মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

তোর মেয়েকে পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দিলাম পুলিশ নিয়ে আয়

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীর শরীরের নিম্নাঙ্গ পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে পাষণ্ড স্বামী। গত শুক্রবার রাতে  রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের সন্দ্বীপ পাড়া এলাকায় ঘটনা ঘটে। এরপর শাশুড়িকে ফোন করে বলেছে তোর মেয়েকে পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দিলাম পুলিশ নিয়ে আয়।
অগ্নিদগ্ধ ইয়াছমিন আক্তার (৩০)কে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নং বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শনিবার বিকেলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হয়েছে।
তার স্বামী মো. রাফেলকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাফেল  রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সন্দ্বীপ পাড়ার মৃত মো. শফিকুল ইসলামের ছেলে। তাদের সংসারে ৪ বছরের ছেলে রয়েছে। ইয়াছমিন আকতার উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের নবগ্রাম এলাকার হারুনুর রশিদের মেয়ে। ৮ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, ইয়াছমিন আক্তারের শরীরে ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশংঙ্কাজনক। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছি।
চিকিৎসাধীন ইয়াছমিন আকতার বলেন, তাদের মধ্যে কয়েকদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমি ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যেতে চাই। কিন্তু স্বামীর বাধায় যেতে পারিনি। রাতে আমার বাচ্চা ঘুমালে সে এসে আমাকে মারধর করে। এসময় আমার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সে। আমার মাকে ফোন দিয়ে বলে ‘তোর মেয়েকে জ্বালিয়ে দিলাম। পারলে পুলিশ নিয়ে আয়। আমার কি করতে পারস দেখি। ’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, রাফেল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে যৌতুক নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে রাফেল ইয়াসমিনের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে ঝলসে যাওয়া শরীর থেকে সে টেনে চামড়াও তুলে ফেলেছে। আবার আর্তচিৎকার শোনাতে ইয়াসমিনের পিতার মুঠোফোনে ফোন করেছে।
তিনি ফেসবুকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, ‘তোর বিষ কমাচ্ছি বলেই ইয়াসমিনের যোনি ও পায়ুপথসহ পুরো নিম্নাঙ্গে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন স্বামী। শরীরভর্তি দাউদাউ করে জ্বলন্ত লেলিহান শিখা। ৭ বছরের সংসার এবং ৪ বছর বয়সী সন্তানের দোহাই দিয়ে অসহায় ইয়াসমিন স্বামীর কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও স্বামী রাফেলের তাতে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। উপায়ান্তুর না দেখে নিজেকে রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে ঘর থেকে বের হবার চেষ্টা করেন ইয়াসমিন। কিন্তু হায়, এখানেও স্বামীর বাঁধা। পুড়ে মরতে হবে, বের হওয়া চলবে না।’
আনোয়ার হোসেন শামীম লিখেছেন, ‘পুড়তে পুড়তে এক পর্যায়ে শরীরে লেপ্টে থাকা পেট্রোল ফুরিয়ে গেলে ইয়াসমিনের শরীরের আগুনও নিভে যায়। কিন্তু নেভেনি রাফেলের নিষ্ঠুরতার আগুন। এবার নতুন খেলায় মাতে সে। স্ত্রীর পোড়া শরীর থেকে কাবাব করা মুরগির মতো করে চামড়া তুলে নিতে থাকেন দুই হাতের ঘষায়। একেক ঘর্ষণের সাথে খসে পড়তে থাকে পুড়ে যাওয়া চামড়া, সাথে ইয়াসমিনের মরণ আর্তচিৎকার। কিন্তু তাতেও রাফেলের নিষ্ঠুরতায় কোন হেরফের ঘটে না। উল্টো মেয়ের যন্ত্রণার খানিকটা ভাগ বাবা-মাকেও দিতে ফোন করেন ইয়াসমিনের বাসায়। এত গভীর রাতে জামাইর ফোন পেয়ে উৎকন্ঠিত শাশুড়ি ফোন তুলতেই তাকে সোজা জানিয়ে দেন, ‘তোর মেয়েকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি। এসে নিয়ে যা।’ রাফেলের পাশবিকতা-হিংস্রতার এখানেই শেষ নয়। পৈশাচিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করে আর্তচিৎকার করতে থাকা স্ত্রীকে রেখেই পাশের কক্ষে গিয়ে দিব্যি ঘুমিয়েও পড়েন তিনি।’
সহকারী পুলিশ সুপার শামীম লিখেছেন, ‘ পোড়া শরীর আপনাকে যে যন্ত্রণা দিয়ে চলেছে, সেই যন্ত্রণার ভাগ হয়তো আমরা নিতে পারব না। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাকে পুড়িয়ে দেওয়া রাফেলকে যেভাবে আমরা পালিয়ে যাওয়ার আগেই গ্রেফতার করেছি, একইভাবে এই মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতে যা যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছুই করা হবে। এখন দোয়া আর অপেক্ষা শুধু আপনি সুস্থ হয়ে ফিরুন।’
এ ঘটনার পর রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন ইয়াছমিন আক্তারের বাবা হারুনুর রশিদ। রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মাহাবুব মিল্কি বলেন, অগ্নিদগ্ধ  ইয়াছমিন আকতারের স্বামী রাফেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে দোষ স্বীকার করেছে। তাকে আজ আদালতে চালান দেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ