চির চেনা নিম গাছের সৌন্দর্য কিন্তু কম নয়

॥ আসগর মতিন ॥
নিম আমাদের পরিচিত একটি গাছ। শহরে গ্রামে সবখানেই দেখা যায়। একে বলা হয় বহু বর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। আকৃতিতে ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হতে সময় লাগে ১০ বছর। নিম গাছ সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে ভাল হয়। নিম একটি সাধারণ বৃক্ষ হয়েও এর নানা গুণের কারণে এটি হয়ে উঠেছে অসাধারণ একটি গাছ। নিমের গুণের শেষ নেই। নিমের এই গুণাগুণের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একুশ শতকের বৃক্ষ বলে এটিকে ঘোষণা করেছে। নিমের বৈজ্ঞানিক নাম আজাদিরাচতা ইন্ডিকা ( Azadirachta indica) এটি সেপিন্ডালেস (Sapindales) অর্ডার বা বর্গের ও মেলিয়াসি (Meliaceae) পরিবার বা ফ্যামিলির বৃক্ষ। জেনাস বা গণ হচ্ছে আজাদিরাচতা (Azadirachta) ও প্রজাতি বা স্পেসিজ হচ্ছে এ, ইন্ডিকা (A. indica) । ইংরেজি নাম নিম ট্রি।
নিম একটি ঔষধি গাছ বলে এর ডাল, পাতা, রস সবই মানুষের কাজে লাগে। এর কা-ের ব্যাস ২০-৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। ডালের চারদিকে ১০-১২ ইঞ্চি যৌগিক পত্র জন্মে। পাতা কাস্তের মত বাকানো থাকে এবং পাতার কিনারায় ১০-১৭ টি করে খাঁজযুক্ত অংশ থাকে। পাতা ২.৫-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতার বিন্যাস এত সুন্দর যে বহু শহরে রোড সাইড ট্রি হিসেবে এর ব্যবহার আছে। আমি ভারতের কলকাতা, দিল্লি, শিলিগুড়ি ও দীঘায় রাস্তার ধারে অনেক নিম গাছ দেখেছি। ঢাকায় রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান , রামপুরা রোড, সবুগবাগ খিলগাঁওসহ বিভিন্ন সড়ক ও এলাকায় এবং চট্টগ্রামের বেশ কিছু সড়কের পাশে নিম গাছ দেখেছি। রোড সাইড ট্রি হিসেবে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাসা বাড়ির টবেও নিমের চারা জন্মে, তবে এগুলো বেশি লম্বা হতে পারে না। সাধারণত নিম গাছ বেশ দীর্ঘ হয়, ফলে নিমের পাতা সংগ্রহে হিমসিম খেতে হয়। নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক বা দাঁতন বানানো হয়। সেই আদি কাল থেকে এটা চলে আসছে, এখনো ব্যবহার ব্যাপকই বলা যায়। নিম গাছে আঙুরের মতো দেখতে ফল হয়। জুন-জুলাইতে ফল পাকে এবং কাঁচাফল তেতো স্বাদের হয়। তবে পেকে হলুদ হওয়ার পর মিষ্টি হয়। পাখি এই ফল খায়। নিম গাছ প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় লাগে ১০ বছর। নিম গাছ সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে ভালো হয়। মাটির পিএইচ ৬.২-৮.৫ এবং বৃষ্টিপাত ১৮-৪৬ ইঞ্চি ও ১২০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা নিম গাছের জন্য উপযোগী। নিমের পাতা থেকে বর্তমানে প্রসাধনীও তৈরি হচ্ছে। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকরী। নিমের কাঠ খুবই শক্ত হয়। এই কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না। পোকা বাসা বাঁধে না। উইপোকা খেতে পারে না। এই কারণে নিম কাঠের আসবাবপত্রও বর্তমানে তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই বাদ্যযন্ত্র বানানোর জন্য এর কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি একটি অর্থকরী বৃক্ষ।
নিমের উৎপত্তি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকাতে। এর আদিবাস মিয়ানমার। ভারত এবং বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই নিম গাছ জন্মে। নিমের পাতা, ফল, ছাল বা বাকল, তেল, বীজ সমস্ত অংশই ব্যবহার করা যায়। বিশ্বব্যাপী নিম গাছ, গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশ্বে নিমের কদর কিন্তু এর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহারের জন্য। নিম ছত্রাকনাশক, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসরোধক হিসেবে, কীট-পতঙ্গ বিনাশে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে, দন্ত চিকিৎসায়, ব্যথামুক্তি, জ্বর কমাতে এবং আরো বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।