টানা চার কার্যদিবস পতনের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার
স্টাফ রিপোর্টার : টানা চার কার্যদিবস পতনের পর দুই বাজারে প্রধান সূচক বাড়লো। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান মূল্য সূচক কিছুটা বেড়েছে। তবে কমেছে অন্য সূচক। অন্যদিকে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকলো। তবে ডিএসই ও সিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। সেই সঙ্গে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দামও বেড়েছে। এদিকে প্রথম দিনের লেনদেনে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
গতকাল বুধবার বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হতেই একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হতে থাকে। ফলে এক পর্যায়ে সবকটি সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অবশ্য শেষ ১০ মিনিটের লেনদেনে কিছু প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় প্রধান সূচক ঋণাত্মক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। তবে অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৮ পয়েন্টে নেমেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক দশমিক ৯১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১২৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সূচকের এ মিশ্র প্রবণতার দিনে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৭৪ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৭টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৫টির দাম। বাজারে লেনদেন হয়েছে ৮৮১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭২৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৫১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ডেল্টা বেক্সিমকো ফার্মা। কোম্পানিটির ২৮ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিংয়ের ২৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২২ কোটি ৭৩ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রূপালী ইন্স্যুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ব্র্যাক ব্যাংক, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১১ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ২২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৬টির দাম বেড়েছে। কমেছে ১১২টির এবং ৪৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে প্রথম দিনের লেনদেনে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আইপিও ছাড়ার চূড়ান্ত পেয়ে প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটির শেয়ার গতকাল বুধবারই প্রথম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়। ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আইপিওতে ২৫২ টাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করেছিল।
বুধবার কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৮৭ টাকা। অর্থাৎ প্রথম লেনদেনে ২৫২ টাকার শেয়ারটি ৫০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করতে পেরেছেন। তবে খুব বেশি শেয়ার বিক্রি হয়নি। ২২ বারে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের মাত্র ৩৪৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, টাকার অংকে যার দাম প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। এখন তালিকাভুক্তির পর প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের লেনদেনে নতুন কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে (হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক) প্রতি শেয়ারে আইপিও পরবর্তী মুনাফা দেখিয়েছে ৫ টাকা ১২ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে প্রতি শেয়ারে তাদের মুনাফা হয়েছিল ১১ টাকা ১৪ পয়সা।
তৃতীয় প্রান্তিক শেষে নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির প্রতি শেয়ারে আইপিওপরবর্তী মুনাফা হয়েছে ২৫ টাকা ২৯ পয়সা, যা আগে ২৪ টাকা ২২ পয়সা ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ কোম্পানি মোট মুনাফা করেছে ১ হাজার ৩৭৬ কোটি ১১ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজারে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি শেয়ার আছে। এর মধ্যে ৯৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে দশমিক ৪৬ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার আছে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; রিজার্ভের পরিমাণ ৬ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।কোম্পানিটির বাজার মূলধন ৭ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারে ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা তুলেছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বর্তমানে এ শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ‘এন’ ক্যাটাগরিতে।