাতড়ানো দল

সবে কেন আজ ভোগবান্ধব ব্যাধির ধ্বজাধারী? 

 

যতোবার বিবেক বর্জনকে পাশ কাটাতে চেয়েছি

মনের আভিজাত্যে একা হয়ে যেতে চেয়েছি

পারিনি, 

শতচোখ শত হাত বাজিকরী সিস্টেমকে আগলে রাখে।

 

পালাতে না পেরে মেজাজটাই তিরিক্ষি 

আমার ভয় কিসের হারাবার কিছু 

আমিতো হিংসা আর বঞ্চনার সেতু পেরিয়ে 

মহাকাশের দম্ভ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। 

 

সত্যমিথ্যা খিচুড়ি যাদের উপাদেয় 

জনতাকে বিভক্ত করার কৌশল ওরা শিখেছে 

মিথ্যে ছলনা প্রসত্য হয়ে উঠেছে

সত্যের চেয়ে নিঃস্ব নয় কেউ... 

সত্য এখনো ক্লন্ত দেহে খুঁজছে মিথ্যাকে, 

রহস্যবাজ সভ্যতায় আর কিছু নেই।

 

 

পিপাসা

সোহেল মাহবুব

 

স্রোতের উর্বর টানে জলের ভেজা ঠোঁট ছুঁতে পায় সমুদ্র

স্রোতের বুকে পা পিছলে পড়া নির্ভেজাল স্বপ্নগুলোও কি-

চুমে দিবে বিশাল ঢেউ?

মাছির সম্ভ্রমের কথা ভাবতে গিয়ে মুখোশের মহড়ায় মেতেছে আকাশ

নক্ষত্রের পাশে ঘুমন্ত খাতায় লিখা যোজনের ধারাপাত

সেখানে দুই গুণ দুই মিলে পাঁচ হয়, ফণার আওতায় আসে অসম্মত চাঁদ

 

ঘাসফড়িঙের পাখনায় আগুনের জীবনী লিখতে গিয়ে 

ভাটির পিপাসায় আটকে যায় বিনয়ী কুপী।

অনেক কিছু দেখার থাকলেও দেখা হয় না ইচ্ছার আত্মহননে

হাত মেলে থাকা বৃক্ষের সতেজ মৃত্যুই যেন ঘুমের ভাষা বুঝিয়েছে অসময়ে।

সংশয়ের বয়স বাড়তে বাড়তে আকাশের শরীর ছুঁয়েছে

দাঁত কেলানো ঘাসের সাথে আর কতো বসবাস

তবুও অন্ধ আঙ্গুল পেতে চাইছে সুগন্ধি গুহা!

 

আহা! এই সময়ে যদি খাতা কলমের ঘুম ভাঙত

তাহলে লিখা হয়ে যেত নাড়ির অস্তিত্ব নিয়ে কবিতা

নেতানো সকাল শুদ্ধতার দাপটে নির্ভেজাল স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতো

উজানের বর্ণমালায় ভালোবাসার একক সৌন্দর্যে সব পিপাসা মিটতো...

 

দ্রুতগামী জীবন

শফিকুল আলম সবুজ

 

চলন্ত ট্রেনের মতো দ্রুতগামী জীবন।

গন্তব্যে পৌঁছতে যা কিছু সামনে আসবে

সবকিছু চুরমার করে নির্দিষ্ট স্টেশনে থামবে। 

 

আমি ঠিক চলন্ত ট্রেনের মতো অগ্রগামী। 

"ফি আমানিল্লাহ" বলে ছুটছি নির্দিষ্ট স্টেশনে । 

কোনো বাধাতে থামছি না লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত।

 

আমার সঙ্গি- আমার অভিলাষ 

আমার শক্তি- আমার ইচ্ছা

আমার সম্ভল- আমার জ্ঞান

আমার অর্থ- আমার সাহস।

 

রুটি পোড়ার গন্ধ

সাঈদুর রহমান লিটন 

 

পাষাণ সূর্যটা বেশিই কষ্ট দেয়

কষ্ট বেদনার নীলে নীলাভ

তপ্ততার আগুনে হৃদয় পুড়ে

তাওয়ায় রুটি পোড়ার মতো গন্ধ। 

সূর্য আর তাওয়ার যৌথ আক্রমণ

দৌড়ে পালাতে হয়

নইলে রক্তাক্ত হয় দেহ-মন সবই।

 

কষ্ট নদী

নাসরীন খান 

 

সবার বুকে কষ্ট রয়

কখনো তা নদী হয়

কখনো তা হয় আকাশ 

 তার থাকে নানা প্রকাশ।

 

একজীবনে বেদনা যত

বাড়ুক বুকে যতই ক্ষত

সাগর সমান হোক যদিও 

আছে আশার তীর নদীরও।

 

বোধের বাইরে কেউ নই

সুখ দুঃখে ডুবে রই

আঁচলে তুলে করে চাষ

কবির কলম বার মাস।

 

গলুই চুঁইয়ে পানির ঢল

করে আহত চোখে জল

কেউ বড় একা থাকে

কখনো কান্নায় চোখ ঢাকে।

 

বাদল ঝরায় নোনা জীবনে

অপেক্ষা শুধু সূর্য কিরণে

হাতটা ধরে এগিয়ে চল্

বাড়ুক ধৈর্য মনোবল।

 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ