বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

এ দেশে কুরআনের আওয়াজ স্তব্ধ করে দেয়ার সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে --------ডা. শফিকুর রহমান

গতকাল ফেনীতে জামায়াতে ইসলামী ফেনী জেলা শাখার ষান্মাসিক রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান। (উপরে বাম থেকে ১ম,  ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ.টি.এম মাছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব ও অপর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, নীচে বাম থেকে ১ম কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, ফেনী জেলা আমীর এ. কে. এম শামছুদ্দিন ও জেলা সেক্রেটারি মুফতী আবদুল হান্নান

ফেনী সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, এ দেশে কুরআনের আওয়াজ স্তব্ধ করে দেয়ার সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ৯৫ ভাগ মুসলিমের দেশে ইমামরা, ওয়ায়েজরা হক কথা বলতে পারে না। অন্য সকল ধর্মের কাজ সুচারুরূপে পালন করতে পারছে। সব ধরনের সহযোগিতা উৎসাহ তাদেরকে দেয়া হচ্ছে। শুধু মুসলমানরা তাদের ধর্মকর্ম করতে পারছে না।  পাঠ্যপুস্তক থেকে ধর্মকে নির্বাসনে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এই সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের শুধু দেহটা এদেশে রয়েছে বাকী সব দেশের বাইরে।

গতকাল শুক্রবার ফেনী জেলা জামায়াতের ষান্মাসিক রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ফেনী জেলা আমীর এ. কে.এম শামছুদ্দিনের সভাপতিত্বে ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ.টি.এম মাছুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, অপর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন। এতে দারসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাদ্দিস আবদুল খালেক।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত উক্ত ভার্চুয়াল সম্মেলনে ডা: শফিকুর রহমান বলেন,  দুনিয়ার সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর বন্দেগী করার জন্য। কিন্তু শয়তান সব সময় লেগে আছে। সে কখনও বিশ্রামে যায় না। ফলে ইচ্ছে থাকলেও আমরা সঠিকভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে পারি না। আমরা যেন নিজের উপর নিজে হক নষ্ট করে জুলুম করে না ফেলি। আপনার ¯্রষ্টা যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন সে উদ্দেশ্য আমরা পালন করতে পারছি কি? 

তিনি বলেন, আমাদেরকে চারিত্রিক গুণাবলী অর্জনের চেষ্টা করে যেতে হবে। দ্বীনের পথে চলতে গেলে চ্যালেঞ্জ আসবে, জেলজুলুম আসবে অত্যাচার নির্যাতন আসবে। তখন মনে করতে হবে আল্লাহ আপনাকে পবিত্র করতে চান। আপনার গুনাহ মাপের ব্যবস্থা করছেন। পারিবারিক জীবনে, কর্মজীবনে সকল ক্ষেত্রে একজন রুকন হক আদায় করতে হবে। কারণ তিনি একজন দায়ী ইলাল্লাহ। আমরা যথাযথভাবে আল্লাহর নিকট ধরনা দিতে পারছি কিনা? যদি পারি তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসবেই ইনশাল্লাহ।

দেশ যখন নির্লজ্জতা, বেহায়াপনায় ভাসছে এমন অবস্থায় শপথের কর্মীদের নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। জুলুমবাজ এই সমাজের পরিবর্তনের জন্য নিরন্তর চেষ্টা সাধনা করে যেতে হবে। মানুষের দুঃখ, দারিদ্র্যতায় তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এদেশে কোন সরকার আছে কিনা দুর্গত এলাকার মানুষ বুঝতে পারে নাই। আমরা তাৎক্ষণিক তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আল্লাহর মেহেরবানীতে সবার আগে আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি এবং এখনও করে যাচ্ছি। পানি নেমে গেছে কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি রয়ে গেছে। পুরো সংগঠন সারা দেশের যেখানেই বিপর্যয় ঘটছে সেখানেই আমরা সবার আগে আগে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 

আমরা অন্যের মোহাসাবার দিকে মন না দিয়ে নিজের এহতেসাব করি। আত্মসমালোচনা করি। ন্যায়ের পক্ষে সবাইকে আমরা সাথে পেতে চাইবো। যারা আসতে চাইবে না তাদেরকেও আমরা ছেড়ে দেব না বরং আমরা তাদের পিছনে লেগে থাকব এ পথে আনার জন্য। দ্বিতীয়ত যারা রাজনীতি করবেন তাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে জনগণ যেন তাদের কাছে ধর্না দিতে না হয়। আগামী দিনের রাজনীতি এমনই হতে হবে। ফেনীর ময়দান খুবই উপযুক্ত ময়দান। তিনি রুকনদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদেরকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। 

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ.টি.এম মাছুম বলেন, আল্লাহর দ্বীনকে এই জমিনে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৪৭ সালে এই আন্দোলন পথ চলা শুরু করে। যার সাথে আজ বিশে^র লক্ষ কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। যারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চান তাদেরকে আল্লাহর নবী এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবন অনুসরণ করতে হবে। পাশ্চাত্য জগত রাসূলের সময়কে অন্ধকার যুগ বলে মনে করে। এটা তাদের হীনম্মন্যতা। আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং সাহাবায়ে কেরামের জামাতের চেয়ে উত্তম জামাত পৃথিবীতে ছিল না এবং আসবে না। তাদের মানদন্ডে উত্তীর্ণ হতে হলে এই দুটি জামাতের অনুসরণ করতে  হবে। এজন্য ইসলামের প্রতিটি হুকুম আহকাম পালন করতে হবে। আংশিক ইসলাম পালন করে সাহাবায়ে কেরামের কাছাকাছি মানও বজায় রাখা সম্ভব নয়। ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, অন্যায় অসত্যকে পায়ে দলে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সকল কাজে বাইয়াতের মর্যাদা রক্ষা করে চলতে হবে। আমরা যারা রুকন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি তাদেরকে যথাযথ মান উন্নয়নের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। 

একজন কর্মী তার মান রক্ষা করে সামনে এগিয়ে গেলে রুকন হওয়া যাবে। মুসলিম হওয়ার মূলনীতি মেনে চলতে হবে। রুকনিয়াতের জন্য যে মান নির্ধারণ করা হয়েছে সে মান যদি রক্ষা না করতে পারি তাহলে তারা ছিটকে পড়বেন। জ্ঞান অর্জন করতে হবে আল্লাহর সন্তোষ্টির জন্য। আর তাদের অবস্থান হবে নবীদের ও তাদের মাঝে শুধু একটি দরজা। তিনি বলেন, নফল এবাদতে মনোনিবেশ করতে হবে। মান রক্ষা করার জন্য নফল ইবাদত বেশী বেশী করতে হবে। মান বজায় রাখা ও মান সংরক্ষণ করতে হবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। মুমিন স্থবির হয়ে থাকতে পারে না।  

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব বলেন, আমাদের জান ও মাল আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। তাঁর দেয়া আমানত তাঁরই নির্দেশিত পথে ব্যয় করতে হবে। ‘মুমিনের ব্যবহারিক জীবন’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সৌজন্যবোধ এবং সৌন্দর্যবোধের ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। পথ কিভাবে চলবেন কোন অফিসে গেলে কিভাবে বসবেন, পারিবারিক জীবনে আচরণ কেমন হবে, স্ত্রী-সন্তানদের সাথে আচরন কি রকম হবে, কিভাবে খাবেন, কিভাবে পোষাক পরবেন। আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখা উচিত নয়। জীবনটাকে রুটিন মাফিক চালাতে হবে। রসনা ও লজ্জাস্থানের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

সামাজিক জীবনে আমাদেরকে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নিতে হবে, সুখে দুঃখে তাদের পাশে থাকতে হবে। মসজিদ, মাদ্রাসা, ক্লাব ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। বিচার শালিশের সাথে যুক্ত থাকা ভাল। ব্যক্তিগত জীবনে দ্বীনকে জীবনের লক্ষ্য বানাতে হবে। নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করতে হবে। কুরআন অধ্যায়ন করতে হবে। আল্লাহর স্মরন থেকে গাফেল হওয়া যাবে না। চলতে ফিরতে জিকির জারী রাখতে হবে। বাইয়াতের হক আদায় করতে হবে। আয় রোজগার হালাল হতে হবে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন আনুগত্য, পরামর্শ ও মোহাসাবার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, আনুগত্যের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ৯৭টি আয়াত নাযিল হয়েছে। আনুগত্য করা ফরজ। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার শর্ত আনুগত্য করা। যারা আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে অগ্রাধীকার দেন তাদের পক্ষে আনুগত্য করা কঠিন। আনুগত্য না করলে নেক আমল নষ্ট হয়ে যাবে। জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে। জনাব মোবারক হোসেন আরো বলেন, পরামর্শ সংগঠনের প্রাণ। পরামর্শ দেয়া আল্লাহর নির্দেশ রাসুলের সুন্নাহ। পরামর্শ করা সাহাবায়ে কেরামের বৈশিষ্ট্য। মোহাসাবা করতে হবে অপর ভাইয়ের কল্যাণ কামনায়। কাউকে হেয় করার জন্য নয়। দরদী মন নিয়ে মোহাসাবা করতে হবে সাথে সাথে ভাইয়ের জন্য দোয়াও করতে হবে।  জেলা আমীর এ. কে. শামছুদ্দিন তার সমাপনী বক্তব্যে  বলেন, হামলা মামলা, অত্যাচার নির্যাতন চলবে। তারপরও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আন্দোলনের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এব্যপারে রুকনদেরকে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন মহিলাদের মধ্যে কাজ বৃদ্ধি করতে হবে। তাদের মান উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ