শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Online Edition

ওষুধের দাম লাগামহীন বৃদ্ধি বিপাকে সাধারণ মানুষ

 

ইবরাহীম খলিল : খাবার এক বেলা না খেলেও চলে কিন্তু ওষুধ ছাড়াতো এক বেলাও চলে না। এই অবস্থায় ৫৩টি অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বাড়াতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দেশে উৎপাদিত জীবনরক্ষাকারী জরুরি সব ওষুধের দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। ব্যাপক চাহিদার ২০ টাকার নাপা সিরাপের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বেড়ে হয়ে গেছে ৩৫ টাকা। 

শুধু নাপা সিরাপ নয়, প্রায় ৫৩টি জরুরি ওষুধের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। দাম বেড়ে যাওয়া ওষুধগুলোর প্রায় সবকটি বহুল ব্যবহৃত। সাধারণ মানুষ বলছে, যদি এভাবে ওষুধেরও দাম বেড়ে যায়; তাহলে সাধারণ মানুষ মারা যাবে ওষুধের অভাবে। ধনী গরিব মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্ত নি¤œ মধ্যবিত্ত সবার ঘরেই ওষুধের প্রয়োজন হয়। অসুখ-বিসুখে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কমদামের ওষুধ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাথে সাথে ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়া একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল সাধারণ মানুষের কাছে। তারা প্রত্যাশা করেছিলেন যে অন্তত ওষুধের দামটা বাড়বে না। কিন্তু তাই হলো। ওষুধের দামটা এমনভাবে বেড়েছে যে একেবারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নাগালের বাইরে। যেমন জ¦র হলেই মানুষে নাপা সিরাপের ওপর নির্ভর করে। অনেকেই চিকিৎসক না দেখিয়েও নাপা সিরাপ সেবন করে জ্বর থামিয়ে দেন। এই নাপা সিরাপের দাম বাড়িয়ে ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। এটাকে একেবারেই অপ্রত্যাশিত এবং জুলুম হিসেবে দেখছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।  

সাম্প্রতিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নাপাসহ প্রায় ৫৩টি জরুরি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই সুযোগে ইচ্ছা মতো দাম বাড়িয়েছেন ওষুধ কোম্পানিগুলো। এরচেয়েও বড় প্রভাব পড়েছে ফার্মেসিগুলোতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে  ওষুধের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হয়। বেশি দাম না দিলে বিক্রি না করার কথা জানিয়ে দেওয়া হয় ফার্মেসি থেকে।  

ওষুধ প্রশাসনের অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর (সিসি) মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের বক্তব্য হলো-- ওষুধের দাম বাড়ার বিষয়টি আমাদের উপর নির্ভর করে না এটা ওষুধ কোম্পানির বিষয়। তা ছাড়া ওষুধের দাম বাড়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো লিস্ট বা তথ্য এখনো অফিসিয়ালি আসে নাই। এ জন্য আপাতত এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারছি না। 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মোটামুটি সবখানেই বেশি দামে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাগামহীন দামে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বলছে, প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। অন্য পণ্যের সঙ্গে এবার পাল্লা দিয়ে প্রায় দ্বিগুণ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে জীবনরক্ষকারী বেশ কিছু ওষুধের। শিশুদের জ্বর নিরাময়ে বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধ হচ্ছে নাপা বা প্যারাসিটামল। খুচরা বাজারে এই ওষুধ ২০ টাকা করে বিক্রি হতো। তবে এখন তা কিনতে হচ্ছে ৩৫ টাকায়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বহুল ব্যবহৃত এমন আরও ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম বেড়েছে ৫০ ভাগের উপরে। মগবাজারের কয়েকটি ফার্মেসিতে কথা বলে জানা গেছে, নাপা সিরাপ আগে ২০ টাকা ছিল, এখন ৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফার্মেসির বিক্রেতারা বলছেন, নাপা সিরাপসহ বেশ কিছু ওষুধের দাম কোম্পানি একটু বেশি নিচ্ছে। ট্যাবলেট ছিল ৭ টাকা ২০ পয়সা, এখন করছে ১২ টাকা। নাপা এক্সটেনড ছিল ১৫ টাকা, ওটা করা হয়েছে ২০ টাকা।বেশি দামে বিক্রি করলেও খোদ ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতারা বলছেন, বহুল বিক্রীত ও চাহিদার জরুরি এই ওষুধটার দাম বাড়ানোর বিষয়টি একেবারেই অযৌক্তিক।

মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকার ওষুধ বিক্রেতা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ওষুধের দাম একটু বেড়েছে। নতুন দামে ওষুধ বাজারে আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমাদের যেসব ওষুধের দাম বেড়েছে সেসব বিষয় আমরা ওষুধ ব্যবসায়ীদের জানিয়েছি। ওষুধের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলছেন বিশেষজ্ঞরাও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান মনে করেন, দেশের এসময়ে ওষুধের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ভুল মনে হচ্ছে। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে দাম না বাড়িয়ে জনগণের স্বার্থে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিত।

দাম বেড়েছে যেসব ওষুধের :  বিভিন্ন ফার্মেসিতে কথা বলে জানা গেছে, প্যারাসিটামল (৫০০ এমজি) ট্যাবলেট আগে ছিল ৭০ পয়সা, এখন দাম এক টাকা ২০ পয়সা। প্যারাসিটামল (৫০০ এমজি) ট্যাবলেট (র‌্যাপিড): আগে ছিল ৭০ পয়সা, এখন এক টাকা ৩০ পয়সা। প্যারাসিটামল (৬৫০ এমজি) ট্যাবলেট (এক্সআর), আগে ছিল এক টাকা ৩১ পয়সা, এখন দুই টাকা। প্যারাসিটামল (১০০০ এমজি) ট্যাবলেট আগে ছিল এক টাকা ৪ পয়সা, বর্তমান দাম দুই টাকা ২৫ পয়সা। প্যারাসিটামল (৮০ এমজি) ড্রপস ১৫ এমএল বোতল: আগে ছিল ১২ টাকা ৮৮ পয়সা, এখন ২০ টাকা। প্যারাসিটামল (১২০ এমজি/৫ এমএল) সাসপেনশন (৬০ এমএল) বোতল আগে ছিল ১৮ টাকা, বর্তমানে দাম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। প্যারাসিটামল (১২০ এমজি/৫ এমএল) সাসপেনশন ১০০ এমএল বোতল আগে ছিল ৩০ টাকা ৮ পয়সা, এখন বিক্রি হচ্ছে দাম ৫০ টাকা। প্যারাসিটামল (১২০ এমজি/৫ এমএল) সিরাপ (৬০ এমএল) বোতল আগের বিক্রি হত ১৮ টাকায়, নতুন দাম ৩৫ টাকা। প্যারাসিটামল (১২০ এমজি/৫ এমএল) সিরাপ (১০০ এমএল) বোতল আগে ছিল ২৭ টাকা ৭২ পয়সা, বর্তমান দাম ৫০ টাকা। মেট্রোনিডাজল (২০০ এমজজি) ট্যাবলেট আগে দাম ছিল ৬০ পয়সা, বর্তমান দাম এক টাকা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ