সোমবার ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

সেভেরোদোনেৎস্কের ৭০  শতাংশ রুশদের দখলে

সংগ্রাম ডেস্ক : রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী-অধ্যুষিত ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ২২ জন। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনীয় সেনাদের গোলাবর্ষণে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। দোনেৎস্কে ইউক্রেনীয় সেনারা হামলা বাড়িয়েছেন বলে দাবি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, এএফপি,  বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকর্তা ও রুশ বার্তা সংস্থাগুলো বলছে, দোনেৎস্কে একাধিক কামান হামলা করেছে ইউক্রেন।  

এর মধ্যে একটি মার্কেটও আছে। দোনেৎস্ক শহরে একটি মা ও শিশু হাসপাতালে হামলার পর সেখানে আগুন ধরে যায়। এতে হাসপাতালের বেজমেন্টে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন রোগী ও হাসপাতালের কর্মীরা। স্বতন্ত্রভাবে কেউই এ হামলার ব্যাপারে নিশ্চিত করতে পারেনি। এ ছাড়া হামলাগুলো কোথায় হয়েছে, তা-ও নিশ্চিত হতে পারেনি তারা। বিচ্ছিন্নতাবাদী ও রুশ বার্তা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে ইউক্রেন হামলা করেছে বলা হলেও এ নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি কিয়েভ।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের হামলায় দোনেৎস্কে পাঁচজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকর্তারা। এদিকে দোনেৎস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নেতা ডেনিস পুশিলিন ইউক্রেনীয় বাহিনীকে প্রতিহত করতে দোনেৎস্কে আরও রুশ সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রুশ বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, নিহত পাঁচজনের মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। এ ছাড়া আরও ২২ জন আহত হয়েছেন। রাশিয়ার একজন প্রতিবেদকের বরাত দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থাগুলো গতকাল সন্ধ্যায় একটি মা ও শিশু হাসপাতালে হামলার কথা জানায়। তবে হাসপাতালের কর্মীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় কেউ হতাহত হননি।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফানি দুজারিক বলেন, দোনেৎস্কের একটি হাসপাতালে হামলার প্রতিবেদন দেখেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। দুজারিক বলেন, এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বেসামরিক স্থাপনা, বিশেষ করে, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যেকোনো হামলা, আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন

সেভেরোদোনেৎস্কের ৭০ শতাংশ রুশদের কবজায়- গবর্নর : ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের শেষ সংযোগ সেতুটিও ধ্বংস করে দিয়েছে রুশ বাহিনী। আঞ্চলিক গবর্নর সেরগি গাইদাই বলেন, শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ এখন রুশদের নিয়ন্ত্রণে। গাইদাই বলেন, তিনটি সেতু ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় শহরটি এখন কার্যত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। সেখানে থাকা বেসামরিক লোকজন আটকা পড়েছেন। শেষ সেতুটিও ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোও অসম্ভব হয়ে পড়ল বলছেন তিনি। ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা বলেন, নদী পার হয়ে শহর থেকে ইউক্রেনীয়দের সরে আসার আর কোনো পথ খোলা নেই। সেভেরোদোনেৎস্ক রক্ষায় পশ্চিমা ভারী অস্ত্রশস্ত্রের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আহ্বান জানিয়ে আসছে ইউক্রেন। কিয়েভ বলছে, পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চলের জন্য লড়াই এবং যুদ্ধের গতিপথ নিয়ন্ত্রণে শহরটি রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক প্রদেশের সমন্বয়ে দনবাস অঞ্চল গঠিত। রুশ–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই অঞ্চল নিজেদের দাবি করে আসছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই চলছে।

গতকাল সোমবার দিন শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘এই লড়াইয়ে আমাদের ত্যাগ অনেক বেশি। একেবারে শিউরে ওঠার মতো।’ যুদ্ধে এগিয়ে থাকতে আধুনিক অস্ত্রের জন্য আবারও তিনি মিত্রদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দনবাস অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা মস্কোর কাছে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। গতকাল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়ার মূল লক্ষ্য দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক রক্ষা করা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, ইউক্রেনের ১ হাজার হাউইৎজার, ৫০০ ট্যাংক এবং ১ হাজার ড্রোন প্রয়োজন। সবশেষ কয়েকটি বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেওয়া অস্ত্র ও সরঞ্জাম ধ্বংসের দাবি করেছে মস্কো।

আরেকটি মারিউপোল? : মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী মুখপাত্র এদুয়ার্দ বাসুরিনকে উদ্ধৃত করে রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ বলেছে, সেভেরোদোনেৎস্কে ইউক্রেনীয় সেনাদের কার্যকরভাবেই অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। তাঁদের হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে, না হয় মরতে হবে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় গঠিত আন্তর্জাতিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যামিয়েন ম্যাগরু বলেন, মারিউপোলের মতো পরিস্থিতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের একটি অংশকে বড় একটি এলাকায় ইউক্রেনীয় সেনাদের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। মারিউপোলের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় কয়েকশ বেসামরিক নাগরিকসহ ইউক্রেনীয় সেনারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। পরে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বেসামরিক নাগরিক ও গুরুতর আহত সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। ইউক্রেনের সেনারা আত্মসমর্পণ করলে গত মাসে মারিউপোলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ বাহিনী।

হাজারের বেশি রুশ ধনকুবের দেশ ছাড়তে চান : ইউক্রেনে রুশ হামলা ও এর জেরে মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন রাশিয়ার ধনী ব্যক্তিরা। এ কারণে রুশ ধনকুবেরদের অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাতে চাইছেন। যুদ্ধের মধ্যে চলতি বছরই রাশিয়া ছাড়তে পারেন ১৫ হাজারের বেশি ধনকুবের। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। 

রুশ ধনকুবেরদের দেশ ছাড়ার এমন মনোভাবের কথা জানিয়েছে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, রাশিয়ার যেসব ব্যক্তির মোট সম্পদের পরিমাণ ১০ লাখ ডলারের বেশি, তাঁদের ১৫ শতাংশই ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর এখন আর নিজ দেশে থাকতে চাইছেন না। চলতি বছরই তাঁরা রাশিয়া ছাড়তে চান। সংখ্যাটি ১৫ হাজারের বেশি। প্রতিষ্ঠানটির গবেষক অ্যান্ড্রু অ্যামোইলস বলেন, ধনকুবেরদের রাশিয়া ছাড়ার ঘটনা নতুন নয়। গত এক দশকে রুশ ধনকুবেরদের অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ ও মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এ প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ