বাড়তি উৎপাদন খরচে দিশেহারা আমন চাষিরা
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি : জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের কারণে মুখের হাসি হারিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জ জেলার কৃষকদের। সারা বছরের জীবিকা নির্বাহের প্রধান দুই মৌসুমের একটি এই আমন মৌসুম চলছে এখন। শুধুমাত্র তেলের বাড়তি দামের কারণে একদিকে যেমন জমিতে সেচ নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে ডিজেল চালিত সেচ মালিক এবং কৃষকদের মাঝে। অন্যদিকে জমি তৈরি করার জন্য ট্রাক্টর মালিকদের সাথেও বনিবনা বিষয়ে চলছে দেনদরবার। আবার গতবছরের তুলনায় এ বছরের বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে কৃষক সময় মত পানির অভাবে জমি তৈরি করতে তাদের হোঁচট খেতে হচ্ছে। তেলের দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে ডিজেল চালিত সেচ মালিকগণ এবং ট্রাক্টর মালিকগণের ব্যবহারে কৃষকগণ রিতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কেননা প্রথমত কৃষক ডিজেল চালিত সেচ মালিকদের সাথে কথা বলে দর কষাকষি শেষ হলেও ট্রাক্টর এর মাধ্যমে জমি তৈরি করার ব্যাপারে ট্রাক্টর মালিকদের সাথেও দর কষাকষি করতে হয় । তারপর জমি তৈরি হয়ে গেলে জমিতে ধান লাগানো খরচ সেটাও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষক। এভাবে সবকিছুতেই দাম বাড়ার কারণে আমন মৌসুমে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে অনেক।
জেলার কারখন্দে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোরো মৌসুমে ধান লাগানোর জন্য কৃষকদের মাঝে ইচ্ছে থাকলেও ডিজেল চালিত সেচ মালিকগন নতুন করে দর কষাকষি শুরু করেছেন। আবার জমি তৈরি করার জন্য ট্রাক্টর মালিকগণ আগে যেখানে ২৫-৩০ টাকা শতক নিয়েছেন এখন সেখানে ৪০-৪৫ টাকা শতক চাইছেন বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে জানা যায় যে, ইউরিয়া প্রতি কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমানোর জন্য। কেননা প্রতি শতকে কৃষকেরা এক থেকে দেড় কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করে। যদি প্রতি শতকে ৭৫০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম ব্যবহার করলেই ভালো ফসল পাবেন কৃষক। এছাড়া ডিআইবি সারের দাম প্রতি কেজি ২৫টাকা থেকে ৯টাকা কমিয়ে ১৬ টাকা কেজি রাখা হয়েছে যাতে কৃষক ইউরিয়া সার কম ব্যবহার করে ডিএপি সার বেশি ব্যবহার করেন।
কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল এবং বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ট্রাক্টর মালিক আল-আমিন এবং রমজান আলী জানান গত বছর আমরা ২৫-৩০টাকা শতক চাষ দিয়েছি। কিন্তু এ বছর ডিজেল এবং ট্রাক্টরের যন্ত্রপাতির খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে যার কারণে আমরা পেরে উঠতে পারছি না । এজন্যই এ বছরে প্রতি শতক ৪০ থেকে ৪৫ টাকা করে চাষবাবদ খরচ নিলে আমাদের কিছু লাভ থাকবে।
চরটেংরাইল গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম জানান, এ বছরে যে পরিমাণ আমন ধান উৎপাদনে ব্যয় বাড়ছে সেক্ষেত্রে ধানের মণ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, অন্য কোন কাজ করিনা চাষাবাদই একমাত্র ভরসা বাপ দাদার যতটুকু জমি আছে সেগুলোই চাষাবাদ করে সারাবছর চলার চেষ্টা করি।
আমন মৌসুমের ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত জানান, কামরখন্দ উপজেলায় এ বছরে ৫ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন হয়ে গিয়েছে। সারের কোন সংকট নেই। সারের বাজার নিয়মিত মনিটরিং এর উপরে রাখা হচ্ছে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে এই আমন মৌসুমে আশা করি।