মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও অদম্য তিন বোন

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা: জীবন মানেই সংগ্রাম। আর সেই সংগ্রামী জীবনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেধাবী তিন বোন মোরশেদা আক্তার, তাসমিন আকতার ও আসমাউল হুসনা। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতির সোলতান মৌলভী পাড়া এলাকায়। প্রায় ১০ বছর আগে নিখোঁজ হন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাবা নুরুল আমিন। মা ফরিদা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। নিখোঁজ বাবা ও তিন বোনসহ তারা একই পরিবারের ৪ জন সদস্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এমন প্রতিকূল অবস্থায়ও তিন বোন পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মোরশেদা চট্টগ্রামের মুরাদপুর হামজারবাগ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৩.৮৯ ও চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ২.৯৮ লাভ করে একই কলেজে বি.এ ১ম বর্ষে সিজিপিএ ৩.৪৬ পয়েন্ট পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। তাসমিন আক্তার ও আসমাউল হুসনা ব্রেইল সিস্টেমে  মুরাদপুর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে গ্রামে ফিরে আসেন। ২০২০ সালে চুনতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উভয়ই জিপিএ ৩.৯৪ পয়েন্ট করে লাভ করে। তারা চলতি শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম হাজেরা তজু ডিগ্রী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন।

মা ফরিদা বেগম জানান, আমি নিজেও অসুস্থ। গলায় টিউমার হয়েছে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। ঘরের চালের টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই ঘরের ভিতর পানি গড়িয়ে পড়ে। পলিথিন দিয়ে কোন মতে থাকছি। এলাকার লোকজন ফিতরা, যাকাত দেয় এবং কাজ পেলে এঘর ওঘর টুকটাক কাজ করে যা পাই তা দিয়েই সংসার চলছে।

বড় বোন মোরশেদা জানান, তাদের বাবা কোরআনের হাফেজ ছিলেন। তিনি মাঝেমধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যেতেন। ২০১০ সালের ২৮ শে মার্চ তারিখে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর থেকে আর বাবার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি; বেঁচে আছেন কিনা তাও জানি না। আমরা তিন বোন চট্টগ্রাম শহরে থেকে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। পড়াশুনা চালিয়ে যেতে সমাজের বিত্তবানদের নিকট সহযোগিতা চান মোরশেদা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৩ বোন প্রতিকুল অবস্থায়ও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনুকরণীয়। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবীব জিতু জানান, মেধাবী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৩ বোনের কথা এখন জানলাম। তাদের পড়াশুনা চালিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ