মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান চুড়ান্ত অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার : ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করতে খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল  রোববার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধিত) আইন, ২০০০’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরদিন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ জারি করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যে সরকার এ পদক্ষেপ নেয়। সংসদ অধিবেশন না থাকায় তখন আইন সংশোধনের পর তা অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়।’
আগামী ৮ নভেম্বর থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশন শুরু হচ্ছে জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, এজন্য অধ্যাদেশটিকে আইনে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হল।
আজকে আইনের খসড়া হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। লেজিসলেটিভ বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংসদ অধিবেশন না থাকা অবস্থায় যদি কোনো অর্ডিন্যান্স হয়, তাহলে পরবর্তী সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনই সেটি উপস্থাপন করতে হয়। অধ্যাদেশ হিসেবে যেটা আনা হয়েছিল সেটাই আজকেই আইনের খসড়া হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।'
২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) উপধারায় বলা হয়, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
সংশোধিত আইনের খসড়ায় ৯(১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
আইনের ৯(৪)(ক) উপধারায় ছিল- ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।
এই উপধারা সংশোধন করে খসড়ায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ এর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো যোগ করা হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ধর্ষণ ছাড়া সাধারণ জখমের ক্ষেত্রে অপরাধ আপসযোগ্য হবে। এছাড়া আগের আইনে ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের রেফারেন্স ছিল। এখন সেখানে হবে ‘শিশু আইন, ২০১৩’।
২০০০ সালের আইনের ৩২ ধারায় বলা ছিল এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের শিকার ব্যক্তির সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া মেডিকেল পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে কিংবা সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে স্বীকৃত কোন বেসরকারি হাসপাতালে সম্পন্ন করা যাইবে।
অধ্যাদেশে অপরাধের শিকার ব্যক্তির পাশাপাশি ‘অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির’ মেডিকেল পরীক্ষা করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়। এছাড়া ৩২ ধারার সঙ্গে ৩২ ক শিরোনামে নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয় অধ্যাদেশে।
সেখানে বলা হয়, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির ধারা ৩২ এর অধীন মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াও, উক্ত ব্যক্তির সম্মতি থাকুক বা না থাকুক, ২০১৪ সালের ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইনের বিধান অনুযায়ী তার ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে।
এদিকে রোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রচেষ্টা জারি আছে জানিয়ে, প্রথমদিকেই ভ্যাকসিন পাওয়ার আশার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ আশাবাদ জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্যরা সচিবালয় থেকে ভার্চুয়াল এই সভায় যোগ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কোভিড ১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভ্যাকসিন সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটা পর্যালোচনা করা হয়েছে। যাতে দ্রুত আমরা ভ্যাকসিন পেতে পারি সে বিষয়ে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টা জারি আছে। আশা করি প্রথমদিকেই ভ্যাকসিন পাবো।
ভ্যাকসিনের বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রচেষ্টা বিরাজমান আছে। আমরা চীনকে পারমিশন দিয়ে রেখেছি। তাদের ফান্ডিংয়ে শর্টেজ আছে, সেজন্য সেটা নিয়ে আলোচনা করছি আমরা। তারা হয়তো অ্যাপ্রোচ করবে যে বাংলাদেশ থেকে কিছু ফান্ডিং করা যায় কি না। তবে এটি বাদ যায়নি।
সম্প্রতিকালে অক্সফোর্ডের ২ কোটি ভ্যাকসিন এইমাসে আসছে বলে স্বাস্থ্যসচিবের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাই তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি ডেট বলতে পারছি না। তবে খুব ভালোভাবেই সেটা আগাচ্ছে।’
শীতে সেকেন্ড ওয়েভের বিষয়ে প্রস্তুতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন কোনো সমস্যা হবে না। একটি ট্রিটমেন্ট প্রটোকল আছে। আমাদের কিন্তু প্যানিকটা চলে গেছে। শুরুতে বিষয়টা বোঝা যাচ্ছিল না। এখন ট্রিটমেন্ট করতে করতে অনেক অভ্যস্ত হয়ে গেছে চিকিৎসকরা। হাসপাতালগুলোর জন্য নির্দেশনা আছে কোভিড এবং নন কোভিড আলাদা করে করার জন্য। সব হাসপাতালেই এখন আলাদা ইউনিট হয়ে গেছে, কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন-২০২০-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কয়েকদিন আগে এর একটি অর্ডিন্যান্স করা হয়েছে। যেহেতু তখন পার্লামেন্ট ছিলে না, সেজন্য এটা তখন অর্ডিন্যান্স হিসাবে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেটিই আইনের ড্রাফট হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে চূড়ান্ত ভেটিং করে দেওয়া হয়েছে। সংসদ না থাকা অবস্থায় কোনো অর্ডিন্যান্স হলে সংসদ শুরু হলে সংসদে সেটি উপস্থাপন করতে হয়। সেই ড্রাফটাই আজ নিয়ে আসা হয়েছে। অর্ডিন্যান্সকে আইনে রূপান্তর করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর এই অর্ডিন্যান্স চলাকালে যে কাজগুলো হয়েছে সেগুলো হেফাজত করা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ