মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

আলু কিনতে দীর্ঘলাইনে মধ্যবিত্তের দীর্ঘশ্বাস

গতকাল বুধবার থেকে রাজধানীতে টিসিবি’র উদ্যোগে ২৫ টাকা দরে আলু বিক্রি শুরু হয় -সংগ্রাম

মুহাম্মদ নূরে আলম : রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টিসিবির ট্রাক সেল থেকে আলু ও পেঁয়াজ কিনতে আসা সেগুনবাগিচার বাসিন্দা ফরহাদ বলেন, বাজারে পেঁয়াজ কিনতে ১০০ টাকা লাগছে, আলুরও এবার হাফ সেঞ্চুরি করেছে। সাধারণ ভোক্তা হিসাবে আমাদের অবস্থা করুণ। আমরা নিরূপায়। বর্তমান বাজারদরে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর নাভিশ্বাস উঠার মতো অবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে টিসিবির ট্রাক থেকেই পেঁয়াজ আলু সংগ্রহ করছি। দাম কম, শুধুু দীর্ঘলাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। তাই প্রেসক্লাব, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি স্পটে টিসিবির ট্রাকের সামনে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের দীর্ঘলাইন দেখা গেছে। টিসিবির ট্রাকে বর্তমানে আলু ২৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা, চিনি ৫০ টাকা, মশুর ডাল ৫০ টাকা কেজিতে এবং সয়াবিন তেল ৮০ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে আলুর দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা শহরে ট্রাকে করে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এই দামে আলু পাওয়া যাচ্ছে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় টিসিবির ট্রাক সেল পয়েন্টে। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই আলু কিনতে টিসিবির ট্রাক দাঁড়ানোর স্থানগুলোতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের দীর্ঘলাইন দেখা গেছে। ঘণ্টাখানেক বা তারও বেশি সময় অপেক্ষা করে প্রায় অর্ধেক দামে ন্যায্যমূল্যের পণ্য কিনতে পেরে মধ্যবিত্ত অনেক মানুষের মুখে ফুটে উঠছে হাসির রেখা। তারা বলছেন, বাজারদরে নাভিশ্বাস উঠা এই সময়ে ট্রাকসেলের সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন রাজীব সরকার। সচিবালয়ের পাশেই কাজ ছিল তার। যাওয়ার সময় টিসিবির ট্রাক থেকে ন্যায্যমূল্যে কিছু নিত্যপণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, বাজারে এখন সব কিছুর দাম বেশি। সবজির দাম তো আকাশ ছোঁয়া। মাসের বেতনের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে বাজারে। তাই বাধ্য হয়েই কিছুটা কম দামে পেয়াজ আলু কিনতে লাইন দাঁড়িয়েছে। প্রায় ঘণ্টাখানেক লাইনে ছিলাম।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মতিঝিল, মুগদাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকেই আলু কিনতে আসা নিম্নবিত্ত মানুষের দীর্ঘলাইন। রোদের খরতাপ উপেক্ষা করে ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন অনেকে। সকাল ১১টায় টিসিবির ট্রাক নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ালে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। লাইনে গাদাগাদি করে দাঁড়ানোর কারণে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। এ ব্যাপারে টিসিবির একজন ডিলার রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল ১১টা থেকে আমরা খামারবাড়ির এখানে টিসিবির পণ্য বিক্রি করছি। ২৫ টাকা দরে প্রতি ক্রেতাকে দুই কেজি করে আলু দিচ্ছি। একজন ক্রেতা পেঁয়াজসহ টিসিবির অন্য সব পণ্যই কিনতে পারছেন। তিনি আরো বলেন, একটু পর পর আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ক্রেতাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। তারপরও ভিড় বেশি হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে কিছুটা হেরফের হচ্ছে। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২৫ টাকা দরে আলু বিক্রির তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নির্দেশে গতকাল বুধবার থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করবে টিসিবি। ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাক সেলের মাধ্যমে টিসিবি আলু বিক্রি শুরু করবে। জনপ্রতি দুই কেজি করে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা হবে। একইসঙ্গে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, মশুর ডাল নির্ধারিত সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করা হবে। গত মঙ্গলবার দুপুরে তৃণমূল পর্যায়ের আলু চাষি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা, হিমাগার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করে কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বৈঠক শেষে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ জানিয়েছিলেন, খুচরা পর্যায়ে আলুর প্রতি কেজি সর্বোচ্চ দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা ও হিমাগারে ২৭ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। এ দাম বুধবার থেকে কার্যকর হবে। তবে অনেকেই যেহেতু আগে থেকে বেশি দামে আলু কিনে রেখেছেন তাই কোথাও কোথাও দামের তারতম্য হতে পারে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এর আগে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আলুর দাম কেজিতে খুচরা পর্যায়ে ৩০ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা ও হিমাগারে ২৩ টাকা নির্ধারণ করেছিল।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের পাশে অবস্থিত টিসিবির ট্রাকের সামনে আলু কিনতে আসা মায়া নামের একজন বলেন, সেই সকাল ১০টা থেকে সিরিয়ালে আছি। অনেকে সিরিয়াল ভঙ্গ করেও ক্ষমতা দেখিয়ে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখনও ট্রাকের কাছেই পৌছাতে পারিনি। বাজারে সবকিছুর দাম এত, যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল। তাই সরকার কম দামে আলু বিক্রির ঘোষণা দেয়ায় এখানে এসেছি। আবার অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও আলু না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকেও শতাধিক মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
সুমন নামের আরেকজন বলেন, দীর্ঘ সময় লাইনে থেকেও কিছু কিনতে পারছি না। মানুষের তো বিবেক থাকা দরকার যে, এতগুলো মানুষ লাইনে আছে তাদের টপকে ক্ষমতা দেখিয়ে লাইন ভঙ্গ করে তারা পণ্য কিনছেন। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এদিকে ওই ট্রাকটির পরিচালক মো. ইকবাল বলেন, আমরা সবাইকে দেয়ার চেষ্টা করছি। দুই-একজন হয়তো লাইন ছাড়া নিয়েছে। তবে আমরা লাইনেই বেশি দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আজ গোডাউন থেকে ৩০০ কেজি আলু এনেছি। বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে প্রায় ২০০ কেজি আলু বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা প্রত্যেককে দুই কেজি করে আলু দিচ্ছি। এছাড়া চিনি ও ডাল ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর তেল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা লিটারে। উল্লেখ্য, বাজারে ৩৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। এই দামে আলু বিক্রি হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ে বাজার মনিটরিং করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আলু ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পূর্বের সবগুলো স্পটেই টিসিবির ট্রাক সেল চলমান রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা শহরের ৮০টি স্থানে টিসিবির ট্রাকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। নতুন করে কোনো স্পট বাড়ানো হয়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ