আর কত অবমূল্যায়ন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই টাকার অবমূল্যায় চলছে তো চলছেই। সে ধারাবাহিকতায় ডলারের বিপরীতে টাকার দাম আরও ৫০ পয়সা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা; আগে যা ছিল ৯২ টাকা। এই দরকে ‘আন্তঃব্যাংক দর’ বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রথম দিনেই ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে গত দুই মাসে ডলারের দাম ৬ টাকার বেশি বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা ইতোমধ্যেই আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
নতুন এ দামে সরকারি আমদানি বিল মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। ফলে এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর বলে মনে করা হচ্ছে। এই দরে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ডলারের বিপরীতে টাকার হিসাব করে থাকে। তবে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রতি ডলারের জন্য ৯৫ টাকার বেশি দাম নিচ্ছে। আর প্রবাসী আয় আনছে ৯৩ থেকে ৯৪ টাকা দরে।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, ‘ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করছে না। ব্যাংকগুলো যে দামে লেনদেন করে, তার মধ্যে একটি দর বিবেচনায় নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এক্ষেত্রে ৯২ টাকা ৫০ পয়সাকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এই দামেই ডলার বিক্রি চলছে।’ কিন্তু বিষয়টিকে অনেকেই যৌক্তিক মনে করছেন না।
এর আগে প্রবাসী আয় আনতে ডলারের দামের সীমা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। এরপর থেকে নিয়মিত বাড়ছে ডলারের দাম। আর তা এখন একটি চলমান প্রক্রিয়া।
টাকার ধারাবাহিক অবমূল্যান আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জন্য কোন সুখবর না হলেও এতে আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে লাভবান হবেন রপ্তানিকারকরা। মূলত, সাধারণত রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিতেই স্থানীয় মুদ্রায় অবমূল্যায়ন করা হয়। রপ্তানিকারকেরা অনেক দিন ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আর টাকার ধারাবাহিক অবমূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের সে দাবিই পূরুণ হলো। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে ভিন্ন কথা। সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকটা বাধ্য হয়েই টাকার দাম কমিয়েছে।
আমদানি পণ্যের দাম ও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে তা মেটানো যাচ্ছে না। এতে তৈরি হয়েছে ডলার-সঙ্কট। সঙ্কট মোকাবেলায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে বেড়ে গেছে ডলারের দাম। কিন্তু এই প্রক্রিয়া চলমান থাকলে বা দীর্ঘায়িত হলে তা অর্থনীতির জন্য কোন সুখবর বয়ে আনবে না। তাই টাকার লাগামহীনভাবে অবমূল্যায়ন না করে এখনই একটি যুৎসই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা দরকার। অন্যথায় টাকার দরপতন কোনভাবেই রোধ করা যাবে না।