এসএমই খাতে ২০ শতাংশ প্রণোদনার অর্থ ছাড়
স্টাফ রিপোর্টার : করোনাকালীন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তারা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ পাচ্ছেন না। গত ছয় মাসে এসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে মাত্র ২০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ না করায় যে উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তা ব্যহত হচ্ছে।
গতকাল বুধবার জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) এবং একশন এইড বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পখাতে কোভিড-১৯-এর প্রভাব এবং জাতীয় এসএমই নীতি-২০১৯ বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তরা এসব কথা বলেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ অনুষ্ঠিত এ সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সালাহ্উদ্দিন মাহমুদ। জাতীয় ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গনি শোভনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম। সংলাপে শিল্প মন্ত্রণালয়, অ্যাকশন এইড এবং নাসিব-এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সালাউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো এসএমই খাত। দেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে এর অবদান বেড়ে দাঁড়াবে ৩৪ শতাংশ। কিন্তু সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ ছাড় না দেওয়ার কারণে এই খাত করোনা পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এতে করে যে উদ্দেশ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়েছির, সে উদ্দেশ্যে ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রণোদনা ঘোষতার ছয় মাস অতিবাহিত হতে চলেছে। এই ছয় মাসে ৫ হাজার কোটি টাকা মতো অর্থ ছাড় দেয়া হয়েছে। এটি মোট প্রণোদনা প্যাকেজের ২০ শতাংশের সামান্য বেশি। তিনি বলেন, বৃহৎ শিল্পের জন্য সরকারের ঘোষিত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ৮০ শতাংশের বেশি অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
জাতীয় ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গনি শোভন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো প্রণোদনার অর্থ ছাড় দিতে নানা ধরনের গড়িমসি করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার নির্দেশ দিলেও ব্যাংকের শাখাগুলো তাতে সাড়া দিচ্ছে না। ব্যাংকের অসহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে গত ছয় মাসে থেকে ২০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি মো. শফিকুর ইসলাম বলেন, করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই খাত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। এই তহবিলের অর্ধেক অর্থের যোগান দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ঋণের সুবিধা ছিল এর সুদ হবে বার্ষিক ৯ শতাংশ। এর মধ্যে ৪ শতাংশ দিচ্ছে ঋণগ্রহীতা আর বাকি পাঁচ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার। এসএমই খাতের জন্য সরকার এত বড় একটি প্যাকেজ ঘোষণা করলেও যথাসময়ে প্রণোদনার অর্থ ছাড় না হওয়ার কারণে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।