ভয়াবহ মাদক ‘ডিওবি’ খুলনায় জব্দ
* পোলান্ড থেকে কুরিয়ারে আসছে
* ডার্কওয়েব বিটকয়েন ব্যবহার করে আনা হয়
* এলএসডি ও ডিওবি মাদকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
খুলনা ব্যুরো : বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো ভয়াবহ ‘ডিওবি’ (ডাইমেথ অক্সি ব্রোমোঅ্যামফেটামাইন) মাদক এর চালান খুলনায় জব্দ করা হয়েছে। কুরিয়ার মাধ্যমে পোলান্ড থেকে দেশে এসেছে ভয়াবহ ওই মাদক। মাদক চোরাকারবারীরা ডার্কওবেয়ে বিটকয়েন ব্যবহার করে পোলান্ড থেকে উক্ত মাদক ক্রয় করেন। কিছুটা এলএসডির মতো দেখতে এই মাদকের চালান আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো (উত্তর)।
সোমবার (২২ নবেম্বর) ঢাকা মেট্রো (উত্তর কার্যালয়) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি বিশেষ টিম খুলনা নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আটককৃতরা হচ্ছে মো. আসিফ আহম্মেদ শুভ (৩১), অর্ণব কুমার শর্মা (৩০) এবং নগরীর বয়রাস্থ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার মো. মামুনুর রশিদ। এদের কাছ থেকে ১০ পিস এলএসডির এবং ৯০ পিস নতুন মাদক ডিওবি উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে ওই দিন রাতে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্ধারকৃত মাদকের মুল্য ১০ লাখ টাকা।
ঢাকা মেট্রো (উত্তর কার্যালয়) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, আমরা ৪-ব্রোমো-২, ৫-ডাইমিথোক্সি এমফিটামাইন যা সাধারণত ডাইমিথোক্সি ব্রোমো এমফিটামাইন, ব্রোল এমফিটামাইল, ব্রোমো-ডিএমএ অথবা ডিওবি (উঙই) নামক নতুন একটি মাদক উদ্ধার করতে সক্ষম হই যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) এর ‘ক’ শ্রেণীভুক্তমাদক। এটি দেশের তালিকাভুক্ত ‘ক’ শ্রেণির মাদক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা দেখতে কিছুটা এলএসডির মতো।’ আমরা প্রথমে একটি কী ওয়ার্ড-ঝঃধংয’ এর সূত্র ধরে গত আগস্ট মাস থেকে অনুসন্ধান করতে থাকি এবং আমরা ধারণা পাই যে, একটি নতুন মাদক দেশে প্রবেশ করেছে। পরবর্তীতে আমরা কয়েকটি চক্রকে আমরা আইসসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তাদের দেয়া তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা এল.এস.ডি ও ডিওবি (উঙই) মাদকের এই চক্রটির সন্ধান পাই এবং গত ২১ নবেম্বর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের এলিফ্যান্ট রোড শাখা হতে ৫টি এলএসডি’র ইষড়ঃঃবৎ/ঝঃৎরঢ় জব্দ করা হয়।
এখান থেকে জানা যায়, মূল হোতা খুলনায় অবস্থান করছে। ঢাকা মেট্রো (উত্তর কার্যালয়) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এই সূত্র ধরে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পরিচালক (অপারেশনস্ ও গোয়েন্দা) কুসুম দেওয়ান অনুমতি সাপেক্ষে, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর) এর উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান এর প্রত্যক্ষ মনিটরিংয়ে এবং সহকারী পরিচালক, ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (্উত্তর) মো. মেহেদী হাসান এর নেতৃত্বে এ কার্যালয়ের একাধিক সার্কেলের সমন্বয়ে রেইডিং টিম গঠন করা হয়। এই টিমটি ২২ নবেম্বর সকালে ঢাকা হতে খুলনা গমন করে দুপুর ২টায় খুলনা মহানগরীর বয়রা মুজগন্নী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। নগরীর মুজগুন্নী এলাকা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মৃত আফসার উদ্দিনে পুত্র মো. আসিফ আহমেদ শুভকে ১০ পিস এলএসডিসহ আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসিফ আহমেদ শুভ তাদেরকে জানায়, ৫টি এলএসডি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সুন্দরবনের কুরিয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার মো. মামুনুর রশীদের সহায়তায় তথ্য গোপন করে ঢাকায় প্রেরণ করে। পরবর্তীতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে শুভ আরো জানায় তার বন্ধু অর্ণব কুমার শর্মা বাসায় বিপুল পরিমান ডিওবি (উঙই) নামক নতুন মাদক আছে। উক্ত টিম অনর্ব কুমার শর্মা বাসায় অভিযান পরিচালনা করে ৯০ পিস ডিওবি (উঙই) ইষড়ঃঃবৎ/ঝঃৎরঢ় নামক মাদক জব্দ করা হয়।
উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, প্রথমে আমাদের ধারণা ছিলো ওগুলো সবই এলএসডি মাদক। আসামিদের খুলনা থেকে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের জানতে পারি এলএসডি’র চেয়েও ভয়াবহ মাদক ডিওবি। শুভ’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে ডার্কওয়েব ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি-বিটকয়েন-এ পেমেন্ট করে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পোল্যান্ড থেকে উক্ত মাদক সংগ্রহ করে। এই মাদকডিওবি (উঙই) সেবন করে তার রেভ্যুলেশনারি চিন্তা ভাবনা জাগ্রত হয় এর মাধ্যমে সে পৃথিবীতে পরিবর্তন আনতে চায়।
উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী তেজগাঁও সার্কেল পরিদর্শক মো. হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া বাদী হয়ে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। উদ্ধারকৃত আলামতের আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। এ চক্রের সাথে আরো কোন মাদককারবারি জড়িত কিনা তা অনুসন্ধানে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসিফ আহম্মেদ শুভ পেশায় একজন ওয়েব ডিজাইনার। ৮ মাস ধরে এই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। ডার্কওয়েব নামে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্রিপ্টক্যারেন্সি এবং বিটকয়েন ব্যবহার করে মাদক পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আনতো। শুভ খুলনা পলিটেকনিট এ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশুনো করতেন। শুভ নিজেই ডিওবি নামক মাদক সেবন করতো এবং বিক্রিও করতো। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ডিওবি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। পরবর্তীতে নিজে আনেন এবং ঢাকা খুলনার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট সরবরাহ করতো। ২৫০ পিস স্টিপ আনে শুভ। অনর্ব কুমার শর্মা সাবেক কৃষি কর্মকর্তা ছিলেন। পড়াশোনা করেছিলো খুলনা নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
উল্লেখ্য, ঢাকা মেট্রো (উত্তর কার্যালয়) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি বিশেষ টিম। ২২ নবেম্বর বিকেলে নগরীর বয়রা পূজা খোলা ও মুজগুন্নীতে অভিযান চালিয়ে ভয়ঙ্কর এলএসডি ও ডিওবি মাদক বিক্রেতা মো. আসিফ আহম্মেদ শুভ (৩১) ও অর্নব কুমার শর্মা (৩০) আটক করেন। এদের কাছ থেকে ১০ পিস এলএসডি ও দেশে প্রথম নতুন মাদক ডিওবি ৯০ পিস উদ্ধার করা হয়।
এ সময় মাদক পাচারের সহযোগিতা হিসেবে বয়রা শাখা সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার মো. মামুনুর রশীদ (৩২) কেও আটক করা হয়। এলএসডি ও ডিওবি বিক্রেতারা এই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকা ও খুলনার বিভিন্ন জায়গায় প্রেরণ করতেন।