২০২৫ সালের মধ্যে কর্মরত জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশকে পুনঃদক্ষ করতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার : প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাকার্যক্রম শেষ করার পর প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছেন বিশ্বব্যাংকের এমন তথ্য তুলে ধরে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে কর্মরত মোট জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশকে পুনঃদক্ষ করে তুলতে হবে।
গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘নতুন কর্মসংস্থান এবং দক্ষতা, প্রেক্ষিত ভবিষ্যৎ ব্যবসা-বাণিজ্য’ শীর্ষক অনলাইন কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) দুলাল কৃষ্ণ সাহা, বাংলাদেশে ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী, ইউনিডো’র আবাসিক প্রতিনিধি জাকি উজ জামান এবং বাংলাদেশস্থ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আবাসিক প্রতিনিধি তুমো পুটিয়ানেন যোগদান করেন।
ডিসিসিআই’র সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, জনসংখ্যার আধিক্য থাকলেও বাংলাদেশের শিল্পখাতে দক্ষ লোকবলের প্রচুর অভাব রয়েছে এবং আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রায় ১২.৩ শতাংশ বেকার। তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাকার্যক্রম শেষ করার পর প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের কর্মরত মোট জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশকে পুনঃদক্ষ করে তুলতে হবে। শামস মাহমুদ বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনের ফলে দক্ষতা ও বৈশ্বিক শ্রমবাজারের গতি-প্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে প্রথাগত দক্ষতার পাশাপাশি নতুন পরিস্থিতি ও বাজার ব্যবস্থাপনা চাহিদার ভিত্তিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বাংলাদেশকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। শিল্প খাতের প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের শিক্ষা কারিকুলাম যুগোপযোগী করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে শিল্প ও শিক্ষা খাতের সমন্বয় আরও বাড়াতে হবে।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকবেলায় প্রথম থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সরকার স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার ফলে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থিতিশীলতার সাথে অগ্রসরমান হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের নীতি সহায়তা প্রদান বিষয়ে নতুন আঙ্গিকে ভাবতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক প্রযুক্তি বিপ্লবকে মেনে নিয়ে, এটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা না গেলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি টেকসই করা সম্ভব নয়। কর্মরত জনগোষ্ঠীর পূর্ণদক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রবাসী শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও জোর দিতে হবে। প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোর আধুনিকায়ন করতে হবে। এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ফ্রিল্যান্সারদের সহযোগিতার জন্য ব্যাংকিং কার্যক্রম আরও সহজ করতে হবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিবছর ২.২ মিলিয়ন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হয়, যা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। মাশরুর রিয়াজ জানান, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আঙ্কটাড-এর হিসাব মতে, ২০২০ বৈশ্বিক বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যাবে এবং বৈশ্বিক এসএমই উদ্যোক্তাদের প্রায় ৫০ শতাংশের অস্তিত্ব রক্ষা হুমকির মুখে পড়বে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের প্রতিনিয়ত উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।