ইয়া নবী সালাম আলাইকা ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা

মিয়া হোসেন : রাসূল (সাঃ) প্রদর্শিত জীবন ব্যবস্থা ইসলাম ভারসাম্যের জন্য অনন্য। রাসূল (সাঃ) এর জীবন ছিল অপূর্ব ভারসাম্যপূর্ণ। জীবনের সকল দিক দিয়েই তিনি ভারসাম্য রক্ষা করেছিলেন। যদি আমরা পরিবেশের দিকে দেখি। তাহলে দেখতে পাব রাসূল (সাঃ) পরিবেশের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) বলেন, যদি জানো যে আগামীকাল কেয়ামত নিশ্চিত, তবু আজ একটি গাছ লাগাও। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জীবজন্তুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাই রাসূল (সাঃ) নির্বিচারে জীবজন্তু হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা পৃথিবীর মাটিকে দয়া কর তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনিও তোমাদের দয়া করবেন। সামাজিক পরিবেশের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা সকলের জন্য অনুকরণীয়। রাসূল (সাঃ) দৃঢ় কন্ঠে তিনবার আল্লাহর শপথ করে বলেছেন, যারা অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশীর অধিকারের ওপর এতো বেশী জোর দিতেন যে, সাহাবী (রাঃ) হয়তো প্রতিবেশীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারও মনোনীত করে দিবেন।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আজ পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে উদ্বিগ্ন। রাসূলের (সাঃ) আদর্শ অনুযায়ী বৃক্ষরোপণ করতে পারলে এবং তারঁ আদর্শ মেনে চলতে পারলে পৃথিবীতে অশান্তি বিরাজ করতো না। সুতরাং আজকের অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে মুহাম্মদ (সাঃ) এর আনীত ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ইসলামের বিকল্প নেই।
লাজুকতা অন্যতম উৎকৃষ্ট গুণ, এ গুণেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুণানি¡ত ছিলেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা নিজেই সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের এ আচরণ নবীকে পীড়া দেয়, তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন, কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না। (সূরা আহযাব ৫৩)
বিশিষ্ট সাহাবি আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দায় অবস্থানকারী কুমারী মেয়ের চেয়েও অধিক লাজুক ছিলেন। তিনি যখন কোন কাজ অপছন্দ করতেন তাঁর চেহারায় আমরা তা চিনতে পারতাম। (বুখারী-৫৬৩৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহচরদের সাথে উত্তম ও সুন্দরভাবে মেলামেশা করতেন। আলী রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বাপেক্ষা প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী, সর্বাপেক্ষা সত্যভাষী, সর্বাপেক্ষা সম্মান জনক লেনদেনকারী।( তিরমিযী-৩৫৭১)
ইবনে আবু হারাহ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সদা প্রফুল্লচিত্ত, কোমল চরিত্রের অধিকারী, সরল হৃদয়বান। রূঢ় স্বভাবের ছিলেন না, নির্দয় প্রকৃতিরও ছিলেন না, নির্লজ্জ, গিবতকারী ও বিদ্রুপকারী ছিলেন না। অতিরিক্ত গুণকীর্তনকারীও ছিলেন না, মনে চায় না- এমন বস্তু থেকে বিমুখ থাকতেন, কিন্তু কাউকে তা থেকে নিরাশ করতেন না। কেউ ডাকলে সাড়া দিতেন, কেউ উপহার দিলে গ্রহণ করতেন, যদিও তা ছাগলের খুর হত এবং তার উত্তম প্রতিদান দিতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন কোন সাহাবি বা পরিবারের কোন সদস্যকে ডাকতেন তিনি ‘লাব্বাইক’ বলে সাড়া দিতেন। তিনি সাহাবাদের সাথে রসিকতা করতেন। তাদের সন্তানদের সাথে খেলা করতেন এবং নিজের কোলে বসাতেন। মদিনার দূর প্রান্তে বসবাসকারী কেউ অসুস্থ হলে তারও খোঁজখবর নিতেন। আবেদনকারীর আবেদন গ্রহণ করতেন। সাহাবাদেরকে উপনামে ডাকতেন। তিনি তাদের সম্মান করে তাদের প্রিয় নাম দ্বারা ডাকতেন। সীমা-লংঘন না করলে কাউকে কথা বলা থেকে বারণ করতেন না।
বিনয় উঁচু মাপের চারিত্রিক গুণ। এ-গুণের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবোর্চ্চ উদাহরণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন। নিজ হাতে ছাগলের দুধ দোহন করতেন। নিজের জুতা নিজে সেলাই করতেন। নিজের সেবা নিজে করতেন, নিজের ঘর নিজে পরিস্কার করতেন। নিজের উট নিজে বাঁধতেন। নিজের উটকে নিজে ঘাস ভক্ষণ করাতেন। গোলামের সাথে খেতেন, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজে বহন করে বাজারে নিতেন। একদা এক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসল, কিন্তু সে তাঁর ভয়ে শিহরিত হলো, তিনি তাকে বললেন তুমি নিজকে হালকা (স¡াভাবিক) করে নাও, কেননা আমি রাজা বাদশা নই। নিশ্চয় আমি, কোরাইশের এমন এক মহিলার সন্তান, যে শুকনো গোশত খায়। (ইবনে মাজাহ ৩৩০)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যধিক প্রশংসা থেকে বারণ করে বলেছেন, তোমরা আমার অত্যধিক প্রশংসা করো না, যে-রকম খ্রিস্টানরা মরিয়ম তনয়ের ক্ষেত্রে করেছে। নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা। অতএব তোমরা (আমাকে) বল- আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। (বুখারী-৩১৮৯)।