শুক্রবার ৩১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

বাংলাদেশে ভারতেরসহ বিদেশী সব চ্যানেল বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার : বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে এমন সব বিদেশী চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে। এতে করে গতকাল শুক্রবার থেকে ভারতের-সহ বিদেশী সব চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশী চ্যানেলগুলো তাদের মূল কনটেন্টের সাথে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না-সরকারের তরফ থেকে এমন নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বিদেশী সব টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্ধ রয়েছে।
দর্শকদের উদ্দেশে কেবল অপারেটরদের দেয়া একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে, সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের পর বিজ্ঞাপনযুক্ত কোনো বিদেশী চ্যানেলের সম্প্রচার করা যাবে না। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কেবল অপারেটররা বিজ্ঞাপন থাকা বিদেশী চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে। এর ফলে সৃষ্ট অসুবিধার জন্য তাঁরা দুঃখিত। কেবল অপারেটররা জানিয়েছেন, বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে এমন বিদেশী চ্যানেলগুলো থেকে বিজ্ঞাপন কেটে বাদ দিয়ে সম্প্রচার করা সম্ভব নয়। এ কারণে তাঁরা চ্যানেলগুলো দেখানোই বাদ দিয়ে দিয়েছেন।
কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ গণমাধ্যমকে জানান, অনেকে মনে করছেন, কেবল অপারেটররা বুঝি কোনো কারণে বিদেশী চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু বিষয়টি হলো, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে- এমন বিদেশী চ্যানেল বাংলাদেশে দেখানো যাবে না। তাই তা তাঁরা দেখানো বন্ধ রেখেছেন। আনোয়ার পারভেজ জানান, সরকার পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো নির্দেশনা দিলে বা পদক্ষেপ নিলে, তাঁরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। বিভিন্ন এলাকায় কেবল অপারেটররা নিজেদের মতো করে এই একই বার্তা দিচ্ছেন।  গত ২ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাটকো, বিদেশী চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউটর, আকাশ ডিটিএইচ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক শেষে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে সবাইকে অবহিত করেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ জানান, আইন অনুযায়ী দেশে বিদেশী চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনমুক্ত (ক্লিন ফিড) সম্প্রচার বাস্তবায়নে গতকাল শুক্রবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
তিনি বলেন, ১ অক্টোবর থেকে আমরা সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব। কোনো বিদেশী চ্যানেলে ক্লিন ফিড দেখানো না হলে এবং মন্ত্রণালয়, টেলিভিশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ক্যাবল অপারেটর ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে ক্যাবল লাইনে সম্প্রচারের জন্য টেলিভিশনগুলোর নির্ধারিত ক্রমের ব্যত্যয় হলে বা কোনো ক্যাবল অপারেটর আইন ভঙ্গ করে নিজেরা বিজ্ঞাপন ও অনুষ্ঠান প্রদর্শন করলে গতকাল শুক্রবার থেকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার কী চায়: মূলত বাংলাদেশের আইনে বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বাংলাদেশে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ নেই। এ কারণে আগেও কয়েক দফায় বিদেশী চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ দফায় নতুন করে আবার একই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর কারণ হিসেবে আইনের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব হারানোর বিষয়টিও বড় করেই এখন চিন্তা করা হচ্ছে। বিদেশী চ্যানেলে প্রচারিত বিজ্ঞাপন থেকে একদিকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না, আবার ওইসব চ্যানেল বাংলাদেশে জনপ্রিয় হওয়ায় অনেক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য বিদেশী চ্যানেলকেই বেছে নিয়েছে।
দিনের পর দিন তারা সময় নেবে, কালক্ষেপণ করবে, এটি হয় না। ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপালসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ক্লিন ফিড ছাড়া বিদেশী চ্যানেল কেউ দেখাতে পারেন না। আর আমাদের দেশে বিদেশী চ্যানেলগুলো ক্লিন ফিড পাঠাচ্ছে না, এ অজুহাতে এখানে ক্লিন ফিড চালাবে না, এটা হয় না। মন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর বিদেশী সব টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্ধ করে দেন কেবল অপারেটররা। ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্লাটফর্ম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটি নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া সম্পন্ন হয়েছে। নীতিমালা পাস হলে, প্লাটফর্মগুলোকে তা অনুসরণ করতে হবে। কোনো ব্যত্যয় হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বাস্তবায়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এটকো: বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বাস্তবায়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের টিভি চ্যানেল মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অভ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (এটকো) এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)। বিজেসি এ নিয়ে লিখিত বিবৃতি দিয়েছে।  
বিজেসির বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৬ সালের ক্যাবল নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনে এ বিধান থাকলেও এর আগে কখোনই এটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেসি। এতে দেশি টেলিভিশন চ্যানেল শিল্পের আর্থিক সংকট কমবে এবং উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সম্প্রচারকর্মীরাও এর সুফল পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ