জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই নির্বাচনের চিন্তা করলে জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবে ----ডা. শফিকুর রহমান

খুলনা ব্যুরো : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের জনগণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন চায়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেশবাসীকে উপহার দিতে মোটেও আন্তরিক নন। একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না হলে, জনগণ প্রহসনের নির্বাচন কাউকে করতে দিবে না। যদি সরকার জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই নির্বাচন করার চিন্তা করে, তাহলে জনগণ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার সকল ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপর সরকার ইতিহাসের কঠিনতম জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠন ও এর নেতা-কর্মীদের উপর ভয়াবহ আঘাত এসেছে। এমনকি আমাদের সুধী-শুভাকাক্সক্ষীরাও সরকারের জুলুম-নিপীড়ন থেকে রেহাই পাননি। সরকারের জুলুম-নীপিড়ন মাথায় নিয়েই সংগঠন স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। গতকাল জুমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে জুমের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যাপক মাহ্ফুজুর রহমানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী নায়েবে আমীর মাস্টার শফিকুল আলম, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম, এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, অধ্যাপক নজিবুর রহমান, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি মো. জাহিদুর রহমান নাঈম, ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন প্রেরণা সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংসদ খুলনার শিল্পী মো. সাইফুল ইসলাম ফারুক।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যুৎখাতে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশে অসহনীয় লোডশেডিং এর ফলে মানুষের জীবনে ভয়াবহ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কলকারখানা ও উৎপাদন সেক্টরগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিদ্যুতের অভাবে গ্যাস সংকট দেখা দেওয়ায় ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ও যমুনা ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড। দেশীয় সার কারখানা বন্ধ হওয়ায় কৃষিখাতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিদেশ থেকে সার আমদানি করতে হলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপদজনক অবস্থায় থাকার কারণে সার আমদানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে খাদ্যসংকটের সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে দেশের শিল্পোৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে ফাঁকা বুলি আওড়িয়ে আসছে তা জনগণের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। স্বল্প মেয়াদের কথা বলে এক যুগ ধরে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে বাড়তি দামে। বিদ্যুৎ না নিলেও এসব কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে। এ সরকারের আমলে বিদ্যুৎখাতে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। জনগণের টাকায় লাভবান হয়েছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চিহ্নিত একটি মহল। কুইক রেন্টালের নামে বছরের পর বছর যাবৎ বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হলেও বিদ্যুৎ সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। তিনি অবিলম্বে বিদ্যুৎখাতের অব্যবস্থাপনা দুর করে জনগণকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আমীরে জামায়াত বলেন, ইতিহাসের রেকর্ড করা এবারের ভয়াবহ বন্যার সূচনালগ্ন থেকেই আমাদের সহকর্মীরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এখনো আমরা সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে দিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ। বন্যার সূচনালগ্ন থেকেই আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না, কিন্তু আমাদের উপকরণের সীমাবদ্ধতা ছিল। এজন্য আমরা সবার কাছে যথাসময়ে পৌঁছাতে পারিনি। এজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। আশা করি মহান আল্লাহও আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সামর্থ্যরে হাত তো অনেক ছোট। মানুষের মাঝে খাদ্য সরবরাহ করা যত সহজ, পুনর্বাসন করা ঠিক ততটাই কঠিন। আমাদের সহকর্মীদের আমরা বলে দিয়েছি, পুনর্বাসনের সহায়তার কাজে যেন কোনো ত্রুটি না হয়। গৃহ নির্মাণ/মেরামতে পুরো সময়জুড়ে আমাদের সহকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে এ কাজ আঞ্জাম দিবেন, ইনশাআল্লাহ। দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যিনি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তিনি সবার আগে আমাদের সহযোগিতা পাবেন, ইনশাআল্লাহ। আমাদের মাঝে কোন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-সাঁওতাল, রাজনৈতিক দলের কোন ব্যবধান নেই; এখন সবার আগে মানবতা। আমরা অনেক বড় একটা কাজ হাতে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এ কাজে মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ ও সকলের সার্বিক সহযোগিতা আশা করছি। আল্লাহ তা’য়ালা যেন আমাদেরকে মানবতার জন্য এ মহান কাজটি যথাযথভাবে আঞ্জাম দেওয়ার তাওফিক দান করেন।
তিনি বলেন, এ মানবিক পরিস্থিতিতে মানুষকে সম্মান দেয়া, ইজ্জত দেয়া, প্রত্যেক মুমিনের উপর অবধারিত। মানুষের সেবা করা আল্লাহ তা’য়ালার বান্দাদের জন্য উত্তম ইবাদাত। তাই আসুন, মানবতার এই কঠিন ক্রান্তিকালে আমরা বিভেদ-বিভাজন ভুলে গিয়ে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই।
আমীরে জামায়াত বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাস্সিরে কুরআন ও সাবেক এমপি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দীর্ঘ প্রায় ১২ বছরযাবৎ কারাগারে আটক রয়েছেন। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম প্রায় ১১ বছরযাবৎ এবং সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল প্রায় ৭ বছরযাবৎ কারাগারে আটক রয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীসহ জামায়াতের অনেক নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। অবিলম্বের তাদেরকে নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিচয় আমরা ইসলামী আন্দোলনের কর্মী। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় ইসলামী খেলাফাত দানের ওয়াদা করেছেন। সেই শর্ত পূরণের লক্ষ্যে আজ সর্বত্র সৎ ও যোগ্য লোক তৈরির সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আল্লাহর রাস্তায় জান-মাল দিয়ে আন্দোলনের শরিক লোকদেরকে যোগ্যতা অর্জনের জন্যে পরিশ্রম ও নিরলস সাধনা করতে হবে। সেই সাথে কাতর কন্ঠে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। এই সমাজের সচেতন অংশের মধ্য থেকে মৌলিক মানবীয় গুনাবলী সম্পন্ন লোকদের রাসূলের তরিকায় যাথার্থ প্রশিক্ষণ দানে এবং মাঠে ময়দানে সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মী যারা তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করবে না। এ সমাজের বাতিল শক্তি আল্লাহর নুরকে নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ তাঁর নুরকে বিকশিত করবেনই। জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের আদর্শ রাসূল (সা.)এর আদর্শ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আদর্শকে বুকে ধারণ করে আল্লাহর বিধানকে এ জমিনে বাস্তবায়ন করতে জান-মাল দিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।