শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩
Online Edition

মিয়ানমারের সাগাইংয়ে সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে বাস্তুচ্যুত হাজারো মানুষ

২৯ জুলাই, ইরাবতী, আল-জাজিরা : মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার সালিঙ্গি শহরে নতুন করে জান্তা অভিযানের পর আতঙ্কে পালিয়ে গেছে এক হাজারের বেশি মানুষ। মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইয়ে খার এবং শ্বে হতাউক গ্রামের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে প্রায় ১৫০ জন সেনা সদস্য। সালিঙ্গির এক বাসিন্দা বলেন, ‘গত মাসে জান্তা বাহিনী এখানে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল।

 যারা প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিলেন তারা ক'দিন আগেই ফিরেছেন। এরমধ্যে আবারও হামলা চালালো সেনারা’। খবরে বলা হয়েছে, ইয়ে খার এবং শ্বে হতাউকে সব মিলিয়ে আড়াই শতাধিক ঘর আছে। সেনা সদস্যদের লাগানো আগুনে কতগুলো ঘরে পুড়ে গেছে, তাৎক্ষণিকভাবে বের করতে পারেনি গ্রামবাসী। সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জন্য দ্রুত খাদ্য সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন অনেকে। গত জুনেও সালিঙ্গির গ্রামে সামরিক অভিযানে কয়েক হাজার বেসামরিক লোক নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। যাদের অনেকে এখনও নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেনি।

সালিঙ্গিকে মিয়ানমারের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের শক্ত ঘাঁটি বলে ধারণা করা হচ্ছে। সু চি’র সরকার ক্ষমতাচ্যুতের পর থেকেই দেশটির সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ছোট বড় বিভিন্ন গোষ্ঠী। সাবেক সেনা, পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠন হওয়া এসব গোষ্ঠীগুলো প্রায় সময় সেনা বহরে হামলা চালিয়ে আসছে। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর সাগাইং অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অভ্যুত্থানের আগে মিয়ানমারে অনেক বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যা ছিল এবং জাতিসংঘের সংস্থা ধারণা করছে দেশটির ১২ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

সু চি’র সরকার পতনের আগে ২০১৭ সালে রাখাইনে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সব মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার, উখিয়াসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে।

মৃত্যুদণ্ডের তোয়াক্কা না করেই তৎপর প্রতিরোধ যোদ্ধারা : চারজন রাজবন্দীকে মৃত্যুদ- দেওয়ার পর মিয়ানমারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জান্তাদের হাতে আরো ৭০ জন রাজবন্দী রয়েছেন। তাদের মধ্যে নয়জন রয়েছেন নারী। তাদেরও মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডের প্রতিশোধ হিসেবে প্রতিরোধ যোদ্ধারা মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে হামলা চালিয়ে ২০ জন জান্তা সদস্যকে হত্যা করেছে এবং জান্তা বাহিনী ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ আরো তীব্রতর হয়েছে।  স্বামীকে জান্তারা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বলে অন্যের কাছ থেকে শুনেছেন থাজিন নাইয়ুনথ অং। শোনার পর তিনি প্রথমে নির্বাক হয়ে গেলেও পরে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এখন আমাকে শুরু হওয়া বিপ্লব সফলভাবে শেষ করতে হবে।’ এমনি প্রতিশ্রুতি অন্যদের ক্ষেত্রেও। 

অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে, সেনা অভুত্থানের পর থেকে জান্তা বাহিনী এ পর্যন্ত ২,১০০ বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে। তাদের অনেকে সেনা হেফাজতেই মারা গেছেন।  এএপিপি পরিচালক বো কাইয়ি বলেন, এখন রাজবন্দী হওয়া সবচেয়ে বিপজ্জনক। মৃত্যুদণ্ড কে জনগণকে দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অ

ারো মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সামরিক সরকার নিয়ে কিছুই অনুমান করা যাচ্ছে না। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন স্পষ্টতই বুঝতে পারছি যে, সেনা বাহিনী অত্যন্ত বেপরোয়া ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে।’

বার্মিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক নাথান মং খবর সংগ্রহের জন্য মিয়ানমারের কারাগারে তিন মাস কাটিয়েছেন। তিনি জানান, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় এখনো ১০০ জন রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কারাগারে থাকা আমার সহকর্মী ও বন্ধুদের জন্য আমি খুবই উদ্বিগ্ন।’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরপরই ১৫-সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, যার মধ্যে সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র সরবরাহকারী চীন এবং রাশিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, জি ৭ এর মতোই সর্বসম্মতভাবে এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। নিন্দা জানিয়েছে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোও।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ