কবিতা
বিজন বনে সুরের ধ্বনি
এ কে আজাদ
এইখানে এই মধ্যদুপুর, রৌদ্র করে খেলা,
সুর তুলে যে কোন্ পাখিটা দেয় ভরিয়ে বেলা!
অচেনা এক নৌকা যে বায় জীবন নদীর বুকে।
অজানা এক ঢেউয়ের তালে হৃদয় নাচে সুখে।
নাম জানি না পাখিটার ঐ, গ্রাম চিনি না আমি,
শুধুই ভাবি এ সুর বুঝি সোনার চেয়ে দামি।
হৃদয় বীণায় কি সুর বাজে, কি জানি তার নাম?
কোন্ ঘরে সে বসত করে, কোন্ খানে তার ধাম?
অবাক চোখে চেয়ে দেখি - সুরের পাখি গায়,
ভাটি থেকে সাম্পানে কি উজান পানে ধায়?
কোথায় যাবে, থামবে কোথায় সাধের মাঝি ঐ,
ইচ্ছে করে ডেকে তারে মনের কথা কই।
কি কথা কই, কি জানি কি? কোন্ ভাষাতে ডাকি,
ভাষা আমার নেই তো জানা, কেবল চেয়ে থাকি।
উদাস দুপুর, মিষ্টি নূপুর কার চরণে বাজে?
কোন্ তালে সে সুর তুলে যায় পথিক-হৃদয় মাঝে?
হোক না দূরের, তবু সুরের লহরী যে শুনি,
আপন মনে বিজন বনে বসে যে কাল গুনি!
তোমার সবকিছু
জোবায়ের রাজু
তোমার সবকিছু ভালো লাগে, কোনটা রেখে কোনটা যে বলি;
তোমাকে ভালো লাগার এইসব জরুরি খবর জেনে গেছে
শহরের সব অলিগলি!
তুমি হেঁটে গেলে ধুলির পথে রোদের যে আল্পনা পড়ে,
আমি সেই দৃশ্য তুলে এনে সযতেœ রেখে দিই আমার এই একাকী ঘরে।
তুমি আকাশ দেখলে আমি সব মেঘ দিই সরিয়ে,
তোমার বাগিচায় আমি স্বর্ণলতা হয়ে কেবল যাই জড়িয়ে।
যদি দুপুরের কোলাহল থেমে যায় তোমার এই নিভৃত মফস্বলে,
দূর থেকে আমি এক ছন্নছাড়া নবাব হয়ে
স্লোগান তুলি তোমার মিছিলের দলে।
নির্যাতিত প্রতীক্ষা
সাজু কবীর
রক্তরাঙা ভালোবাসা তার বিপন্ন নগরে
অহর্নিশ খুন হয়। লুট হয় তল্লাটে তল্লাটে
নির্ঘুম ঘামের গতর বেয়ে বেয়ে দাঁড়ানো
নাগরিক-গোলাঘর। মধ্যযুগের ফসিল
হতে জেগে ওঠা একদল স্খলিত দুর্বৃত্ত
'বৈধতাপত্র’ পকেটে নিয়ে নিত্য আয়োজন
করে ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ'র কনসার্ট।
প্রিয়া, নাগরিকমনে মর্মান্তিক বিষজ্বালা!
যুগ যুগ ধরে এ ঘোর অন্ধকারে আমাদের
নির্যাতিত প্রতীক্ষা;
আজও মেলেনি আলোফোটা সুবহে সাদিকের দেখা।
পাখিরা কথা কয়
সাইফ আলি
পাথর চুপ থাকে পাখিরা কথা কয়
পাখিরা কথা কয় শিকারী গুলি ছোড়ে
শিকারী গুলি ছোড়ে পাখির লাশ পড়ে,
পাখির লাশ পড়ে, পাখির লাশ পড়ে...
হঠাৎ একদিন পাথর কথা কয়,
পাখিরা চুপ থাকে পাথর কথা কয়!
সবাই বিস্ময়ে লাশের চারপাশে সেদিন জড়ো হয়,
কিভাবে চুপ থাকে পাখিরা আর সব
পাথর কথা কয়!?
পাথর চুপ থাকে পাখিরা কথা কয়
পাখিরা কথা কয় শিকারী গুলি ছোড়ে...
নিকোটিন এবং তুমি
শ্যামল বণিক অঞ্জন
নিকোটিন এবং তুমি
যেন একই মুদ্রার এপিঠ- ওপিঠ!
প্রাণঘাতি ব্যধিতে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও-
মানুষ আসক্ত হয় নিকোটিনে,
তেমন করেই আমারও আসক্তি তোমাতে
অথবা তথাকথিত তোমার প্রেমাবেগে।
নিকোটিন আর তুমি সমার্থক
তিল তিল করে পৌঁছে দিচ্ছো মৃত্যুর দ্বারে
খুবলে খাচ্ছ পরম তৃপ্তিতে এই হৃদপি-টা।
অবিরত রক্তক্ষরণ,
তীব্র ব্যথায় ছটফট করি প্রতিক্ষণ আড়ালে।
নিকোটিন এবং তুমি-
যেন সাইলেন্ট কিলার ক্যানসার ব্রংকাইটিস
ঠিক আমার অকাল মৃত্যুর পয়গাম।
কান্না
আজহার মাহমুদ
শব্দ ছাড়া কান্না করি আমি
কান্না করি বালিশে মাথা রেখে,
আমার কান্না কেউ না দেখলেও
ভেজা বালিশটা অনেকেই দেখে।
কান্নায় আমার চোখের জল শুকিয়ে যায়
তবুও কান্নার কারণ পাই না খুঁজে,
কারণ ছাড়াই আমি রোজ কান্না করি
সেটা হোক বুঝে কিংবা না বুঝে।
রুমাল
জহুরুল ইসলাম
সুগন্ধি রুমাল ঝুলে আছে,
মেঘ কাঁদে অবিরাম।
জলে অন্তর পোড়া গন্ধ ভাসে বাতাসে।
আকাশের মতো রুমাল,
বারোমাসি বৃষ্টিতে ভেজে।
আশ্বিনের মেঘের মতো উড়ে যায়,
আরেক আকাশে।
প্রজাপতি ডানা মেলে।