শেয়ারবাজারের দরপতন চতুর্থ দিনে গড়ালো
স্টাফ রিপোর্টার: নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রস্তাবিত বাজেটের পর দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। এতে দরপতন গড়ালো টানা চতুর্থ কর্মদিবসে। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের পতন হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। সেই সঙ্গে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।
গতকাল মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুর পাঁচ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে সূচকের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকেনি। এর মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটের পর লেনদেন হওয়া তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হল। বাজেট প্রস্তাবের দিনও শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। ফলে বাজেটের আগে ও পরে মিলে
টানা চার কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকল দেশের শেয়ারবাজার। এ দিন দুপুর ১২টার পর থেকে দরপতনের তালিকায় নাম লেখাতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে পতনের হার। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৮৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫৭টির দাম। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৬১ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সবকটি মূল্যসূচক কমলেও বাজারটিতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৭৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৭৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকের শেয়ার। এ দিন কোম্পানিটির ৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ৪৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বেক্সিমকো, মুন্নু ফেব্রিক্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, পিপলস ইন্স্যুরেন্স এবং স্যালভো কেমিক্যালস।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোটি ৫৪ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৯টির এবং ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাজেটে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পাঁচ দাবি : নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রস্তাবিত বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় পাঁচটি বিষয় বিবেচনার দাবি জানিয়েছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে গতকাল মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক এসব দাবি জানিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের ফলে বহু বিনিয়োগকারী চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ৩৪ জন বিনিয়োগকারী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন। পুঁজিবাজারের পতনের দায় তৎকালীন সরকারের ওপর পড়েছিল। এরপর থেকে পুঁজিবাজার আর পূর্ণাঙ্গ স্থায়ী স্থিতিশীলতা পায়নি। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বর্তমান কমিশন দায়িত্বগ্রহণের পর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বর্তমানে এগিয়ে থাকলেও পুঁজিবাজারের মন্দাভাবের কারণে তা বার বার ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট করপোরেট কর হার কমানোকে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, বাজেটে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে সেই তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কর হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি একটি যুগান্তকারী প্রস্তাবনা।
বিনিয়োগকারীদের পাঁচ দাবির মধ্যে রয়েছে- অপ্রদর্শিত অর্থ ১০ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে বিনাশর্তে শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ১৫ শতাংশ করা, লভ্যাংশের ওপর থেকে ট্যাক্স প্রত্যাহার করতে করা, কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের প্রদানে ব্যবস্থাগ্রহণ করা, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।