ঝড়-বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ফসলের মাঠ ॥ পাকা ধান ঘরে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা : ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে কয়েকদিন থেকে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতিরিক্ত এই বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরবঙ্গের শস্যভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ফসলি মাঠগুলো পানিতে ডুবে গেছে। জমে থাকা পানির কারণে ডুবে গেছে পাকা ও আধাপাকা ধান। অনেক জমিতে ডুবে যাওয়া ধান থেকে চারা বের হচ্ছে। তবে এমন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফলে মাঠে পচতে থাকা ধান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তাড়াশ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৩৫০ হেক্টর। সরেজমিনে দেখা যায়, তাড়াশের মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের হামকুড়িয়া দক্ষিণ শ্যামপুর আমবাড়িয়া ঘরগ্রাম, তালম ইউনিয়নের চৌড়া, গুল্টা, দেশীগ্রাম ইউনিয়নের আড়ংগাইল, মাধাইনগর ইউনিয়নের ভাদাস, তাড়াশ পৌর এলাকার কোহিত, আসানবাড়ি, বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া, বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমিতে বৃষ্টির পানি জমে ধান ডুবে গেছে। গুল্টা গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে কিন্তু শ্রমিক নেই। দু-একজন যা পাওয়া যায় তারাও বেশি মজুরি চায়। প্রতিবছর পাবনা থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিকরা আমাদের এখানে আসে। কিন্তু এবছর এখনো অধিকাংশ গৃহস্থের বাড়িতে কোনো শ্রমিক আসেনি। তাই শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। হামকুড়িয়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে আমার জমির পাকা ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছি না। এই ধান যদি এক-দুই দিনের মধ্যে কাটতে না পারি তাহলে আমার অনেক লোকসান হবে। এদিকে, তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লুনা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমের শুরু থেকে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীসহ সবস্তরের কর্মকর্তারা কৃষকদের নানা দিকনির্দেশনা দিয়ে উৎসাহিত করেছেন। মাঠের শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা একটু সমস্যায় পডেছেন। প্রতিবছরের মতো এবছর তেমন বাইরের শ্রমিক দেখছি না। তবে যেহেতু ঈদ চলে গেছে এখন শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে চলে আসবেন।
নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর): বৈশাখের শেষের দিকে মুষুলধারে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ সহ বিভিন্ন উপজেলায় মাঠের পর মাঠে আধাপাকা বোরো ধান ঘরে তুলতে হিমসিম খাচ্ছে চাষিরা। বোরো ধান রোপণের প্রথম থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় বোরো চাষের ফলন হয়েছে ভালো। বৈশাখের ঝড়ে আর মাঝে মাঝে বৃষ্টির কারণে মাঠে থাকা ধান ঘরে উঠাতে চাষিরা একদিকে শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি, অপরদিকে বৈরী আবহাওয়ায় দিশেহারা উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকা চাষিরা। শুক্রবার সকাল থেকেই এবছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে এর কারণে মাঠে এখনও ৭০ ভাগ কাচাপাকা ধান মাঠেই পড়ে আছে। বর্তমানে গত বছরের তুলনায় কৃষকদের কর্তন, মাড়াই খরচ ৩গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাজারে মিনিকেট, আটাশ জাতের ধান ৯০০-৯৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। কর্তন মাড়াইয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করায় উৎপাদন হওয়া ধানে খুব একটা সাশ্রয় পাবে না কৃষকেরা। এদিকে এ সপ্তাহেই সরকারি ভাবে কৃষদের নিকট থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে ধান ক্রয়ের আনুষ্ঠানিক ভাবে খাদ্য গোডাউনে উদ্বোধন করা হলেও সাধারণ কৃষক পর্যায়ে এখনও সরকারি দরে ধান দিতে পারছে না কৃষক। তবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ হালিমুর রহমান জানান, উপজেলার কৃষি দপ্তর থেকে বোরো চাষি কৃষকের তালিকা পেলেই উপজেলা বোরো ধান ক্রয় ও সংগ্রহ কমিটি ধান নেয়া শুরু করবে। তবে এবছর রোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষিরা।