মঙ্গলবার ০৩ অক্টোবর ২০২৩
Online Edition

জনগণকে সাথে নিয়েই অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে -------ডা. শফিকুর রহমান

গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের কাফরুল ও মিরপুর জোন আয়োজিত এক ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান                         -সংগ্রাম

 

 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘কুরবানি’ শুধু পশু যবেহ করার মত আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব ইবাদত নয় বরং নিজের পশুপ্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনই কুরবানির প্রকৃত শিক্ষা। পবিত্র কালামে হাকীমের সূরা আল আনয়ামের ১৬২ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই, আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, সবকিছু মহান আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক’। তাই কুরবানির শিক্ষাকে বাস্তবজীবনে প্রতিফলন ঘটিয়ে ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি অর্জনই পশু কুরবানির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তিনি পবিত্র ঈদুল আযহার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের কাফরুল-মিরপুর জোন আয়োজিত এক ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জোন পরিচালক লস্কর মোহাম্মদ তসলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন  এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা  মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য মোঃ শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম, আব্দুল মতিন খান ও আলাউদ্দিন, তারেক রেজা প্রমুখ।

আমীর জামায়াত বলেন, পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ৮১ বছর আগে মাত্র ৭৫ জনকে সাথে নিয়ে পথচলা শুরু করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল জাহেলি শ্রোতের বিপরীতে ওহীভিত্তিক একটি ব্যতিক্রমী শ্রোত তৈরি করা। মাত্র গুটিকয়েক লোক নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরুতেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল করা হলেও বাংলাদেশ সহ এ অঞ্চলের ৮টি দেশে জামায়াতে ইসলামী মজবুতভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এই আন্দোলন এখন বিশ্বব্যাপী অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। যা এখন এক বিশাল মহীরূহে পরিণত হয়েছে। এখন ফুল ফুটবে ফলও আসতে শুরু করবে-ইনশাআল্লাহ। কিন্তু কায়েমী স্বার্থবাদী ও শোষকগোষ্ঠী এই আন্দোলনের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা ফুৎকার দিয়ে এই আন্দোলন নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু এই অপশক্তি অতীতে কখনো সফল হয়নি; আর কখনো হবেও না। তিনি সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে দ্বীন বিজয়ের প্রত্যয়ে সকলকে সর্বশক্তি নিয়োগের আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও আদর্শবাদী সংগঠন। আমরা দেশকে ন্যায়-ইনসাফেরভিত্তিতে মানবিক মর্যাদার দেশে পরিণত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এই জন্যই আমাদের ওপর নেমে এসেছে ইতিহাসের নির্মম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন। অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয়েছে শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ আবালবৃদ্ধবনিতার ওপর। জেল-জুলুম, মামলা-হামলা এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে আমাদের শীর্ষনেতাদের। জেলের বাইরে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে। অনেকে পঙ্গুত্বও বরণ করেছেন। কিন্তু আমরা এসবে কোনভাবেই পাত্তা দিইনি বরং শত জুলুম-নির্যাতনের মধ্যেও আমরা আমাদের লক্ষ্যপানে আপোষহীন রয়েছি। আর দ্বীন প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলনে আপোষহীনই থাকবো-ইনশআল্লাহ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জাতির ঘাড়ে এখন এক জগদ্দল পাথর চেপে বসেছে। কিন্তু এই পাথর আমাদের ওপর থেকে এমনিতেই সরে যাবে না বরং এজন্য প্রয়োজন অনেক ত্যাগ ও কুরবানি। আর এ আন্দোলনকে বিজয়ী করতে আমরা পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনগণকে সাথে নিয়েই আমরা এই অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে একটি সফল ও সার্থক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। মূলত, এই আন্দোলন হবে নিয়মতান্ত্রিক কিন্তু আপোষহীন। তিনি দেশ ও জাতির মুক্তির লক্ষ্যে আসন্ন আন্দোলনে শরীক হওয়ার জন্য সকলকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আমাদের এই জন্মভূমি বাংলাদেশ একটি অনন্য সুন্দর দেশ। এই দেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্রে ভরপুর। এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী। কিন্তু স্বাধীনতার পর এদেশ আমদানি করা আদর্শ দিয়ে শাসিত হচ্ছে। ক্ষমতালিপ্সা; ব্যক্তি, পরিবার ও গোষ্ঠীতন্ত্রের কারণে সাধারণ মানুষ আজ অধিকার বঞ্চিত। অপশাসন ও দুঃশাসনে জনগণ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হলেও শ্রেণি বিশেষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। আর দেশকে এই নেতিবাচক বৃত্ত থেকে বের করে আনার জন্য জামায়াতে ইসলামী অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার দেশকে সিঙ্গাপুর বানানোর কথা বললেও দেশে এখন আজিমপুরের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। দেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ, খাবার কোন কিছুই এখন সহজলভ্য নয়। চারদিকে শুধু হাহাকার দুর্ভিক্ষের প্রতিধ্বনিই শোনা যাচ্ছে। মূলত, দেশ এখন দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। তাই দেশকে এই শ^াসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে হলে কুরআন-সুন্নাহর আদর্শের ভিত্তিতে দেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার কোন বিকল্প নেই। তিনি কেয়ারটেকার সরকারের একদফার আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ