মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহে আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলন আজ

স্টাফ রিপোর্টার : মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য এবং দেশটির বাইরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে জরুরি মানবিক সহায়তার জন্য আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ও আশ্রয়দানকারী দেশগুলোর জন্য সহায়তা উৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা যৌথভাবে দাতা সংস্থার অংশগ্রহণে একটি সম্মেলনের আয়োজন করবে। ওয়াশিংটন সময় সকাল ৮টা, জেনেভা সময় বেলা ২টা এবং ব্যাংকক সময় সন্ধ্যা ৭টায় ওই ভার্চুয়াল সম্মেলন শুরু হচ্ছে। যা চলবে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে এটি আয়োজন করছে। রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে বড় ভিকটিম বাংলাদেশ এবং এ সংকটের উৎপত্তি এবং সমাধান যেখানে নিহিত সেই মিয়ানমারও এতে অংশ নিচ্ছে। আয়োজকদের তরফে প্রচারিত একাধিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সম্মেলন আয়োজনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে আগস্টে মিয়ানমার থেকে সর্বশেষ বিতাড়ণের পর ব্যাপক সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয় নিয়েছে। কক্সবাজারে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ৮ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো আনুমানিক ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে জানিয়ে ইউএনএইচসিআর জানায়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অনেক বাস্তুহারা রোহিঙ্গা প্রান্তিক জীবনযাপন করছে-যারা মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি, নির্ভরযোগ্য খাদ্য সরবরাহ, অর্থবহ কাজ ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯’র ফলে তাদের জীবনযাত্রা আরো খারাপ হয়েছে। সেবা গ্রহণের সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যৌন ও জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যের মতো জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকিও বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। দুনিয়ার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওই জনগোষ্ঠীর জীবনের প্রয়োজন বিচেনায় অনুষ্ঠেয় দাতা সংস্থাদের ওই সম্মেলনে যে তহবিল পাওয়া যাবে তা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে, গোটা অঞ্চলে এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের জয়েন্ট রেসপন্সপ্ল্যানের আওতায় এই সংকট নিরসনে কর্মরত সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে প্রদান করা হবে।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা কার্যক্রমে অর্থায়নের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, যা এ বছর এখন পর্যন্ত চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। রোহিঙ্গা শরণার্থী, আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দাওয়ার লক্ষ্যে অতি জরুরি এ অর্থায়নের জন্য যৌথ আয়োজকরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাবে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এ মাসে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রে নিয়ে আসবে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে শুরু হওয়া এ সংকটের সর্ব সাম্প্রতিক পর্যায়ে তারা ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে একটি সম্মেলনে রোহিঙ্গা শরণার্থী, আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তার পরিমাণ আগের তিন বছরের বেশি সময় ধরে দেওয়া পরিমাণের চেয়ে বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের কাছে তাগিদ দেবে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক চাহিদা পূরণে এবছর জাতিসংঘ আরও এক বিলিয়ন ডলার সহায়তার আবেদন জানিয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত এ সহায়তার পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ফলে অর্থায়নে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, যা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনের লক্ষ্য হলো নিজভূমি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বা বাইরে অবস্থানরত নাজুক ও বাস্তুহারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি তহবিল গঠন। গঠিত তহবিলের আওতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলজুড়ে আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি সেবা কার্যক্রমেও সহায়তা দেওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্মেলনটির মাধ্যমে যৌথ আয়োজকদের জন্য এমন একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও অন্য বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর জন্য এ সংকটের টেকসই সমাধান হিসেবে তাদের নিজ দেশে বা পছন্দসই স্থানে স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্থায়ীভাবে ফিরে যাওয়ার আবশ্যকতার বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করা সম্ভব হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট স্টিফেন ই বিগান বলেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংকট মোকা্বলিায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ও অন্য বাস্তুহারা জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই সহায়তা প্রদান, সেই সঙ্গে আশ্রয়দানকারী জনসমাজের ক্ষতি পোষাতে বিনিয়োগ জোরদার করার আহ্বানে নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারেরর সঙ্গে অংশীদার হিসেবে থাকতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। বিশ্বের সবচেয়ে উদার দাতাদেশ হিসেবে আমরা আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অনুঘটক হিসেবে কাজ করি এবং এ সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার ও সেই সঙ্গে নতুন ও প্রতিশ্রুতিশীল দাতাদেশসহ অন্য সবাইকে তহবিল দেওয়ার আহ্বান জানাই।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডমিনিক রাব বলেছেন, ভয়াবহ বর্বরতার শিকার হয়ে এবং কল্পনাতীত খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। এ সুপরিকল্পিত সহিংসতার হোতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি এবং এ অপরাধের জন্য আমরা তাদের অব্যাহতভাবে দায়ী করে যাবো। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সংকট নিরসনে অন্যতম প্রধান দাতাদেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ২০১৭ সাল থেকে কাজ করে আসছে। তাদের দুর্দশার মাত্রা অনুধাবনপূর্বক সারা বিশ্বকে জাগ্রত হতে হবে এবং জীবন বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ