ত্যাগ চাই ক্রন্দন চাহি না

মিয়া হোসেন : কালের পথপরিক্রমায় হিজরী ১৪৪২ সনের আগমনি প্রতীক পবিত্র মহররমের চাঁদ ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলকে উদ্ভাসিত করে তুলেছে। দিগন্তের দিক চক্রবাল জুড়ে নব আলোর রেখায় একটি ইঙ্গিত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ইসলামী শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ অত্যাসন্ন। বেঈমানী নাফরমানী ও খোদাদ্রোহী শক্তির বলয় যতই বিস্তৃত ও শক্তিশালী হোক না কেন, তার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং যাবতীয় অনাচার ও অবিচারের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। হিজরী নব বর্ষের এই আবাহনী ইঙ্গিত বিশ্ব মুসলিমের মনে যেমন আশার সঞ্চার করেছে তেমনি তাগুতি ও শয়তানী শক্তির ভিত্তিমূলে ধরেছে কাঁপন। শয়তান ও তার পদলেহী অনুচররা মুসলিম মিল্লাতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলমানদের জাতীয় সম্পদকে কুক্ষিগত করার জন্য ষড়যন্ত্রের জাল সবর্ত্র বিস্তার করা হচ্ছে। তাই বলে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন মুসলিম মিল্লাত একবারে বেখবর নয়। কেননা তাদের সামনে রয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দিক নির্দেশণামূলক বাণী। আর মহররম মাস স্মরণ করিয়ে দেয় কারবালার ময়দানে ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের কথা। ১০ মহররমের ঘটনা মুসলমানদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের কথা শিক্ষা দেয়। হিজরী ৬১ সালের ১০ মহররম ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনী নির্দয়ভাবে ইমাম হুসাইন (রাঃ) ও তার শিশুপুত্রসহ ৭২ জন সাথীকে শহীদ করে। হযরত মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ ইসলামের ইতিহাসে রচনা করেছে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের। এর বিপরীতে ইমাম হুসাইন (রাঃ) সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করে ইসলামের ইতিহাসে গৌরবজনক অধ্যায়ের রচনা করে অমর হয়ে আছেন। বিশ্ব মুসলিমের জন্য রেখে গেছেন আত্মত্যাগের অনুপম শিক্ষা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতকে কেন্দ্র করে ‘হিজরী’ সাল গণনা শুরু হয়েছে। আরবী ভাষায় ‘হিজরুন’ অর্থ ত্যাগ করা। হিজরুন মূলধাতু থেকে হিজরত শব্দটি নির্গত। হিজরত একটি ইসলামী পরিভাষা। ঈমানের হেফাজত এবং দ্বীনের প্রচার-প্রসারের মহান লক্ষ্যে দেশত্যাগ করাকে হিজরত বলে। হযরত ওমর রাযি. তখন মুসলিম জাহানের খলিফা। তাঁর নিকট একটি রাষ্ট্রীয় চিঠি এল; যাতে তারিখ উল্লেখ আছে কিন্তু সাল উল্লেখ নেই। চিন্তা করলেন, মুসলমানদের একটি নিজস্ব ও স্বতন্ত্র ক্যালেন্ডার হওয়া উচিত। পরামর্শ সভা আহবান করলেন। হযরত আলী রাযি. এর মতের প্রেক্ষিতে ‘ঐতিহাসিক হিজরতের ঘটনার সাক্ষীস্বরূপ’ হিজরত থেকে ক্যালেন্ডারের হিসাব শুরু হল। আরব সমাজে পূর্ব থেকে প্রচলিত ১ম মাস মুহাররম ও ১২তম মাস জিলহজ্ব এর গণনা চলমান থাকে। সুতরাং ১৪৪২ হিজরী’ এর অর্থ হলো, আজ থেকে ১৪৪২ পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করেছেন।