ঢাকা,সোমবার ৪ December 2023, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

সেহরিতে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার 

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্কঃ রোজায় সেহরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সময় খাবারের ওপর নির্ভর করবে আপনার সারা দিনের রোজা। সেহরির খাবারে সঠিক খাদ্য নির্বাচনে জোর দিতে হবে সবার আগে। সারাদিনের পুষ্টি, শক্তি ও আর্দ্রতার মূল যোগান যেহেতু সেহরির খাবার থেকেই পাওয়া হয়, তাই এ সময়ে কোন খাবারগুলো গ্রহণ জরুরি সেটাই জানানো হয়েছে আজকের ফিচারে।

ডিম

প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান হল ডিম। প্রোটিন ছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ, যা সারাদিনের শারীরিক শক্তির যোগান তৈরি করে। এ কারণে প্রতিদিন সকালের নাশতায় ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রমজানে সকালের নাশতার পরিবর্তে সেহরির সময়ে ডিম খেয়ে নিলে রোজা রাখার ফলে দুর্বলতা দেখা দেবে না।

ওটস

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের সবচেয়ে বড় উপকারিতাটি হল, তা শরীরকে সবল রাখতে ও দিনভর শক্তির যোগান দিতে কাজ করে। সেদিক থেকে ওটস খুব ভালো একটি খাবার। এটা থেকে একইসাথে স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন পাওয়া যাবে। দুধ ও কলার সাথে ওটসের স্মুদি তৈরি করে খাওয়া যায় কিংবা দুধ, কলা ও অন্যান্য ফল এবং বাদামের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়।

মাছ 

তৈলাক্ত মাছকে বলা হয় জীবনীশক্তি প্রদানকারী খাবার। তবে তেলে ভাজা মাছ থেকে খুব একটা পুষ্টি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বিধায় পরামর্শ দেওয়া হয় মাছ রান্নার আগে তেলে না ভাজার জন্য। এছাড়া তেলে ভাজা যেকোন খাবার পিপাসা বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের জন্য মুরগির মাংস তুলনাহীন। পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণের জন্য সেহরিতে অল্প পরিমাণে মুরগির মাংস খেতে পারলে খুবই ভালো হয়। বিশেষত সবজির সাথে মুরগির মাংসের মিশেলে তৈরি তরকারি তৈরি করতে পারলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।

ফল ও সবজি

প্রাকৃতিক এই দুই ঘরানার খাদ্য উপকরণে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির পাশাপাশি থাকে জলীয় অংশ। যা অনেকাংশের শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে। কমলালেবু, আঙ্গুর, আনারসহ আম, জাম, তরমুজসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি পাওয়া যাবে। অন্যদিকে শাক, শসা, টমেটো, লেটুসসহ সহজলভ্য সকল সবজিতেই রয়েছে জলীয় অংশ। যা শরীরকে শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে নিরাপদ রাখতে কাজ করবে। ফলে দিনভর কাজ করার শক্তি পাওয়া যাবে।

বাদাম

অল্প পরিমাণে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি ও শক্তি পেতে চাইলে বাদামের বিকল্প নেই। বিশেষত বাদামের সাথে দুধের মিশ্রণে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হবে, যদি দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহণে সমস্যা না থাকে। বিভিন্ন ধরনের মিশ্র বাদাম থেকে পাওয়া যাবে ফ্যাট, প্রোটিন, কার্বহাইড্রেট, আঁশ, ভিটামিন-ই ও ম্যাগনেসিয়াম।

এছাড়া খেজুর, বাদামি চালের ভাত ইত্যাদি খাবার আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি জোগাতে সক্ষম।

পুষ্টিবিদ আজমেরী রহমান বলেন, সেহরিতে আমরা ভাত, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম সবই গ্রহণ করতে পারব। তবে একই আইটেমে মাছ ও মাংস গ্রহণ করা যাবে না। এতে হজমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করা যাবে না। এতে পিপাসা বাড়বে। তাজা ফল গ্রহণ করলে সবচেয়ে ভালো হয়। তবে যে ফলের মধ্যে পানি বহন করে বেশি, সেই ফলগুলো আমাদের সারা দিনের ক্লান্তি মেটাতে এবং ডিহাইড্রেশন থেকে দূরে রাখতে পারবে। সে রকম ফলের মধ্যে তরমুজ, পেঁপে ইত্যাদি রয়েছে।

এ পুষ্টিবিদের পরামর্শ, সেহরিতে চা-কফি ইত্যাদি গ্রহণ করবেন না। এ খাবার পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন আপনাদের করে ফেলতে পারে। সেহরিতে কেউ দুধ খেতে চাইলে খেতে পারবেন, তবে ভারী খাবার গ্রহণের ৩০ মিনিট পর। যাঁদের ল্যাকটোজেন ইনটলারেন্স আছে, তাঁরা লো ফ্যাট মিল্ক গ্রহণ করবেন। স্যুপ, ডিম সেদ্ধ একপ্রকার আদর্শ খাবার রমজানের জন্য। সেহরিতে আপনি সেটা গ্রহণ করতে পারবেন এবং অবশ্যই প্রচুর শাকসবজি গ্রহণ করবেন, যাতে করে আমাদের শরীরে নিজে নিজে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে কোভিড১৯-এর বিপক্ষে।

অনেকে মনে করে, সেহরিতে প্রচুর খাবার খেতে হবে, যেহেতু পরের দিন ১৫ ঘণ্টার মতো রোজা রাখতে হবে, তাহলে এত শক্তি এত পানি কোথায় পাব? এ ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ, সেহরিতে প্রচুর খেলেই আপনার সারা দিনের রোজার ক্লান্তি মিটে যাবে, বিষয়টি ভুল। শুধু পরিমিত ও সুষম খাবারই পারে আপনার রোজাকে ক্লান্তিহীন করতে। সবশেষে গর্ভবতী, ডায়াবেটিক, কিডনি রোগী, হৃদরোগী ইত্যাদি বিশেষ রোগে যাঁরা আক্রান্ত, তাঁরা অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী রজমানে ডায়েট চার্টটি করে নেবেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ