করোনায় মারা যাওয়া ২৫ লাখের বেশি মানুষ এখন কেবলই স্মৃতি
ইবরাহীম খলিল : সেদিন ছিল ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি, নতুন এক করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর দিয়েছিল চীন। এরপর এক বছরের বেশি সময়ে পঁচিশ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনা। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ সময় শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ লাখ ৭ হাজার ৬২৪। চীনে শনাক্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটানো করোনায় প্রথম মৃত্যু হয়েছিল ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি। গত ১৫ জানুয়ারি বিশ্বে করোনার সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়ায়। টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও ভাইরাসটি যে এখনো অবাধে তার বিস্তার ঘটাচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আমাদের বিশ্ব এক হৃদয় বিদারক মাইল ফলকে পৌঁছালো। এই প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে এক একটি নাম, এক একটি মানুষের মুখ। তাদের হাসি মুখ এখন কেবল স্মৃতি। খাবার টেবিলে তাদের আসনটি চিরদিনের জন্য খালি হয়ে গেছে। প্রিয় মানুষটি যে ঘরে থাকত, সেখানে এখন কেবল নিরবতার প্রতিধ্বনি।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপ ৮ লাখ ৪২ হাজার ৮৯৪ মৃত্যু নিয়ে প্রাণহানিতে রয়েছে শীর্ষে। এরপর যথাক্রমে ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭২ নিয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। অপরদিকে উত্তর আমেরিকার দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় প্রাণহানি ৫ লাখ ২৮ হাজারের বেশি।
গবেষকরা বলছেন, খাতা কলমে যা হিসেব দেওয়া হচ্ছে তা অনেকটা অনুমান মাত্র। বাস্তবে তা আরও অনেক বেশি। সিয়াটলে ইউনিভঅর্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের পরিচালক ক্রিস্টোফার মা তাদের গবেষণার বরাত দিয়ে বলেছেন, এমনও হতে পারে যে করোনাভাইরাসে প্রকৃত মৃত্যুর এক পঞ্চমাংশই হিসাবের খাতায় আসছে না।আমরা দেখেছি, যত মৃত্যুর তথ্য রেকর্ডে আসছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। অবশ্য দেশে দেশে এই হারে উল্লেখযোগ্য হেরফের হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে, মহামারীর দ্বিতীয় বছরটি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে, অন্তত বছরের প্রথম কয়েক মাস।
ইউরোপ, আমেরিকার সাম্প্রতিক সংক্রমণ পরিস্থিতিই তাদের এই উদ্বেগের কারণ। যুক্তরাজ্যের পর ব্রাজিলেও করোনাভাইরাসের অতি সংক্রমাক নতুন কয়েকটি ধরনের দেখা মিলেছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিভিন্ন দেশকে নতুন করে লকডাউনের কড়াকড়িতে ফিরে যেতে হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, বিশ্বে করোনায় এখন পর্যন্ত যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে এরমধ্যে প্রায় অর্ধেকই পাঁচ দেশে। শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ৫ লাখ ৮ হাজার ৩০৭ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এরপর যথাক্রমে রয়েছে ব্রাজিল (২,৫১,৪৯৮) মেক্সিকো (১,৮৩,৬৯২), ভারত (১,৫৬,৮২৫) এবং যুক্তরাজ্য (১,২২,৩০৩)।
সরকারি হিসাবের ওপর ভিত্তি করে এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন দেশে পরিসংখ্যান সংস্থাগুলো দেওয়া পুনর্মূল্যায়িত হিসাব তালিকাভূক্ত হয়নি। যেমনটা ঘটেছে রাশিয়া, স্পেন ও ব্রাজিলের ক্ষেত্রে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রথম মৃত্যুর পর মাত্র নয় মাসের মধ্যে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর করোনায় প্রাণহানি দশ লাখ ছাড়িয়েছিল। এরপর মাত্র চার মাসের মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি প্রাণহানির সংখ্যা বিশ লাখ ছাড়িয়েছিল।
তবে গত জানুয়ারির শেষদিক থেকে বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমছে। গত সপ্তাহে মোট প্রাণহানি ৬৬ হাজার ৮০০ অথবা দৈনিক গড়ে ৯ হাজার ৫০০ জন। গত ২০ থেকে ২৬ জানুয়ারি সপ্তাহের তুলনায় যা অনেক কম। ওই সপ্তাহে মোট প্রাণহানি ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৪০০ অথবা দৈনিক গড়ে ১৪ হাজার ৫০০ জন।
গত সপ্তাহে করোনায় মোট মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ ইউরোপের ৫২ দেশ ও অঞ্চলে। তবে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় অবশ্য এই সংখ্যাটা ১৪ শতাংশে কমে গড়ে দৈনিক প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪০০ জন।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশে মৃত্যুহার ইউরোপ ও আফ্রিকার চেয়েও দ্রুতগতিতে কমেছে। লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলেও মৃত্যুহার কমেছে। প্রতি দশ লাখে মৃত্যুহারে এখনো শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিলে। সর্বোচ্চ মৃত্যুহারের দিক থেকে এরপরই যথাক্রমে রয়েছে ইউরোপের চেক রিপাবলিক, স্লোভেনিয়া, ব্রিটেন এবং ইতালি।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি : বাংলাদেশে মহামারি করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১১ জন। তাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩৯৫ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও ৪৭০ জনের শরীরে। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত দাঁড়াল ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৪ জন। করোনাভাইরাস নিয়ে শুক্রবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৭৪৩ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৮ জন। এর আগে বৃহস্পতিবার দেশে আরও ৪১০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান ৫ জন।