খুলনায় রহিমা বেগমের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনায় মেয়ে মরিয়ম মান্নানই মাস্টার মাইন্ড!

খুলনা ব্যুরো : গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে খুলনার মহানগরীর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা রহিমা বেগমের অন্তর্ধান ও উদ্ধার পরবর্তী অবস্থায় তাকে অপহরণের বিষয়টি বেশ আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু পিবিআই কর্মকর্তারা বলেছেন, দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা থেকে তাকে অপহরণের এমন কোনো তথ্য বা প্রমাণ তারা পাননি। রহিমা বেগম একেক সময় একেক তথ্য দিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আরো বলেন, রহিমা বেগম যদি মিথ্যার আশ্রয় নেন এবং তার অন্তর্ধান সাজানো হয়, তবে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে গৃহবধূ রহিমা বেগমের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনায় তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানকে মূল পরিকল্পনাকারী (মাস্টার মাইন্ড) বলে দাবি করেছেন মামলায় গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, এই ঘটনায় মরিয়ম মান্নানসহ অন্যান্য যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হলে প্রকৃত সত্য উদঘাটন হবে। একই সঙ্গে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার আসমীদের দ্রুত কারাগার থেকে মুক্তির দাবি জানান তারা।
পুলিশ সুপার বলেন, রহিমা বেগম জানিয়েছিলেন গত ২৭ আগস্ট রাতে অপহৃত হওয়ার পর যখন তার হুঁশ ফেরে, নিজেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আবিষ্কার করেন তিনি। আশপাশের সাইনবোর্ডের লেখা পরে তিনি এটি বুঝতে পারেন। সেখান থেকে তিনি বান্দরবন এলাকার মনি বেগমের ভাতের হোটেলে চাকরি করেছেন। হোটেল মালিক তাকে স্থানীয় একটি ক্যাম্পে চাকরি দেয়ার কথাও নাকি বলেন। কিন্তু এর জন্য তার জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন।
এ সব নিতে তিনি সরাসরি চলে আসেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে তার পূর্ব পরিচিত কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে। সেখানে অবস্থান করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর যান সৈয়দপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হকের কাছে। সেখান তিনি জানান, তার জন্ম বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। কর্মের তাগিদে তিনি বাগেরহাটে থাকেন। সেখানে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের সন্দেহ হলে রহিমা জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
খুলনা পিবিআই প্রধান আরও বলেন, রহিমা বেগম প্রতিটি স্থানেই বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন। আদালত ও আমাদের কাছেও তিনি ভুল ব্যাখ্যা ও তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্ত চলছে। অপহরণের এ ঘটনা মিথ্যা হলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে মঙ্গলবার খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে ও মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দী মহিউদ্দিনের মেয়ে মালিহা মহিউদ্দিন মাহি লিখিত বক্তব্যে বলেন, রহিমা বেগম ও তার সন্তানরা ভীষণ উচ্ছৃঙ্খল। তারা এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছে। তারা একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিবেশীদের শায়েস্তা করছে। কয়েক বছর আগে শরিফুল ইসলাম নামেমাত্র ৮/৯ বছরের এক শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দিয়েছিল। মরিয়মের বাবার তিনটি বিয়ে, ভুক্তভোগী হেলাল শরীফ ও গোলাম কিবরিয়া তাদের প্রথম পক্ষের ছেলে মিজানুর রহমানের কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। এখন সেই জমিই কাল হয়েছে।
মালিহা মহিউদ্দিন মাহি বলেন, রহিমা বেগমের কাছে ব্যাগ, কাপড় চোপড়, ওষুধ, প্রসাধনী সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে। তিনি জন্ম নিবন্ধন পরিবর্তনের জন্য ফরিদপুরে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলেন। যা কোনোভাবে অপহৃত ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া পুলিশ ও আদালতে দেওয়া বয়ানেও পার্থক্য রয়েছে। তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হবে। এ সময় অপহরণ মামলায় গ্রেফতার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, রফিকুল আলম পলাশ ও নুরুল আলম জুয়েল এবং প্রতিবেশী হেলাল শরীফের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার বাড়ির সামনে থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হয়-এ অভিযোগ তুলে তার মেয়ে আদুরি আক্তার বাদী হয়ে পরের দিন দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেন। তারা হলেন- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, তার বড় ভাই মহিউদ্দিন, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল ঘটক, পলাশ, নূর আলম জুয়েল এবং হেলাল শরীফ। পুলিশের কাছ থেকে পরে মামলাটি যায় পিবিআইর হাতে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তিনি তার মায়ের লাশ পেয়েছেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারি থেকে রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে বোয়ালমারিতেই অবস্থান করছিলেন।