রবিবার ০২ এপ্রিল ২০২৩
Online Edition

গঙ্গা পানি চুক্তির সুফল বাংলাদেশ পায়নি -----ফারাক্কা কমিটি

 

স্টাফ রিপোর্টার: তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে বক্তারা বলেছেন, গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছরের চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। কিন্তু এই চুক্তির সুফল দেশের মানুষ পায়নি। কারণ চুক্তির শর্ত অনুসারে পানি আসেনি। তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনার উপর ২০১১ সালে চুক্তি হবার কথা থাকলেও এখনো হয়নি এবং দুই দশকের বেশী একতরফাভাবে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা ব্যারেজ থেকে শুষ্ক মৌসুমের পুরো পানি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এদিকে এখন বর্ষাকালে ব্যারেজের সকল গেট খুলে দেয়ায় নিলফামারি, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাতে চলছে বন্যা এবং ভাংগন। ভারত উজানে ৫২টি নদীতে বাঁধ দিয়েছে।  

গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এইসব কথা বলেন।  সভায় বক্তব্য রাখেন, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির চেয়াম্যান আতিকুর রহমান সালু, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. এস, আই খান, ফারাক্কা কমিটির বাংলাদেশ চাপ্টার প্রধান সময়ন্বকারী সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, কমিটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, সিনিয়র সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ,  বাংলাদেশ চাপ্টারের কালাম ফয়েজী প্রমুখ। 

গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছরের চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। কিন্তু এই চুক্তির সুফল দেশের মানুষ পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান সালু। তিনি বলেছেন, চুক্তির শর্ত অনুসারে ভারত পানি দেয়নি। তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনার উপর ২০১১ সালে চুক্তি হবার কথা থাকলেও এখনো হয়নি। দুই দশকের বেশি একতরফাভাবে পশ্চিমবঙ্গের গজল ডোবা ব্যারেজ থেকে শুষ্ক মৌসুমের পুরো পানি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এদিকে এখন বর্ষাকালে ব্যারেজের সকল গেট খুলে দেওয়ায় নীলফামারি, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাতে চলছে বন্যা ও ভাঙ্গন। তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলের সাম্প্রতিক বন্যা সেখানকার জনগোষ্ঠিকে আচমকা আঘাত হেনে জান ও মালের বিপুল ক্ষতি করেছে। ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ বন্যা এমন একসময় এসেছে যখন বাংলাদেশে স্বাভাবিক বর্ষার জন্য হাহাকার চলছিল। আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি মনে করে, মেঘালয় ও আসাম এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অপরিনামদর্শী উন্নয়ন কর্মকা-ের ফলে এই বন্যা সর্বগ্রাসী রূপ নেয়। সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা থাকলে এ বিপর্যয়ের অনেকখানি এড়ানো যেত। তিনি বলেন, আমরা মনে করি তিস্তা অববাহিকার মানুষকে বাঁচানো এবং তাদের জীবন-জীবিকার উন্নয়নের জন্য টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এর আগে তিস্তায় একটি পানি ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার মহাপরিকল্পনায় ৯৮৭.২৭ মিলিয়ন ডলার (দশ হাজার কোটি টাকা) ঋণ প্রস্তাব দিয়েছে চীন।  

 

চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কো অপারেশন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়। কাজ শুরু হবার কথা ছিল ২০২১ সাল থেকে। কিন্তু এখনো শুরু হয়নি। প্রকৃতির স্বাবাভিক নিয়মে উজানে যখন নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে দেবার তাগিদ আসবে তখন বাংলাদেশের তিস্তা অংশ নতুন জীবন ফিরে পাবে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

জাতিসংঘের সাবেক পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. এস আই খান বলেন, ২০২৫ সালে ভারতের সর্বমোট পানির প্রয়োজন হবে ৯শ’ বিসিএম। এর বিপরীতে ভারতের পানি পাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে ছয় হাজার ৩৭৩ বিসিএম। অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়ে ভারতের সাত গুণ বেশি পানি রয়েছে। তাই নদীতে বাঁধ বা ব্যারেজ দিয়ে উজানে বাংলাদেশের পানি সরানোর প্রয়োজন হয় না।

 ড. এস আই খান বলেন, ভারত অনেকগুলো প্রকল্পের মাধ্যমে উজানে ড্যাম ও ব্যারেজ তৈরি করে বাংলাদেশের পানি ভারতের মরু অঞ্চল হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাট, দক্ষিণাত্য ও বিভিন্ন অঞ্চলে সরিয়ে নিচ্ছে। এতে বাংলাদেশের নদীগুলোতে প্রবাহ কমে গেছে এবং পানি নদীর তলানি হিসেবে থাকছে না। ফলে সাগরের লোনা পানি ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না এবং নিচু ভূমিকে প্লাবিত করে পাতাল পানিকে রিচার্জ করা যাচ্ছে না। এসব কারণে অনেক স্থানে নলকুপে খাবার পানি ও সেচের পানি উঠছে না। ফলে লবাণাক্ততা এবং পানির অভাবে গাছ-পালা, পশুপাখি সব মরে যাবে, জীব-বৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে ১৭ কোটি মানুষ কঠিন ও নির্মম দারিদ্র্যে নিপতিত হবে।

আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি-আইএফসির সুপারিশ, উল্লেখিত মহাপরিকল্পনাকে আরেকটু বাড়িয়ে বাংলাদেশে ভিস্তার পুরোনো মূল অববাহিকায় অবস্থিত আত্রাই করতোয়া এবং পুনর্ভবা নদী এর আওতায় আনা গেলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। এই পরিকল্পনা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করে নদীকে জীবিত রাখার প্রচেষ্টার বিকর নয়, তবুও বন্যা ভাঙ্গনের ক্ষয়ক্ষতি লাঘব ও সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের এই প্রচেষ্টা সফল হতে পারে। প্রকৃতির স্বাবাভিক নিয়মে উজানে যখন নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে দেবার তাগিদ আসবে তখন বাংলাদেশের ভিস্তা অংশ নতুন জীবন ফিরে পাবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ