বারি উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তি কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে --------কৃষিমন্ত্রী

গাজীপুর সংবাদদাতা: কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, বলেছেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের অনেক উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু এসব প্রযুক্তির অধিকাংশই কৃষকের কাছে সেভাবে পৌঁছায়নি। তাই দেশের কৃষির উন্নয়নে এসব জাত ও প্রযুক্তি দ্রুততর সময়ের মধ্যে কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ফসলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে তাদের আয় বাড়াতে হবে। কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা না গেলে দেশের কৃষির উন্নয়ন হবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বারি’র ‘কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালা-২০২২’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা বলছি দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু আমাদের শুধু দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে হবে না, অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও বাড়াতে হবে। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার ভোজ্য তেল এবং ৫-৭ হাজার কোটি টাকার ডাল আমদানি করতে হয়। আমরা আগামী ৪ বছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ভোজ্য তেলের উৎপাদন ৪০% বাড়াতে চাই। এতে আমাদের প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নয়নের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এটা ধরে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, একটা ডিমের উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ৫/৬ টাকা। এটাকে ৮ টাকা নেয়া যেতে পারে, কিন্তু তা না করে ১৩/১৪ টাকা করে কেন হবে? এটা কি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না? সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা নিয়ে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিছুতেই এটা ডিমের দাম ১৩/১৪ টাকা হতে পারে না।
মন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে আমাদের ডিম আমদানির দরকার নেই। তা হলে আমরা আমদানি নির্ভরশীল হয়ে যাবো। এতে অনেকে দ্বিমত পোষণ করবে। তারপরও আমি বলবো ডিম আমদানি করার দরকার নাই। এজন্য আমাদের একটু কষ্ট হবে, নইলে ডিম কম খাবো। তারপরও স্থানীয়ভাবে আমাদের ডিম উৎপাদন করে খেতে হবে। দেখা গেছে যখনই বাজারে সরবরাহ কমে যায় তখন কিছু হ্যাচারি মালিক, ফার্মের মালিক নানা রকম চক্রান্ত করে ডিমের দামটা বেশি নেয়। আবার বাজারে যখন ডিমের সরবরাহ বেড়ে যায় তখন কিন্তু তারা ষড়যন্ত্র করে ডিমের দাম বাড়ায় না। তাই ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের উচিত হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যারা দায়িত্বে রয়েছেন, মার্কেটিং বিভাগ সবাই মিলে এটা কঠোরভাবে মনিটরিং করা। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিয়ে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের যে প্রযুক্তি আছে এবং বাণিজ্যিকভাবে আমাদের যে সংখ্যক ফার্ম আছে, ইচ্ছা করলে ডিম দিয়ে বাংলাদেশ ভাসিয়ে দেয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার এর সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. রুহুল আমিন তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর চেয়ারম্যান জনাব এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক জনাব আঃ গাফ্ফার খান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. মো. কামরুল হাসান। বারি’র গবেষণা কার্যক্রম ও সাফল্যের উপর সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন বারি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. তারিকুল ইসলাম।
এর আগে মন্ত্রী বারি’র কৃষি প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও ফসল প্রদর্শনীর স্টল ঘুরে দেখেন। অনুষ্ঠানে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বারি’র মহাপরিচালক জানান, উদ্বোধনী এ কর্মশালার কারিগরি অধিবেশন বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ৬২৫টি উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ), রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত এবং ৬১২টি উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তিসহ মোট ১,২৩৭টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া বর্তমানে ২১১টি ফসল নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বারি এ সকল জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে তেলবীজ, ডালশস্য, আলু, গম, সবজি, মসলা এবং ফল ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বারি সূত্র জানায়, গত অর্থবছর যে সকল গবেষণা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল সেগুলোর মূল্যায়ন এবং এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী বছরের গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালার কারিগরি অধিবেশনের গবেষণা পর্যালোচনা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। আঞ্চলিক গবেষণা পর্যালোচনা, অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা ও কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা। প্রথমে আঞ্চলিক পরে অভ্যন্তরীণ ও সবশেষে কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালার মাধ্যমে গত বছরের গবেষণা কার্যাবলির বিশ্লেষণ ও পরবর্তী বছরের গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে যে কারণে এই কর্মশালার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন পর্যায়ের এই কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষক প্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আঞ্চলিক কৃষির সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং সেই আলোকে গবেষণা কার্যক্রম প্রণীত হয়। আঞ্চলিক গবেষণা পর্যালোচনা অঞ্চলভিত্তিক অনুষ্ঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ ও কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা গাজীপুরে বারি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়।