মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

হারিয়ে যাচ্ছে ধানের গোলা

মঈন উদ্দীন, ডুমুরিয়া খুলনা থেকে : গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ এই প্রবাদটি বহুল প্রচলিত ছিল। গোয়াল, পুকুর থাকলেও গ্রাম বাংলার সমৃদ্ধি ও প্রভাব প্রতিপত্তির প্রতীক গোলা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। পত্র/পত্রিকা, বইয়ের পাতায় স্থান করে নিচ্ছে। 

গোলা উঁচু মাচা/মেঝের উপর, কাঠের ফ্রেম/ কাঠামোর সাথে, বাঁশের চটা/বাতা দিয়ে, নারকেলের ছোবড়া থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি মোটা কাতা/সুতা দিয়ে শিল্পীর/কারিগরের সুনিপুণ হাতে বুনা গোলাকার ঘর। যার ছাউনি গোল পাতা, টিন বা খড় দিয়ে। টিনের চৌকা আকৃতির গোলাঘরও দেখা যায়। গোলা ঘরের দরজা বিশেষ কায়দায় বানানো উপরের দিকে। ভিতরে প্রবেশ করতে সিঁড়ি বা মই সাঁটা থাকে। আবার বাঁশ দিয়ে বানানো গোলায় এঁটেল মাটির কাদা লেপ্টে দেওয়া হত। ইঁদুর বা শত্রুর হাত থেকে খাদ্যশস্য নিরাপদ রাখতে লাগানো হয় তালা। ২৫-৫০ পর্যন্ত ধান রাখা যায়। এ ছাড়াও চাউল, গম, ভুট্টা, নারকেল, সরিষা, মাষকলাইসহ নানাজাতের খাদ্যশস্য নিরাপদ সংরক্ষণ করা হতো। গোলায় রাখা খাদ্যশস্য নিরাপদ ও গুণ মান ভালো থাকে। গোলাঘরের নিচের ফাঁকা অংশে হাঁস, মুরগি ও ছাগল পালন হত যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদার পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখতো। 

এ ব্যাপারে কলামিস্ট, লেখক, কবি, ডুমুরিয়া মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল কাদের খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে জমিদার ভূস্বামীরা সবাই গোলায় ধান রাখতো। এখন জমিদারিও নাই ভূস্বামীরাও নাই, আধুনিক সভ্যতা ও যত্রতত্র ঘর বাড়ি, বাজার, মিল কলকারখানা তৈরির ফলে আবাদি জমি কমে গেছে। আমার পূর্বপুরুষদের জমিদারী ছিল। অনেকগুলো গোলা ছিল। শুধু নারকেল রাখতে ৮টি গোলা লাগতো। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডুমুরিয়া উপজেলা সাবেক কৃষি কর্মকর্তা, খুলনা জেলার অতিরিক্ত পরিচালক শস্য মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, গোলায় খাদ্যশস্য রাখলে গুণগত মান ভালো থাকে। তবে কারিগর সংকটে এখন গোলা তৈরি হচ্ছে না। যে কারণে শিল্পটি হারিয়ে যাচ্ছে। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ