সোমবার ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

শিকা সত্যিই শিকায় উঠেছে!

শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ): শিকা গ্রাম বাংলায় গ্রামীণ বধূদের নিপুণ হস্তশিল্পের একটি শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। শিকা এক প্রকার লোকশিল্প। মেয়েরা এ শিল্পের রূপকার। সাধারণত পাট দিয়ে এটি তৈরি করা হয় এবং এতে যখন বিভিন্ন রকম কারুকার্য করা হয়, তখন একে বলা হয় নকশি শিকা। বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই শিকার ব্যবহার ছিল। ঘরের আড়া বা সিলিং-এ শিকা বেঁধে তাতে খাদ্যদ্রব্যসহ সংসারের নানা জিনিসপত্র ঝুলিয়ে রাখা ব্যবস্থা ছিল। 

শিকা গৃহস্থালি কাজের জন্য নির্মিত হলেও তার মধ্যে শিল্পীর কারুচাতুর্য এবং সৌন্দর্য চেতনারও প্রকাশ ঘটে। পুঁতি, কড়ি, মাটির গোলাকার ঢেলা ইত্যাদির সাহায্যে শিকায় নকশি করা হয়। এর গ্রন্থিবৈচিত্র্য ও অলঙ্করণ-প্রক্রিয়া একটি অভিনব ব্যাপার। এতে বিভিন্ন রকম গ্রন্থি ব্যবহার করা হয়, যেমন মাউরা গিরা, রসুন গিরা, পাগড়ি গিরা, দামান গিরা, টাহা (টাকা) গিরা, বড়শি গিরা, ঝুঁটি গিরা, সুপারি গিরা ইত্যাদি। এর সঙ্গে যেসব অলঙ্করণ যুক্ত হয় সেগুলি হচ্ছে সিকি, টাকা, হাতির কান, ডালিম ইত্যাদি। কোনো কোনো শিকায় অষ্টদলপদ্ম ও কদমফুলের অলঙ্করণও দৃষ্ট হয়। শিকা গ্রাম বাংলায় গ্রামীণ বধূদের নিপুণ হস্তশিল্পের একটি শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। শিকার ছিল বহুমুখী ব্যবহার। পল্লী বধূরা শিকায় ঝুলিয়ে রাখতো সংসারের বিভিন্ন জিনিস। মাঝে মাঝে রঙিন শিকেয় ঘরের মাঝে নতুন হাঁড়ি ও অন্যান্য জিনিস সারি সারিভাবে ঝুলিয়ে রাখতো। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাচাবাড়ির পরিবর্তে পাকাবাড়ি নির্মিত হওয়ায় মানুষের রুচির পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে আজ সে শিকা সত্যিই শিকায় উঠে গেছে!

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ