রবিবার ০২ এপ্রিল ২০২৩
Online Edition

দেশের পুরো পাওয়ার সিস্টেম ভুল পথে 

স্টাফ রিপোর্টার: ‘বিশ্ব জ্বালানি সংকট ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের পুরো পাওয়ার সিস্টেম ভুল পথে রয়েছে। পৃথিবীর সব দেশেই বাজার দরের সঙ্গে জ্বালানির দাম ওঠা-নামা করে থাকে। যুদ্ধের কারণে তেলের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা আমরা জানি না। ‘তেলের বিষয়ে কোনও সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে প্রাইসিং। তেলের টাকা অন্য খাতে যাবে কেন? অ্যাডমিনিস্ট্রেট প্রাইস ওভাবে তো হয় না। এখন যে লোডশেডিং হচ্ছে, তাও সিস্টেমিক সমস্যা। দেশের পুরো পাওয়ার সিস্টেম ভুল পথে রয়েছে। বিপিসি যে প্রক্রিয়ায় জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করছে তা সঠিক নয়।’ গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের বৈঠকে এসব কথা বলেছেন বক্তারা। সংগঠনটির সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন সরকারের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।

আলোচনার সূত্রপাত করেন এডিটরস গিল্ডের অন্যতম সদস্য এবং ‘পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি’র সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কোনও বিকল্প নেই, এটা সবাই স্বীকার করছে। কিন্তু আমাদের কি এলএনজি আমদানির সক্ষমতা আছে? আমাদের নিজস্ব সম্পদ উত্তোলন করতে হবে। এগুলো উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। গ্যাস-কয়লার অনুসন্ধানে মনযোগ দিতে হবে।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘তেলের বিষয়ে কোনও সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে প্রাইসিং। তেলের টাকা অন্য খাতে যাবে কেন? অ্যাডমিনিস্ট্রেট প্রাইস ওভাবে তো হয় না। এখন যে লোডশেডিং হচ্ছে, তাও সিস্টেমিক সমস্যা। দেশের পুরো পাওয়ার সিস্টেম ভুল পথে রয়েছে। বিপিসি যে প্রক্রিয়ায় জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করছে তা সঠিক নয়।’

এর জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানান, সরকার যে সিদ্ধান্ত দেয়, সে অনুযায়ী কাজ করেন তারা। তিনি বলেন, ‘বিপিসিতে দুর্নীতির কোনও সুযোগ নেই। বিপিসি এখন লাভ করছে- অনেকেই এমন কথা বললেও এখনও ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ রয়ে গেছে।’

অর্থনীতিবিদ ও পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই বাজার দরের সঙ্গে জ্বালানির দাম ওঠা-নামা করে থাকে। যুদ্ধের কারণে তেলের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা আমরা জানি না। গ্যাসের দামও কমবে। প্যানিক হওয়ার কিছু নেই। তিন থেকে চার বছর সতর্কভাবে চলতে হবে।

পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে জ্বালানির দাম অটোমেটিক সম্বনয় করা গেলে ভালো হতো।

তবে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও সাবেক বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ, ‘বাংলাদেশের বাস্তবতায় তেল-গ্যাসের দাম বারবার বাড়ানো-কমানো সম্ভব নয়। বহির্বিশ্বের চেয়ে দেশে দাম কম, সেজন্য এটি করা যাচ্ছে না।’ বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে ব্যাপকভাবে সৌর বিদ্যুত এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।

অপচয় কমিয়ে কৃষিতে সৌরবিদ্যুতের উপর নির্ভশীলতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার আব্দুস সালেক খন্দকার আবু সালেকও। তিনি বলেন, ‘আমাদের চুরি ও জালিয়াতি কমাতে হবে। কয়লা ও সৌর বিদ্যুতের দিকে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে অপচয়ও কমাতে হবে।’

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, বিএনপি গ্যাস এক্সপোর্ট করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। তাতে আন্তর্জাতিক বাজারে নেতিবাচক বার্তা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে, ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র জয় করেছি।  

 

পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করতে পারলে দেশে দাম আরও বাড়বে। উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে অবশ্যই এটি করতে হবে। আমাদের ত্যাগ শিকার করতে হবে। 

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, চাহিদাও বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাদ দিলেও ২০৩০ সালের পরে বিশ্বে ইলেকট্রিক গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি চলবে না। আগামী ৫-১০ বছরে তেলের দাম কমবে-বাড়বে। গ্যাসের দাম আস্তে আস্তে কমবে। হায় হায় করে লাভ নেই।’

 ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জ্বালানি উত্তোলন করে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশের যে অবস্থা তাতে হতাশ হওয়ার কথা না। আমাদের ল্যাকিংস না থাকলে অনেক এগিয়ে যেতাম। এতদিন আমরা ৯৮টি গ্যাসকূপ খনন করেছি, তাতে ২৮টি গ্যাসফিল্ড পেয়েছি। যে পরিমাণ গ্যাস এক্সপ্লোশন হওয়া দরকার তা হয়নি।’

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এনার্জির চাহিদাকে অ্যাডজাস্ট করতে হবে। দেশের অনেক জায়গায় বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকে না। লোড ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখতে হবে। তবে সামনে শীত আসছে, ভয়ের কারণ নেই।’

জ্বালানির দাম প্রতিনিয়ত বাড়ালে সমস্যা আরও বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একবার তেলের দাম বাড়িয়ে সোলারে যেতে পারলে সুবিধা হতো। পাশের দেশ থেকেও আমদানি করা যেতে পারে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনেও জোর দিতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ