অধিকাংশই প্রাণীর মাধ্যমে ছড়িয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বব্যাপী গত ৩০ বছরে নতুন করে প্রায় ২০ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এসব রোগের অধিকাংশই জুনোটিক রোগ বা প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের মাঝে ছড়িয়েছে। জলাতঙ্কও এমনই একটি জুনোটিক রোগ। যা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ২২ লাখ জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহজাদা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জুবাইদুর রহমান।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ২২ লাখ জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেয়া হয়েছে। পূর্বের তুলনায় ভ্যাকসিন প্রদানের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু র্যাবিস আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। আমরা যদি সমন্বিতভাবে কাজ করি তাহলে ২০৩০ সালের আগেই জলাতঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব।
সেমিনারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জুবাইদুর রহমান বলেন, গত ৩০ বছরে নতুন ২০ রোগের আবির্ভাব হয়েছে। এদের অধিকাংশই জুনোটিক রোগ। জলাতঙ্ক একটি অন্যতম জুনোটিক রোগ। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ২০২১ সালে ২২ হাজার কুকুরকে টিকা প্রদান করা হয়। এছাড়াও কুকুর সরাসরি নিধন না করে স্ট্রিট ডগের অভয়ারণ্য নির্মাণের লক্ষ্যে দুই বিঘা জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কল্যাণে দেশে আজ প্রাণিজ আমিষের বিপ্লব ঘটেছে।
এছাড়া সেমিনারে দেশবরেণ্য ভেটেরিনারিয়ান ও প্রফেসর ডা. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা যদি মন থেকে জলাতঙ্ক নিরাময়ে কাজ করে তবে এসডিজি বাস্তবায়নের সঙ্গে জলাতঙ্ক রোগ ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মূল করা সম্ভব।
এ দিন ‘জলাতঙ্ক: মৃত্যু আর নয়, সবার সাথে সমন্বয়’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিবারের মতো বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনে দেশে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ছাড়াও বুধবার দিনভর সভা-সেমিনারসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে প্রাণিসম্পদ অধিফতর। এরমধ্যে সেমিনারে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ও এই রোগ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
ঝবসরহধৎএ দিন সকালে জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বিষয়ক এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিটি সকাল ৯টায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর চত্বর থেকে শুরু হয়ে খামারবাড়ি মোড় ঘুরে পুনরায় একই স্থানে এসে শেষ হয়। এ সময় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দফতর, প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল, আইসিডিডিআর’বিসহ বিভিন্ন দফতর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ জলাতঙ্কের ওপর সচেতনতামূলক নানা প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ও ব্যানার হাতে নিয়ে র্যালিতে অংশ নেন।
বর্ণাঢ্য র্যালিতে নেতৃত্ব দেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহজাদা। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দফতর দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় জলাতঙ্কের ওপর সচেতনতামূলক লিফলেট, পোস্টার ও ব্যানার প্রদর্শন ও বিতরণ করেন।
এদিকে, জলাতঙ্ক নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার। এছাড়া এতে জলাতঙ্ক রোগ ও তা নিরাময়ে করণীয় সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. আবু সুফিয়ান, ডা. মো. আজিজুল ইসলাম ও ডা. সুকেশ চন্দ্র বাদয় প্রমুখ।
ডা. মো. শাহিনুর আলমের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা.এস এম নজরুল ইসলাম, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব এনিম্যাল হেলথের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. নূরে আলম সিদ্দিকী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দফতরের তথ্য কর্মকর্তা ডা. মো. এনামুল কবীর প্রমুখ।