শনিবার ০২ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

আত্মহত্যার মিছিল কি থামবে না?

 

মো. সাকিব হোসাইন

‘আত্মহত্যা’ শব্দটি খুবই পরিচিত একটি শব্দ। আর এ আত্মহত্যাকে যদি আমরা অতি সাধারণ ভাষায় উপস্থাপন করি তাহলে বলা যায়, আত্মহত্যা বা আত্মহনন বলতে যেকোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াকেই বুঝে থাকি। পত্রিকা এবং টেলিভিশনের পর্দায় আত্মহত্যার খবর খুবই সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু, এমন ভয়ংকর বা বিষাদময় ঘটনা কেন ঘটে? এসব ঘটনার পিছনে কী কী কারণ লুকায়িত রয়েছে? আর আত্মহত্যা কখন করে কিংবা আত্মহত্যাই কি একমাত্র সমাধান? এসব ব্যাপারে আমাদের মাঝে কতটুকু সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে? মূলত এমন হাজারো প্রশ্নের আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বর্তমানে দেশে শুধু আত্মহত্যার মিছিল চলছে। এ যেন এক প্রতিযোগিতার খেলা কিংবা এই প্রতিযোগিতার কি কোনো শেষ নেই? কোনো স্থায়ী সমাধানের পথ কি নেই? প্রশ্ন থেকে গেলো। 

তবে আত্মহত্যার ঘটনা বা প্রবণতা বেশিরভাগ বিশ্ববিদালয়ের পড়–য়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। বাংলাদেশে এখন গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ জন করে আত্মহত্যার শিকার। মানুষের যখন বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি হয় বা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যায় তখন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। মানুষ এখন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে আত্মহত্যা করে। যা অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিবিএসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে এখন বছরে প্রায় ১৩ হাজার লোক আত্মহত্যা করছে। যা একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বড়ই অশনিসংকেতও বটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন। দৈনিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ২ হাজার ১৯১ জনের। প্রতি লাখে ১৬ জনের মতো প্রায়। 

এছাড়াও মানসিক চাপ, হতাশা, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, অবসাদ ও হেনস্তার শিকার হয়ে বর্তমানে মানুষ আত্মহত্যার পথ খুঁজে বের করেন। আত্মহত্যার এমন ঘটনায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অধিকভাবে সম্পৃক্ত। আবার পরীক্ষা অকৃতকার্য বা আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়া, বৈবাহিক সমস্যা, প্রেমঘটিত সমস্যা, বিবাহ বিচ্ছেদের সমস্যা, বিবাহ পরবর্তী জীবনের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য, স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের কারণ, আর্থিক সংকট থাকা অথবা আর্থিক দুরাবস্থা থেকে মুক্তি না পাওয়া এবং সম্প্রতি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও ভালো চাকরির সন্ধান না পাওয়ায় আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে ব্যাপকহারে আত্মহত্যার মিছিল চলছে। 

আত্মহত্যা করার অন্যতম কারণ হলো জীবনের মূল্য বুঝতে না পারা। সম্প্রতি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আত্মহত্যার ঘটনা ব্যাপকহারে বেড়েই চলছে। এ ব্যাপারে কি শিক্ষার্থীদের কোনো বাঁচার পন্থা নেই? অবশ্যই শিক্ষার্থীদেরকে সব ধরনের মানসিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আত্মহত্যা একটি অপসংস্কৃতি এবং অন্যায়ও বটে। সবাইকে আত্মহত্যার কারণ জানতে হবে। পাশাপাশি এমন অপসংস্কৃতি থেকে সচেতনতার ভিত্তিতে বেরিয়ে আসতে হবে। মানুষ যখন সামাজিক মর্যাদা হারিয়ে ফেলে তখনও আত্মহত্যা করে থাকে। এসব আত্মহত্যার শিকার সাধারণ মানুষ, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতশত শিক্ষার্থী। যাদের কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, কেউ মেডিকেল কলেজে, কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেউ কলেজের কিংবা কেউ স্কুলের এবং কেউ কেউ আবার হাইস্কুলেরও। 

এবার আসুন এর সমাধানে কী কী করণীয়? 

সমাধানের তাগিদে আমাদেরকে সর্বপ্রথম মানসিক চাপ ও সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। তাছাড়াও কোনো কিছুতে আমাদের হতাশ হলে চলবে না বরং হতাশাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। তাহলেই একটি সুন্দর জীবন উপহার পাওয়া সম্ভব। অনেক সময় আত্মবিশ্বাসের যথেষ্ট ঘাটতির কারণে সমস্যার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে যাই। তা থেকে উত্তরণের পন্থা অনুসন্ধান করতে হবে। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। কথিত আছে- ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু আর তর্কে বহুদূর’। মূলত আত্মবিশ্বাসই আপনাকে সামনের দিকে পথ চলাতে সহায়ক হবে। এতে করে আত্মহত্যার মিছিল থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা সম্ভব হবে। অনেক স্ত্রী স্বামী কর্তৃক হেনস্তার শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন কিন্তু এমনটা মোটেই যথোচিত নয়। কেননা, আপনাকে একটা সমাধানের দিকে এগোতে হবে। উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে অধিকহারে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।

 

এসব আত্মহত্যা আমাদের দেশ ও সমাজের অনগ্রসরতার প্রধান ধারক ও বাহক। শিক্ষার্থীরা মূলত মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এখন এমন অনাকাক্সিক্ষত পথে ধাবিত হচ্ছে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে ব্যর্থ হওয়া অথবা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আশানুরূপ সাফল্য না দেখা কিংবা সমাজ ও রাষ্ট্রে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারার কারণে সবাই বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যাকেই একমাত্র সমাধানের পথ হিসেবে মনোনীত করে। যা কোনোভাবেই ঠিক নয়। অথচ আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন আমাদের মানসিক সুস্থতা এবং ব্যাপক সচেতনতা। কারণ, সচেতনতাই পারে এমন অপসংস্কৃতিকে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দূর করতে। সচেতনতাই পারে আমার, আপনার এবং সকলের আত্মহত্যা রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে। তাই আসুন আত্মহত্যাকে না বলি, নিজেকে ভালোবাসি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ