মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

খুলনায় মানবাধিকার সংগঠনের নামে চাঁদা আদায়ের ফাঁদ!

খুলনা অফিস: খুলনায় মানবাধিকার সংগঠনের নামে চাঁদা আদায়ের ফাঁদ! এডভোকেট শেখ আলিউল ওরফে অলিউল ইসলাম (৫০) নিজেকে মানবাধিকার সংগঠনের একজন বড় নেতা এমনকি ‘মানবতাবাদী’ হিসেবেও পরিচয় দেন। দীর্ঘদিন ধরেই তার নেতৃত্বে মানবাধিকার সংগঠনের নামে বিভিন্ন লোককে হয়রানি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, সম্প্রতি চার শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিধিবহির্ভূত নোটিশ করে ডেকে আনা এবং পরবর্তীতে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে অর্ধ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় দুদকের সহায়তায় পুলিশের হাতে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। এরপরই মানবাধিকার সংগঠনের মুখোশের আড়ালে তার চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।

পুলিশ, দুদক ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, শেখ অলিউল ইসলাম গত ২৮ সেপ্টেম্বর নগরীর বয়রাস্থ প্রাথমিক শিক্ষা খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাসরিন সুলতানার দপ্তরে গিয়ে তাকে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের প্যাডে একটি নোটিশ প্রদান করেন। তিনি নিজেকে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন’ নামক প্রতিষ্ঠানের খুলনা বিভাগীয় প্রধান হিসেবে পরিচয় দিয়ে নোটিশটি উপ-পরিচালককে প্রদান করে বিধি বহির্ভূতভাবে তিনি তার আওতাধীন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম, মো. সোহাগ হোসেন, মো. সোহাগ আলম ও এটিএম শাহ আলমকে দুর্নীতির অভিযোগে তার খুলনাস্থ বয়রা পালপাড়া রোডের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানার সন্দেহ হওয়ায় তিনি খুলনার দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ- পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবহিত করেন। এ বিষয়ে দুদকের পরামর্শে ১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে তিনি খালিশপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই দিনই তিনি পুলিশ নিয়ে শেখ অলিউল ইসলামের বয়রা পালপাড়াস্থ কার্যালয়ে গিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের তার অফিসে ডাকার কারণ জানতে চান। এ সময় অলিউল তাকে বলেন, ‘তিনি এ ধরণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত করেন, বাংলাদেশ সরকার তাকে এ ক্ষমতা দিয়েছে’। এমনকি তিনি শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানাকে এ জাতীয় বিভিন্ন ধরনের তদন্তের ফাইল দেখান এবং তার অধীনস্থ শ্যামনগর উপজেলার চারজন সহকারি শিক্ষা অফিসারের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হলে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন। তখনই তিনি বুঝতে পারেন অলিউল একজন প্রতারক।

এ সময় শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা তাকে উদ্দেশ্য করে ‘তিনি একজন বেসরকারি ব্যক্তি হয়েও সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারণাপূর্বক বিভিন্ন মানুষকে ডেকে হয়রানি করছেন কেন’- এ প্রশ্ন করলে অলিউল কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে দুদকের সহায়তায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

এ ঘটনায় প্রাথমিক শিক্ষা খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাসরিন সুলতানা বাদী হয়ে ওইদিনই অলিউল ইসলামকে আসামি করে খালিশপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩ ধারা ১৭০/ ৩৮৫ পেনাল কোড। 

এ মামলায় অলিউল ইসলাম বর্তমানে খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন।

মামলার বাদী শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে শিক্ষা বিভাগে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয়সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ রয়েছেন। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব তাদের। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনের পরিচয়ে নোটিশ করে ডাকার এখতিয়ার তার নেই। এছাড়া চাঁদা তো দাবি করতে পারেন না তিনি। এভাবেই শেখ অলিউল ইসলাম প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি তিনি ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন’র দায়িত্ব পালন করলেও নিজেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’র কর্মকর্তা হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে ভয়-ভীতি ও ক্ষতির হুমকি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে থাকেন। একজন সচেতন নাগরিক এবং ভুক্তভোগী হিসেবে তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু প্রতিকার দাবি করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা থানার এস আই মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, শেখ আলিউল ওরফে অলিউল ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তনাধীন রয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখতে আদালতে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, অলিউল ইসলামের বিরুদ্ধে এছাড়াও চাঁদাবাজি ও হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তারা শুনতে পেয়েছেন। অনেক ভূক্তভোগীই থানায় এসে অভিযোগ করছেন। তবে, এসব বিষয়ে কেউ সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে, এডভোকেট শেখ অলিউল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে খুলনা অঞ্চলে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নামক সংগঠনের পরিচয়ে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তার সংগঠনের কোন সদস্য বা সহকর্মীরা তার মুক্তি দাবি করে প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। ফলে তার কার্যক্রম নিয়েও নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’র নামের কাছাকাছি ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন’ নাম হাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ