মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

পিরোজপুর বাইপাস রোড যেন এক ডেঞ্জার জোন

পিরোজপুর সংবাদদাতা: পিরোজপুর নতুন বাস স্ট্যান্ডের সামনের বাইপাস রোডের দু'পাশে গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন দূরবর্তী শহরগামী  দূরপাল্লার পরিবহনের অসংখ্য কাউন্টার। মাত্র পঁচিশ ফিট চওড়া বাইপাস সড়কের দু'পাশে গড়ে ওঠা কাউন্টারগুলোর গাড়ি রাখার নিজস্ব কোন জায়গা নেই। কাউন্টারগুলো যাত্রী উঠানো নামানো এবং পরবর্তী সময়ে ছাড়ার জন্যে অপেক্ষমান গাড়িগুলো রাস্তার দু'পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখে। দু'পাশে গাড়ি রাখার ফলে মাঝখানে দিয়ে খুব সরু একচিলতে পথ দিয়ে স্থানীয় বাস, দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, বিআরটিসি বিভিন্ন প্রকার যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হয়। ওই স্থান দিয়ে সাধারণ মানুষ, আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী পারাপারের সময় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এখানে সব সময় জ্যাম লেগেই থাকে। এই ছোট্ট সরু পথ দিয়েই আবার দ্রুতগতির মোটরসাইকেলগুলো ফুসফাঁস করে চলে যায়। এই স্থানের অব্যবস্থাপনা দেখলে এসব নিয়ন্ত্রণের কোন কর্তৃপক্ষ আছে বলে মনে হয় না। এরকম একটি ব্যস্ততম রাস্তায় না আছে স্পিড ব্রেকার না আছে কোন ট্রাফিক পুলিশ। আধা কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রাস্তার দু'পাশে বাস দাঁড়িয়ে থাকার ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলের কোন উপায় থাকে না। উল্লেখ্য, ওই একই রাস্তা দিয়ে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের অর্থাৎ রাজশাহী, যশোর, বেনাপোল, খুলনা থেকে বরিশাল এবং কুয়াকাটাগামী বাস-ট্রাক, অটোরিক্সা এবং বিভিন্ন প্রকারের গাড়িগুলো যাতায়াত করে। প্রায়সময়ই রাস্তার উপরে গাড়ির জট লেগেই থাকে। এত অপ্রশস্ত রাস্তার উপরে বড় বড় বাসগুলো দাঁড়িয়ে থাকার কারণে পথচারীরা রাস্তা পারাপারের সময় দু’ দিক থেকে আসা যানবাহনের গতিবিধি কিছুই দেখতে পারে না। ফলে এখানে প্রায় নিয়মিত ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। 

বাস টার্মিনাল থাকতে পরিবহন বাসগুলো কেন রাস্তার উপর রাখা হয় এমন প্রশ্ন করা হলে পিরোজপুর বাস শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মোঃ হান্নান শেখ জানান, পিরোজপুরে ১৭০ জন মালিকের দুই শতাধিক গাড়ি রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন নামের ব্যানারে পরিবহনের শতাধিক গাড়ি রয়েছে। তিনি জানান, পিরোজপুর বাস টার্মিনালে শখানেক গাড়ি রাখার মত স্থান আছে, কিন্তু বর্তমানে গাড়ির সংখ্যা তিন শতাধিক। এ কারণে পরিবহন বাসগুলোকে টার্মিনালের ভিতরে জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।  এ কারনে তাদের রাস্তার উপরে গাড়ি রাখতে হচ্ছে। তিনি এ সমস্যার সমাধানের জন্য নতুন বাস টার্মিনালকে আরো বড় করা অথবা পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে পরিবহন বাসগুলো রাখার ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দেন। 

নতুন বাসস্ট্যান্ডের পাশেই আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের মসজিদ, কিন্ডারগার্টেন, মাদরাসা, এতিমখানা, হেফজখানা, কলেজসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান এর বিপরীত দিকেই রয়েছে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ডাক দিয়ে যাই নামের একটি এনজিওর প্রধান কার্যালয়। এসকল প্রতিষ্ঠানের শত শত ছাত্র ছাত্রী এবং আশেপাশের আবাসিক এলাকাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত শত শত মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয়। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন কিন্ডারগার্টেন, মাদরাসা এবং হেফজখানার ছোট ছোট কোমলমতি বাচ্চাদের রাস্তা পার হতে হয় তখন। বাইতুল হামদ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শওকত আলী জানান, এখানে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মুসল্লিরা মসজিদে যাতায়াত করেন, রাস্তার মুখে গাড়ি রাখার কারণে দু'পাশে কিছু দেখতে পাওয়া যায় না, ফলে প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি এ সমস্যা দূরীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

পিরোজপুর ইসলামীয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা জানায়, বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করে কলেজে যাওয়ার সময় তাদেরকে নানান রকমের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রাস্তার দুপাশে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে থাকায় রাস্তা  বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা দ্রুতগতির মোটরসাইকেল কিংবা অন্যান্য যানবাহন ঠিকমতো দেখতে পায় না তারা, ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন ঐ স্থান অতিক্রম করতে হয়। এছাড়াও অনেক সময় বাস এবং দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের চাকায় বৃষ্টির পানি ছিটকে জামাকাপড় নষ্ট হয়, নোংরা পানিতে ভেজা জামা কাপড় গায়েই তাদেরকে ক্লাশ করতে হয়। তারা এই জায়গা থেকে বাস কাউন্টারগুলো সরিয়ে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

থাই অ্যালুমিনিয়াম ও গ্লাস ব্যবসায়ী মোঃ জাহাঙ্গীর খান বলেন, বাইপাস সড়কটি একটি ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয়। তিনি বলেন, নামায পড়তে যাওয়ার সময় রাস্তায় দুই ধারে গাড়ি থাকার কারণে কিছুই দেখা যায় না, অনেক ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়ে মসজিদে যাই। বাস মালিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে বার বার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এ ব্যাপারে কেউ কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কবেই জানি রাস্তা পার হতে গিয়ে জীবনটা দিয়ে দিতে হয়। 

পিরোজপুরে বিভিন্ন ব্যানারের নতুন নতুন বাস কাউন্টার হচ্ছে, এতে করে পিরোজপুরের বাস ব্যবসায়ের অবস্থা কেমন জানতে চাওয়া হলে টুংগীপাড়া এক্সপ্রেস এর জেলা প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম হাওলাদার দৈনিক সংগ্রাম জেলা প্রতিনিধিকে জানান, ঈদ উপলক্ষে তারা প্রয়োজনীয় যাত্রী পাচ্ছেন, ঈদ পরবর্তী অবস্থা কি হবে তা তিনি এই মুহূর্তে বলতে পারছেন না। তবে তিনি পদ্মা ব্রিজ উদ্বোধন হওয়ার প্রেক্ষিতে এবং আগামী দু'এক মাসের মধ্যে বেকুটিয়া ব্রিজও উদ্বোধন হয়ে গেলে সামনের দিনগুলোতে বাসে অধিক যাত্রী চলাচল করবে বলে আশা পোষণ করছেন। দূরপাল্লার পরিবহন বাসগুলো বাস টার্মিনালে না রেখে রাস্তার উপরে দাঁড় করিয়ে রাখায় বাইপাস সড়কে সাধারণ পথিকদের চলাচলে দুর্ভোগ এবং বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, পৌর বাস টার্মিনালে জায়গা সংকুলান না হওয়াতে প্রত্যেক বাস কাউন্টার যার যার মত করে এখানে সেখানে বাস পার্কিং করে, এতে করে সাধারণ জনগণের  সমস্যা সৃষ্টি হয়, এগুলো তারা অবগত আছেন, কিন্তু তারা  নিরুপায়। তিনি বলেন, আপনারা পত্রপত্রিকায় এসব নিয়ে লেখালেখি করেন যাতে কর্তৃপক্ষ দ্রুত আমাদের এই সমস্যা সমাধান করে দেয়। আমরাও এর দ্রুত সমাধান চাই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ