লালমনিরহাটে সাংবাদিকের উপর হামলা ॥ ক্যামেরা ভাংচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন

লালমনিরহাট সংবাদদাতা : পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পৃথক পৃথক ঘটনায় দুর্বৃত্তদের হামলায় লালমনিরহাটে ৫ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এরই প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুরে জেলার কর্মরত সকল সাংবাদিক মিশন মোড় চত্বরে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে অংশ নেয়া সাংবাদিকগণ পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আমাদের ভাই-সহকর্মীরা সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে অথচ দোষী ব্যক্তিদের এখনো আইনের আওতায় আনা হয়নি? আমরা দোষী ব্যক্তিদের রাজনীতি'র পরিচয় জানতে চাইনি, আমরা অপরাধীর বিচার চেয়েছি। অনতিবিলম্বে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসেন। তা-না হলে জেলার কর্মরত সকল সাংবাদিক কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। সাংবাদিক বক্তাগণ আরো বলেন, সাংবাদিকরা হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তারা দেশের/সমাজের অবহেলিত জনগণের সুখ-দুঃখ, দুর্দশা রাষ্ট্রের নিকট তুলে ধরে। তাই আজ তাদের কন্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য এই হামলা করা হয়েছে। উল্লেখ্য গত শুক্রবার সন্ধ্যায় আহতদের লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন: যমুনা টিভি'র লালমনিরহাট প্রতিনিধি আনিছুর রহমান লাডলা ও ক্যামেরা পার্সন আহসান হাবিব, প্রথম আলো'র লালমনিরহাট প্রতিনিধি আব্দুর রব সুজন, এখন টিভি'র মাহফুজুল ইসলাম বকুল ও দৈনিক আজকের পত্রিকার হাতীবান্ধা প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম রবি।
স্থানীয়রা জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজার রহমান মন্ডলের ছোট ছেলে ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি দুই সন্তানের জনক সুলতান মন্ডল (৩৮) প্রতিবেশী এক গৃহবধূর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। কয়েক দিন আগে সেই গৃহবধূকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হন সুলতান মন্ডল। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সে ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থলে যান ৪ সাংবাদিক। তথ্য সংগ্রহ শেষে সুলতান মন্ডলের বাড়ির পাশে হঠাৎ তাদের পথরোধ করেন আজিজার রহমান মন্ডল ও তার বড় ছেলে সাহেদ মন্ডল। এ সময় সাহেদ মন্ডল সাংবাদিকদের হাতে থাকা ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভাংচুর করেন এবং টাইফোর্ট দিয়ে সাংবাদিকদের এলোপাতারি মারপিট শুরু করেন। পরে স্থানীয়রা আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে ভর্তি এখন টিভি'র লালমনিরহাট প্রতিনিধি মাহফুজুল ইসলাম বকুল বলেন, তথ্য সংগ্রহ শেষ করে গাড়িতে উঠার পরপরেই হঠাৎ সাহেদ মন্ডল এসে পথরোধ করে ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন। কিছু বুঝে উঠার আগেই টাইফোর্ট দিয়ে আমাদেরকে এলোপাতারি মারপিট শুরু করেন। এ ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে। সুস্থ হলে লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে।
খবর পেয়ে হাসপাতালে সাংবাদিকদের দেখতে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। এ সময় তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের হলেও তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ দিকে একই দিন দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের রাস্তার ধারে সরকারি একটি গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন ওই এলাকার সাবেক পুলিশ সদস্য আনোয়ার হোসেন। তার ছবি তুলতে গিয়ে আনোয়ার হোসেনের হামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক আজকের পত্রিকার হাতীবান্ধা প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম রবি। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দাসহ অভিযুক্তদের গ্রেফতার দাবি করেছেন বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম লালমনিরহাট জেলা ইউনিটের সভাপতি খোরশেদ আলম সাগর এক বিবৃতিতে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে সাংবাদিকরা।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বসহকারে কয়েকটি টিম কাজ করছি, ট্রাইপট, ক্যামেরা উদ্ধার করেছি। খুব তাড়াতাড়ি আসমীদেরকে গ্রেফতার করা হবে।