শুক্রবার ৩১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

সংগ্রামের সাধনা ও অঙ্গীকার

ড. সাইয়েদ মুজতবা আহমাদ খান: বাংলাদেশের শুধু নয় বরং সমগ্র বাংলাভাষার সংবাদপত্র জগতে একটি ব্যতিক্রমী দৈনিকের নাম দৈনিক সংগ্রাম। কি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে কি সংবাদপত্র পরিচালনা এবং সাংবাদিকতার কষ্ট কঠিন পথ পরিক্রমায় একদম ব্যতিক্রমী চরিত্রে এবং বৈশিষ্ট্য। কোনোদিক দিয়েই অন্য আর পাঁচটি দৈনিকের সঙ্গে তুল্য নয় দৈনিক সংগ্রাম।

সেই যে সত্তর সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে আজ অবধি যে প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিলো- তার ব্যত্যয় বা ব্যতিক্রম এর জীবনে তেমন একটা ঘটেনি। সংগ্রামের সে সাধনার গতি ও পথযাত্রার বিরাম-বিরতি না ঘটে বরং পদে পদে আরো শক্তি সঞ্চয় করে অভিযাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। পথে পথে রুঢ় বাস্তবতার  সম্মুখীন হয়েছে। কঠিনতম চড়াই উৎরাই টপকাচ্ছে- আর দৃঢ়তার সঙ্গে মঞ্জিলে মাকসুদের পানে এগিয়ে যাচ্ছে। 

ইতোমধ্যে পদ্মা মেঘনা বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষায় কতো যে স্রোত বয়ে গেছে- কত না ঘটন অঘটন ঘটে গেছে- কত না পরিবর্তন পরিবর্ধন ঘটেছে- খোল নলচে পালটে গেছে কতো কিছুর- কতো দৈনিকের কতো আদর্শের সৈনিকের! কিন্তু দৈনিক সংগ্রাম তার সাধনা ও আদর্শের পথে একদম অটল এবং অনঢ়। এদেশের আবাল বৃদ্ধ বনিতার জীবনকে ঐশী আদর্শের নিরিখে সাজিয়ে তুলবার অদম্য স্পৃহা ও প্রয়াস চলছে অবিরাম। একটি স্পষ্ট, ব্যতিক্রমধর্মী, অভিনব ও কঠিনতর প্রতিশ্রুতি নিয়ে তার যে যাত্রা সে অভিযাত্রায় বিরাম বিরতির প্রশ্নই উঠতে পারেনা। এদেশের সকল স্তরের সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশার অবসান এবং সীমাহীন সংকট উত্তরণের জন্য- সর্বোপরি এদেশবাসীর সামগ্রিক মুক্তির জন্যে দৈনিক সংগ্রামের যে সংগ্রাম ও সাধনা- তার তো পরিসমাপ্তি নেই।

দৈনিক সংগ্রাম এদেশকে প্রকৃত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত না করা পর্যন্ত কোনো বিশ্রাম বিরতি কল্পনাই করেনা। 

আমাদের পূর্বসূরী “মহাজনেরা” এদেশকে সোনার বাংলা বানানোর স্বপ্ন দেখেই গেছেন- চর্মচক্ষে দেখে যেতে পারেননি। দৈনিক সংগ্রাম সে স্বপ্নে শুধু বিভোরই নয়- বাস্তবে বাস্তবায়িত করবার কর্মসূচী তার রয়েছে।

সে পরম পবিত্র লক্ষ্যে সে তার পথ পরিক্রমা অব্যাহত রেখেছে- সূচনা হতে আজ অবধি।

দৈনিক সংগ্রাম (Commited) প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দেশ ও জাতির প্রকৃত কল্যাণ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। এ প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার হতে চুল পরিমাণ নড়চড় -তার হতেই পারেনা। এইটে একদম অসম্ভব, অস্বাভাবিক ও কল্পনাতীত।

সংবাদপত্রের জগতে কতোধরন ও প্রকারের পত্রিকা রয়েছে, তাদের কারো কারো তেমন আদর্শিক লক্ষ্য ও চেতনা না থাকলেও- বিশ্বের দুই “তন্ত্রমন্ত্র” পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের- লড়াইয়ে এরা এখন দিশেহারা ও লক্ষ্যচ্যুত। এদের মধ্যে পুঁজিবাদীদের পাল্লা ভারি বিধায়- সমাজতন্ত্রের আত্মহত্যার পরে- ওরা খাইখাবির শিকার হয়ে ঘৃণিত পুঁজিবাদীদের দিকেই ঝুঁকে গেছেন।

পূর্বেও এরা- অর্থাৎ সমাজতন্ত্রীদের বুদ্ধিজীবীগণ পুঁজিবাদীদের নুন- নিমক খেয়ে, বিদেশ থেকে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে- ডাকসাইটে বুদ্ধিজীবী সেজেও পুঁজিবাদীদের বিরুদ্ধেই গদা ঘুরিয়েছেন কিছুকাল। কিন্তু সমাজতন্ত্রের মরণে- নেই এরা কারো স্মরণে- এরা এখন অভিভাবক হারা- ছাগলের তৃতীয় ছানার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বর্তমানে ম্রিয়মান প্রায়।

অতঃপর গদা ঘুরানো বাদ দিয়ে পুঁজিবাদেরই প্রকান্ড পকেটে স্বস্তি খোঁজেন। সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার- সকল মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করানোর স্বপ্ন কোথায় যে হারিয়ে গেলো- কর্পুরের ন্যায়, কোন বিয়াবানে! কে দেবে তার সন্ধান। দৈনিক সংগ্রামের স্বপ্নতো একটাই- ঐশী আদর্শের বাস্তবায়নের সংগ্রামে পরিপূর্ণ আত্মনিয়োগ শুধু। অন্য কোন উদ্দেশ্য তার থাকতেই পারে না। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই তার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জগতের অন্য কোন পত্রিকার কী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তা দেখার সুযোগ তেমন নেই। মানব রচিত আদর্শের পতাকাবাহীরা কে কোথায় কি করলেন- তার দিকে দৃষ্টি দেয়ারো বেশি প্রয়োজন তার পড়ে না। 

কারণ- তাদের দায়িত্বতো শুধু একটা- গোটা মানবজাতিকে কল্যাণের দিকে আহ্বান এবং অকল্যাণের প্রতিরোধকরণের অবিশ্রান্ত প্রয়াস। এবিশ্বে সে মহান দায়িত্ব পালনের জন্য যে তাদের সৃষ্টি ও প্রেরণ- সে দায়িত্ব পালন ব্যতীত- তার সফলতা অন্য কোন পথ ও পন্থা তার সামনে তো উন্মুক্ত নেই। অতীতে যারা এ পথের পথিক ছিলেন তারাও এ কঠিন পথে করেছে গমন। সুতরাং কোনো ফাঁক ও ফাঁকির শরণাপন্ন হওয়া- কাটছাঁট দিয়ে সংক্ষিপ্ত রাস্তা বা পলিসি গ্রহণ- কোনো রূপ আপোস কাপোস দিয়ে জীবন জীবিকা চালানোর কোনো সুবিধা তার নেই। অবিরাম কলমী সংগ্রাম ও সাধনা পরিচালোনা তার প্রাত্যহিক কর্ম, সত্যের জন্য, শাশ্বত সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা যে তার জীবন সংগ্রামেরই মুখ্য ও মূল বিষয়। টু পাইস অর্জনের ধান্ধাতো তার থাকতেই পারেনা। ধান্ধাতো তার একটাই জগতের একমাত্র শাশ্বত সত্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার বিরতিহীন সংগ্রাম ও সাধনা অব্যাহত গতিতে চালিয়ে যাওয়া। কে কি করলেন, কে কি মন্তব্য ছুঁড়ে দিলেন, সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার সময় ও সুযোগ কোথায়?

সময় তো ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুততম ও প্রচন্ডতম গতিতে। উন্নত বিশ্বের লোকজনেরা কেউ বসে নেই। সবাই তাদের নিজ নিজ দেশ ও জাতির আখের গুছাচ্ছেন। আমাদেরও সোনার বাংলা গড়ার মহান মিশনের গতি তাই আরো বৃদ্ধি করা সময়ের অনিবার্য দাবি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ