কল্পনাশক্তি মহাজাগতিক বিজ্ঞানের বিজ্ঞান

ডা. শওকত আলম:
কল্পনাশক্তি মহা বিজ্ঞানের বিজ্ঞান আর সকল সৃজন শক্তির উৎস ধারা। বিজ্ঞান শক্তির বিজ্ঞান হলো কল্পনাশক্তি, দর্শনের দর্শনশক্তির দর্শন হল কল্পনাশক্তি আর বিজ্ঞানের বিজ্ঞান, মহাবিজ্ঞান হল কল্পনাশক্তি। সকল প্রকার শক্তির, সকল প্রকার তথ্যের ও শতকোটি তত্ত্বের মূলে লুকিয়ে আছে কল্পনাশক্তির মৌলিক নির্যাস।
কল্পনাশক্তির বাইরে আমরা এক কদম পাও রাখতে পারি না। কি নাগরিক জীবন, কি সামাজিক জীবন, কি শহর কেন্দ্রীক জীবন, কি অজপাড়া গাঁয়ের জীবন, কি বস্তিজীবন, কি রাজনৈতিক জীবন, কি সাংগঠনিক জীবন, কি ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবন, প্রতি ক্ষেত্রে কল্পনা কল্পনা আর কল্পনার নিবিড় যাদুর ছায়ায় ঘেরা। কল্পনার বাইরে কেউ কোনদিন চলতে পারিনি আর বাকী জীবনে বা ভবিষ্যতেও কেউ কখনো চলতে পারবে না। এটা হলফ করে বলতে পারি কল্পনাশক্তির মহাজাগতিক ক্ষমতা। তবে সব ক্ষমতার উৎস তিনি, এ কথাটাও কিন্তু সকলকে সর্বদা মনে রাখতে হবে। তাই কল্পনাশক্তি মহাজাগতিক বিজ্ঞানের বিজ্ঞান।
সৃজনশীল জীবনধারার কথা চিন্তা করুন। একজন সৃজনশীল ব্যক্তি সে কবি হোক বা বিজ্ঞানী হোক বা রাজনীতিবিদ হোক, সে যে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক ব্যক্তি হোক, তার গন্তব্যের পথে পৌঁছাতে হলে সর্ব প্রথম তাকে যে কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে হবে সেটি প্রধানত কল্পনাশক্তি। কল্পনাশক্তির বৃত্তের মধ্য থেকে তাকে অতিচেতন বা অবচেতন মনে পৌঁছাতে হবে। নচেৎ তার কোন কর্মদক্ষতা কোন কাজে আসবে না।
তাই তাকে কল্পনাশক্তির নিখুঁত মাপকাঠিতে নতজানু হতে হবে। তারপর তার সকল কর্ম আর যোগ্যতা কর্মদক্ষতা,কর্মগুণের সমন্বয় সাধনের ইতিবৃত্তের ক্ষুরধারায় কল্পনাশক্তির বিকাশের পথে হাঁটতে হবে। তাহলে সাফল্যের নতুন নতুন দিকদর্শনের সূত্র অলৌকিকভাবে হাতের মুঠে ধরা দেবে। তখন আপনার সকল প্রকার ব্যর্থতা, বাধা, বিপত্তি নিমিষে বিনাশ হয়ে সফলতার দ্বার উম্মোচিত হবে অতি সহজে। কল্পনাশক্তির বৃত্ত যার যত শক্তিশালী আর এই ধারাবাহিকতার গতিশক্তি আলোক জ্যোতির অতিচেতনে পৌঁছাতে পারে। তার দ্বারা সহজতর হয়ে যায় সকল প্রকার কল্পনাশক্তির বহুমুখি ব্যবহার। কল্পনাকে বাদ দিয়ে এক ইঞ্চি পথও পাথেয় হতে পারে না কোনদিন, কোনকালে। এই জগৎসংসারে যা কিছু চোখের সামনে দেখি, প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে তা কেবল কল্পনাশক্তির সূত্রধারার সোনালী ফসলের সম্ভার।
যে জাতির মধ্যে কল্পনাশক্তি যত ধারালো, সে জাতি বিশ্বের বুকে তত কর্তৃত্ব, কৃতিত্ব, ও নেতৃত্বশালী ভূমিকা রাখে এবং অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক , রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য হিসেবে সর্বত্র বিবেচিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করে বিশ্বের বুকে।
কিন্তু আমরা ভৌগোলিকভাবে এই বিষয়টি কখনো গুরুত্বের সাথে ভাবতে পারি না আবার কখনো চিন্তাও করতে পারি না। কারণ একটাই তা হলো আমরা কখনো মুক্ত চিন্তা, মুক্ত মনোভাব পোষণ, মুক্ত সাধনা করতে পারি না। আমরা যতটা মুক্ত মানুষ হতে পারবো, ততটুকুই মুক্ত নির্যাস পরিসর কল্পনাশক্তি আত্মজগতে এসে ভর করবে। যে জাতির মধ্যে কল্পনাশক্তির ব্যবহার নেই সে জাতি তো চিরপরাধীন। সে জাতিকে পৃথিবীর কেউ কখনো চেনে না, চিনতেও পারে না। কল্পনাশক্তির ব্যবহার না থাকলে একটি বা একাধিক জাতিগোষ্ঠী পৃথিবীতে বর্বর জাতিতে আত্মপ্রকাশ করতে পারে এবং সেই জাতিও আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এই পৃথিবীর আধুনিকতার আলো বাতাস তাদের জন্য অভিশাপ রূপে তাদের ঘিরে ফেলবে।
সাহিত্য সংস্কৃতি জনকল্যাণতন্ত্র, রাজনৈতিক দিকদর্শন, সৃজনশীলতন্ত্র কল্পনার বাইরে আত্ম প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অবকাশ নেই বা বিকাশের, প্রকাশের ক্ষমতা কল্পনাশক্তিকে পাশ কাটিয়ে একতিল পরিমাণও সৃজনশীলতাকে ভাবা যায়। তাই রাষ্ট্র ক্ষমতা বা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সৃজনশীল মহলকে একত্রিত করে, সৃজনশীল ক্ষমতাকে বেগবান করার জন্য উদারনীতি, উদার মুক্ত মনোভাব, পরিকল্পিত ভাবে বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার নতুন পথ তৈরী করা। তাহলে পৃথিবী মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে আধুনিকতার আকাশচুম্বির দ্বারপ্রান্তে। তখন পৃথিবী হবে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির স্বর্গীয় স্রোতধারায় চলার বা সেতু পারাপারে পাবে বেগবান গতিশক্তির মূল উৎস ধারার গতিপথ।
বিশ্ব অর্থনীতি,বিশ্ব বাণিজ্যের মূলে আছে কল্পনাশক্তি ও পরিকল্পনা শক্তির সুষম ব্যবহার নীতি। সেখানেও ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে কল্পনার উপর নির্ভর করে, আঞ্চলিক জলবায়ুকে কেন্দ্র করে পথ চলতে হয়। কল্পনা নতুন নতুন আকার আকৃতির সন্ধান দেয়,রূপ অরূপের সৃজন করে বিশ্বকে ঘোর তাক লাগিয়ে দেয়।
আধুনিক দিকদর্শনশাস্ত্র এই আদর্শের মধ্য থেকে সাংগঠনিক শক্তি কাঠামোকে অধিকতর বিদ্যুৎগতির ন্যায় বা জ্যামিতিক হারে বেগবান করতে হবে আর আদর্শগত ভাবধারা এবং কল্পনার কাছে শতভাগ কায়মনোবাক্যে ধন্না দিতে হবে। কল্পনাশক্তির বাহিরে আদর্শিক দর্শনের কোন প্রকার বিকাশ লাভ করা সম্ভব নয়। যেখানে কল্পনার ব্যাবহার নেই, সেখানে সে জাতির মধ্যে কোন উন্নতির ধরা ছোঁয়া নেই । কল্পনা হবে আদর্শিক চলার পথের একমাত্র আলোকবর্তিকা। আপনার মধ্যে জ্ঞানের পাহাড় আছে, কৌশলের শতকোটি ধারার দিক দর্শন আছে,
কিন্তু কল্পনাশক্তি নেই, আপনার কোন কিছুই নেই, আপনি অন্ধ বধির, আপনি গভীর জঙ্গলের পথহারা পথিক। কল্পনাশক্তির ব্যবহার না জানা থাকলে কোন অভিযানও সফলতার মুখ দেখবে না।
আপনাকে হিংস্র জানোয়ার যে কোন মুহূর্তে জীবন বিনাশ করে দেবে। কল্পনাশক্তি সূর্যের জ্যোতির ন্যায় তেজদীপ্ত হাজার ধারার উৎস ।
কল্পনার বাইরে কোন ব্যক্তি চলতে পারে না, সমাজ চলতে পারে না, জাতি চলতে পারে না, দেশ চলতে পারে না, মহাদেশ চলতে পারে না, আন্তর্জাতিক মহল চলতে পারে না, বিশ্বপরিক্রমা চলতে পারে না। এক কথায় বলা চলে কল্পনা ভিন্ন পৃথিবী চলতে পারে না। কল্পনা ছাড়া পৃথিবীটা মূল্যহীন অচল পয়সা।
কল্পনা চম্বুক শক্তির মত পৃথিবীকে ঘিরে শ্বাস প্রশ্বাস নিঃশ্বাসের নেয় প্রতিনিয়ত উঠানামা, চলাফেরা করে। কল্পনাশক্তির চর্চা নেই তো সকল চালিকা শক্তি, সকল উৎসধারা, সকল প্রকার সৃজনশীল শক্তি দিশেহারা নাবিকের মতো এক উদ্ভান্ত মাষ্টার। বিভিন্ন অক্ষর, ভাষা, ডলার টাকা, সাহিত্য, গণিত,আইন বিজ্ঞান ,রাষ্ট্রবিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান,ভূগোল,মানচিত্র, মৃত্তিকাশিল্প, শিল্পকারখানা, প্রকৌশলী নকশ্,া লোকপ্রশাসন, সমুদ্র আকাশ পথে দূঃসাহসিক অভিযান। সকল প্রকার কৌশল, সকল শক্তির মূলে লুকিয়ে আছে কল্পনাশক্তির অমর জয়গান। মাঠে ঘাটে কল্পনা, রান্নাঘরে কল্পনা,বাড়িতে পাড়া মহল্লায় কল্পনা, ইউনিয়ন পরিষদে কল্পনা,উপজেলা পরিষদে কল্পনা, নগর ভবনে কল্পনা, মেয়র ভবনে কল্পনা, জেলা পরিষদে কল্পনা,সংসদ ভবনে কল্পনা চম্বুক শক্তির মতো বৃত্তের চৌধি ঘিরে আছে মহাজাগতিকের ন্যায় দিকপাল এক মহানাবিক।
জাতিসত্তার উৎস ধারার চালিকা শক্তির একটি প্রধানতম ধারা হলো কল্পনাশক্তি। কল্পনাকে বাদদিয়ে কোনক্রমে কোন পথে অগ্রসর হওয়া, জাতিসত্তাকে কল্পনা বা ভাবাও যায় না। সবশক্তির মূলে আছে কল্পনাশক্তির ধরা ছোঁয়ার বিস্তর ক্ষমতা। ক্ষমতা ধরের ক্ষমতা হলো কল্পনাশক্তির আদি ত্বরিত জাগতিক বিদ্যুৎ সত্তার মহাবৃত্ত। যেখানে কল্পনার অভাব সেখানে সৃজনশীলতার আপাদমস্তক রুদ্ধতার চাবিকাঠি ও পৌণোপুণিক নিঃস্বতার প্রাদুর্ভাব। যেখানে কল্পনার অভাব সেখানে মহাশূন্যতায় ভরা মহাভাটিরটান। অসভ্যতার জগৎ লীলা। ভিত্তির ভিতরে বাহিরে বৃত্ত, প্রো-কল্পনা বৃত্ত। অনন্তকাল কল্পনার জালে পৃথিবী রাজবন্দির মহারাজ বন্দি। একজন আস্তিক,নাস্তিক, ধার্মিক, গণতন্ত্রবাদ,সমাজতন্ত্রবাদ,রাজতন্ত্রবাদ, পেশিতন্ত্রবাদ সৈরতন্ত্রবাদ, জনকল্যাণতন্ত্রবাদ, যত প্রকার বাদ বা নীতিবাদ, অবাদ ইজম আছে সকলকে কল্পনার কাছে মাথানত করতে হয়। তা না হলে কোন ইজমের চলন, বলন, শিক্ষণ প্রশিক্ষণ অচল বলে বিবেচিত হবে সর্বক্ষেত্রে। সকল প্রকার শক্তি ধরাশায়ী। কল্পনাকে ব্যবহার না করে কোন শক্তির এক তিল পরিমাণও চলতে, বলতে,চিন্তা করতে, সৃজন করতে পরে না। সকল প্রকার শক্তি ও সৃজনের সমাহার হলো কল্পনার বৃত্তর শিকলবন্দি। সকল বিন্দুর মহাবিন্দু হলো কল্পনাশক্তি।