সবুজ কেয়া ঝোপ সবারই দৃষ্টি কেড়ে নেয়
॥ আসগর মতিন ॥
দেখতে আনারস গাছের মতো সবুজ কেয়া গাছের ঝোপ সবারই দৃষ্টি কাড়ে। আনারস গাছের পাতা অতোটা লম্বা হয় না যতটা হয় কেয়া গাছের পাতা। অনেকেই দেখেছেন গাছটা হয়তো নাম জানা নেই। কেয়া গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর গাছ লম্বায় ৩ থেকে-৪ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ গাছের কা- গোলাকার এবং কাঁটাযুক্ত। কাণ্ড থেকে শাখা প্রশাখা বের হয়। এর পাতা ৩ থেকে-৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা এবং ৫-৬ সেন্টিমিটার চওড়া হয়। মজার বিষয় হচ্ছে এর পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল আলাদা রকমের। স্ত্রী ফুল থেকে যখন ফল হয় তা আনারসের মতো দেখায়।
কেয়ার বৈজ্ঞানিক নাম পেন্ডানাস টেকটোরিয়াস (Pandanus Tectorius) । এটি পেন্ডানাস (Pandanus) গণ বা জেনাসের উদ্ভিদ। ফ্যামিলী বা পরিবার হচ্ছে প্যান্ডনাসি (Pandanaceae), বর্গ বা অর্ডার প্যান্ডানালেস (Pandanales), প্রজাতি বা স্পেসিজ হচ্ছে পি. টেকটোরিয়াস (P. Tectorius) আর দ্বিপদী নাম পেন্ডানাস টেকটোরিয়াস (Pandanus Tectorius)। ইংরেজি নাম Thatch Screwpine], Tahitian Screwpine, Hala Tree, Pandanus. সুন্দরবনে হেতাল ঝোপ যেমন আছে, কেয়া ঝোপও আছে। জামতলা বীচসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে আমি দেখেছি কেয়া ঝোপ। আর দেখেছি প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। সেন্ট মার্টিনের শেষ প্রান্তে ছেঁড়া দ্বীপের একটি প্রধান আকর্ষণ এই কেয়া ঝোপ। অনেকেই সেটা দেখতে যায়। সেখানে ফলসহ কেয়া গাছ আমি দেখেছি। এখন শহরে ছাদ বাগান বা বারান্দার টবেও অনেকে লাগান কেয়া গাছে। তবে নাম হয়তো জানা নেই অনেকেরই। টবের গাছগুলো বেশি বড় হতে পারে না।
কেয়া মূলত মালয়েশিয়া, পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের স্থানীয় উদ্ভিদ। সংস্কৃত ভাষায় এটাকে বলে কেতকী। বাংলাতেও এই নাম চলে। কেয়া একটি সুগন্ধি উদ্ভিদ। বিরিয়ানী রান্নাসহ বিভিন্ন রান্নার কাজে কেওড়ার পানি লাগে। এই কেয়া ফুল থেকেই বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় কেওড়ার পানি বা জল (Pandanus Flower Water)।
ভূ-আনত লম্বা সবুজ পাতা, বাদামি কাণ্ডের কেয়ার ঝোপ ঢাকার রমনা পার্কসহ বিভিন্ন উদ্যানে দেখা যায়। মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও এ গাছ আছে। কোন কোন স্থানে রাস্তার মিডিয়ানেও লাগানো হয়েছে এই গাছ। আমাদের দেশে পাঁচ প্রজাতির কেয়া আছে। দেশের সব জেলাতেই পতিত জমিতে কয়েক প্রজাতির কেয়ার ঝোপ দেখা যায়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। দূরতর দ্বীপ থেকে ফল ভাসতে ভাসতে একসময় হয়তো আশ্রয় নিয়েছিল এই দ্বীপে। তারপর চারা গজিয়ে ছেয়ে গেছে পুরো দ্বীপ। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিকের পাড়ে এ গাছ বেশি দেখা যায়। সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন গাছ দেখা যাবে ছেঁড়া দ্বীপে, আগেই বলেছি।
প্রায় প্রতিটি কাণ্ডেই অসংখ্য বায়বীয় মূল আছে, যা গাছকে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। এর ফলে প্রবল বাতাসেও গাছ উপড়ে যায় না। টবের গাছেও এই ঠেস দেখা যায় এবং দেখার আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। মার্চ মাসে পাতার প্রান্ত থেকে ফুল আসে। ফুল ছোট, সাদা ও সুগন্ধী। ফুল স্পাডিক্স মঞ্জরিতে আবদ্ধ থাকে। ফল বৃহৎ, আনারসসদৃশ গোলাকার, পাঁচ থেকে আটটি একত্রে আঁটিবদ্ধ, খাঁজযুক্ত। পাকা ফল কমলাটে হলুদ। বালুকাময় সমুদ্র উপকূল, খালের ভূখ-ের পার্শ্ববর্তী স্থানে জন্মে। বীজ, চোষক মূল ও শাখা কলমে বংশবিস্তার করে। ছোট ছোট শাখা কলম এই গাছের গোড়ায় দেখা যায়। এগুলো আলাদা করে নিয়ে মাটিতে লাগিয়ে দিলে গাছ হয়ে যাবে।
কেয়ার ওষুধী গুণও আছে। কেয়া গাছের পাতা চর্ম রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কেওড়ার পানি বনাতে লাগে, আগেই বলেছি। আরো কিছু রোগে এর পাতা ও মূল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।